বাংলানিউজ ঢাকা : জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন এগিয়ে আসছে। এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বাজেট প্রণয়নের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। সম্প্রতি তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, আসন্ন জাতীয় বাজেটে পোল্ট্রি খাতের জন্য একটি প্যাকেজ প্রণোদনা আসছে। যার মধ্য দিয়ে বিপর্যস্ত এই শিল্প অনেকটা উপকৃত হতে পারবে। চ্যানেল আইয়ের ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ আয়োজিত ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী । এছাড়াও ডিজেল ভর্তুকি সরাসরি কৃষকের হাতে পৌঁছানোর জন্য কার্ড চালু করার কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। কৃষি উন্নয়ন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের সঞ্চালনায় সোমবার (৯ এপ্রিল) রাতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার কোদালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রায় চার হাজার কৃষকের উপস্থিতিতে কৃষিখাত নিয়ে ওই প্রাক বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। চ্যানেল আইয়ের ‘হৃদয়ে মাটি ও মানুষ’ আয়োজিত ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’ শীর্ষক এ আলোচনায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য হায়াতুর রহমান বেলাল, জেলা প্রশাসক লোকমান হোসেন মিয়া, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য আমিনুল করীম, অর্থমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রণজিৎ কুমারসহ জেলার কৃষি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ প্রাক বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের উপস্থিতিতে ময়মনসিংহ ও আশেপাশের জেলা থেকে আসা কৃষকরা দৃঢ়কণ্ঠে তুলে ধরেন তাদের প্রত্যাশা ও চাহিদার কথা। সেই সঙ্গে কৃষিক্ষেত্রের বর্তমান সমস্যা সংকটগুলোও তুলে ধরেন তারা। ধানের উৎপাদন খরচ ও বাজারমূল্যের ব্যবধানের কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, উপকরণের দাম যে হারে বাড়ছে, সেই হিসেবে ধানের দাম বাড়ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে ধান উৎপাদন থেকে কৃষক সরে আসতে বাধ্য হবে। তারা অভিযোগ করে বলেন, সরকার সেচে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়ার কথা বললেও রাতে কৃষকরা বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। বিদ্যুতের আসা যাওয়ার কারণে অধিকাংশ এলাকায় সেচ পাম্পের মোটর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যা কৃষকের জন্য মড়ার ওপর খাড়ার ঘা হিসেবে আসছে। ময়মনসিংহের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন কোম্পানির হাইব্রিড বীজ ব্যবহার করে প্রতাড়িত হয়েছেন অনেক কৃষক। এর মধ্যে সিনজেনটার সুরমা নামক হাইব্রিড বীজের কারণে বোরো মৌসুমে ফলন বিপর্যয়ের তথ্য তুলে ধরেন অনেক কৃষক। তারা বলেন, ওই বীজ ব্যবহারের কারণে একরের পর একর জমির ধান চিটা হয়ে গেছে।
কৃষকরা বলেন, সরকার কৃষিযন্ত্রে ভর্তুকি দিচ্ছে, কিন্তু সেই ভর্তুকির সুফল ভোগ করছে অকৃষিখাত। কৃষিযন্ত্রের ভর্তুকিতে নছিমন, করিমন নামক পরিবহন থেকে শুরু করে অকৃষিখাতের অনেক যন্ত্র রাস্তায় চলছে। সরকারি ধানচাল সংগ্রহ অভিযানের কথা তুলে ধরে কৃষকরা বলেন, ওই অভিযান মূলত মিল মালিকদের স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে। এর সঙ্গে কৃষকের কোনো প্রাপ্তির সম্পর্ক নেই, বরং সরকার ধান চালের যে মূল্য নির্ধারণ করে তাতে বাজারে ধানের স্বাভাবিক মূল্য আরো নিচে নেমে যায়। এই বঞ্চনা দূর করার স্বার্থে সরকারি উদ্যোগে গ্রামে গ্রামে অটো রাইস মিল স্থাপনের দাবি জানান তারা। নারী কৃষকদের জৈব সার প্রস্তুত ও উন্নত বীজ উৎপাদনের জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দাবি করেন।
এছাড়া ওই আলোচনায় যেসব দাবি উঠে এসেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, দেশব্যাপী ফল ফসলের প্রাচুর্যের গুরুত্ব বিবেচনা করে অঞ্চলভিত্তিক হিমাগার স্থাপন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আরও সক্রিয় করা, মৎস্য চাষে পাঁচ শতাংশ ট্যাক্স প্রত্যাহার, মৎস্য চাষকে কৃষি খাত হিসেবে গণ্য করা ও কৃষির সমপরিমাণ সুযোগ সুবিধা দেওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত পোল্ট্রি খামারিদের ক্ষতিপূরণ, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রতিরোধের অংশ হিসেবে পরীক্ষাগার ও ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য একটি উন্নত ল্যাবরেটরি স্থাপনে বরাদ্দ দেওয়া, পোল্ট্রি শিল্পে আপদকালীন বিশেষ তহবিল দেওয়া, প্রাণিসম্পদের সব খাতের জন্য বীমা ব্যবস্থা চালু করা, ভারত থেকে ডিম আমদানি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা এবং কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের জন্য গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সরকারি সহায়তায় সংগঠন গড়ে তোলা এবং সরকারি ব্যবস্থাপনায় মৎস্যখাতের জন্য কারিগরী ডিপ্লোমা শিক্ষা কোর্স চালু করা।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক শাইখ সিরাজ গত সাত বছরের কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেটের সুফল তুলে ধরে বলেন, ‘এই নিয়ে তৃতীয়বারের মতো অর্থমন্ত্রী এই কার্যক্রমে উপস্থিত হয়ে সরাসরি কৃষকের চাহিদার কথা শুনলেন, এটি কৃষকের কণ্ঠস্বর সরাসরি নীতি পরিকল্পনায় পৌঁছনোর ক্ষেত্রে অনেক বড় একটি নজির। আমরা আশা করি, এবারও জাতীয় বাজেটে কৃষকদের এসব দাবির প্রতিফলন ঘটবে।’ উল্লেখ্য, গত ২৫ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে চলতি বছরের ‘কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট’। এর আগে প্রাক-বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে কুমিল্লা, যশোর ও কক্সবাজারে।
Discussion about this post