মঈন উদ্দিন সরকার সুমন কুয়েত সিটিঃ বাংলাদেশির কর্মীদের জন্য কুয়েতের শ্রম বাজার অক্টোবর ২০০৬ থেকে বন্ধ ছিল। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে বর্তমান রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসহাব উদ্দীন এনডিসি পিএসসি দায়িত্ব নেওয়ার পর দূতাবাসের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে বিশেষ করে কুয়েতে মহামহিম আমীরসহ বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ আলোচনার ফলে কুয়েতের শ্রম বাজার বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য পুনরায় উন্মুক্ত হতে শুরু করে করেছে। ইতোমধ্যে একটি এগ্রিকালচার কোম্পানীতে শতাধিক বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ পেয়েছে। আরো বেশ কয়েকটি কোম্পানী বাংলাদেশের কর্র্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন করেছেন। বাংলাদেশ থেকে কোন কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া যাতে কোন প্রকার ভিসা ট্রেডিং না হয় সে বিষয়ে দূতাবাস সজাগ রয়েছে এবং বেশ কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
কুয়েতের শ্রম বাজার বাংলাদেশর কর্মীদের জন্য পুনরায় চালু হওয়ার বিষয়ে কুয়েতস্থ বাংলাদেশ কমিউনিটি দূতাবাসকে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করেছে। দূতাবাস কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং খেলাধুলার সংক্রান্ত কার্যক্রমকে সফল করতে বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছেন। এ ধরনের গঠনমূলক কার্যক্রমে কমিউনিটির ব্যাপক অংশগ্রহণের ফলে কুয়েতে বাংলাদেশের নাগরিকদের অপরাধমূল কাজে জড়িত হওয়ার ঘটনা তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমে এসেছে। উলে¬খ্য, কুয়েতে বাংলাদেশের নাগরিকদের বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার কারণে ২০০৬ সালে বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। বিগত ছয় মাসে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসীদের কল্যাণে এবং বিভিন্ন বিষয়ে তাদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে যে সকল কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তার বিবরণ নিম্নে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হ’ল: ০১। হেল্প লাইন চালু করন: প্রবাসীদের প্রয়োজনীয় তথ্য ও সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস হেল্পলাইন চালু করেছে। ব্যক্তি, সমষ্টি বা কমিউনিটির সমস্যা নিরসনকল্পে প্রবাসীরা এ হেল্পলাইনের সহায়তা নিচ্ছেন। টেলিফোন বা এবং মোবাইল ছাড়াও প্রবাসীরা তাদের সমস্যা দূতাবাসকে জানানোর জন্য ফ্যাক্স, ই-মেইল, ফেইসবুক এবং ওয়েবসাইটের সাহায্য নিতে পারেন। এছড়া বিমানে ভ্রমণকারী প্রবাসীদের সহায়তার জন্য একটি লিফলেট দূতাবাস প্রণয়ন করে তা বিতরণ করছে। ০২। ওপেন ডে (উন্মুক্ত দিবস) ফোরাম: প্রতি মাসের দ্বিতীয় বুধবার বেলা ১২ থেকে ১ টা পর্যšত দূতাবাসে ওপেন ডে ফোরাম অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মান্যবর রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তাদের উপস্থিত থেকে কর্মীদের অভিযোগ শুনছেন এবং সেগুলোর তাৎক্ষণিক সমাধান প্রদান করছেন। এ ফোরামের মাধ্যমে দূতাবাস ও কমিউনিটি সদস্যদের মধ্যে সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হচ্ছে। ০৩। স্বাস্থ্য সচেতনামূলক কর্মসূচী: প্রবাসীদেরকে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়ে আরো সচেতন করার লক্ষ্যে দূতাবাস কুয়েতে কর্মরত বাংলাদেশের চিকিৎসকদের সহায়তায় স্বাস্থ্য সচেতনতা মূলক কার্যক্রম বা¯তবায়ন করে যাচ্ছে। ০৪। নিউজলেটার প্রকাশনা: দূতাবাস ত্রি-মাসিক নিউজলেটার প্রকাশনা শুরু করেছে। মান্যবর রাষ্ট্রদূত প্রকাশনার প্রথম সংখ্যাটির মোড়ক উন্মোচন করেন ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে। এ প্রকাশনায় দূতাবাসের যাবতীয় কার্যক্রমের বিবরণ উলে¬খ করা হচ্ছে যাতে তা কমিউনিটির সদস্যরা অবহিত হতে পারেন। খুব শীঘ্রই নিউজলেটারের পরবর্তী সংখ্যা প্রকাশ পাবে। ০৫। ফুটবল ও ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন: দূতাবাসের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং কমিউনিটি সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণে ইতোমধ্যেই একাধিক ফুটবল, হাডুডু এবং ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করা হয়েছে। এসব ম্যাচে ব্যাপক সংখ্যক কমিউনিটি সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সম্প্রতি কুয়েতে বাংলাদেশ কমিউনিটির উদ্যোগে স্বাধীনতা দিবস ফুটবল, হাডুডু এবং ক্রিকেট ম্যাাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ০৬। রক্তদান কর্মসূচী পরিচালনা: বাংলাদেশের ৪২তম বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে দূতাবাস কুয়েত সেন্ট্রাল ব¬্যাড ব্যাংক এর সহযোগিতায় ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে এবং ৪৩তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে ২৮ মার্চ ২০১৪ তারিখে রক্তদান কমসূর্চীর আয়োজন করে। এতে প্রায় ২০০ জন বাংলাদেশের নাগরিক রক্তদান করেন যা কুয়েতের সর্বমহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। ০৭। কুয়েত রেডিওতে বাংলা ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচারের উদ্যোগ: মান্যবর রাষ্ট্রদূত কুয়েতের মাননীয় তথ্য মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে কুয়েত রেডিওতে বাংলা ভাষায় অনুষ্ঠান সম্প্রচারের প্র¯তাব দিয়েছেন। প্র¯তাবটি কুয়েত সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছেন এবং এ বিষয়ে খুব শীঘ্রই কুয়েত সরকারের ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে। কুয়েত রেডিওতে বাংলা ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচার করা হলে দূতাবাস প্রবাসীদের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য দ্রুততার সাথে পৌঁছে দিতে পারবে। বাংলা ভাষায় অনুষ্ঠান প্রচারের ফলে প্রবাসী বাংলা ভাষাভাষীরা কুয়েতের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, আচার আচরণ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করতে পারবে। এসব কর্মসূচী কুয়েতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিতে বৃদ্ধিতে ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছে। কুয়েতে বাংলাদেশের বর্তমান উজ্জ্বল ভাবমূর্তির কারণেই এখানে বাংলাদেশের কর্মীরা পুনরায় কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। মান্যবর রাষ্ট্রদূত কুয়েতের মহামহিম আমীর, ক্রাউন প্রিন্সসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রী ও বিশিষ্ট ব্যক্তি, কুয়েতি সংবাদপত্রের সম্পাদকের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন এবং যুদ্ধ পরবর্তী কুয়েতের পুনর্গঠন ও উন্নয়নে বাংলাদেশীদের ভূমিকা তুলে ধরেছেন। এসব কার্যক্রমও বর্তমান সাফল্য পেতে বিশেষভাবে সহয়াতা করছে। বাংলাদেশ দূতাবাস আশা করছে কুয়েতে বাংলাদেশে কমিউনিটি এবং সংশি¬ষ্ট অন্যান্য সকলের সহায়তায় খুব শীঘ্রই এগ্রিকালচার সেক্টরের পাশাপাশি অন্যান্য সেক্টরে বাংলাদেশের কর্মীরা আরো ব্যাপকহারে কাজের সুযোগ পাবেন।
Discussion about this post