কুয়েত প্রতিবেদক ঃ আল আমিন রানা: যোজন যোজন দূরে স্বদেশ ছেড়ে কুয়েত প্রবাসে জীবন জীবিকার তাগিদে দু’লক্ষাধিক বাংলাশেী পরাধীনতার শোষণ-শাসন,বহুমাত্রি বাধা-বিঘœতার মধ্যে স্বদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ঠিকা নিয়ে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যাচ্ছে দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অন্বেষায়। প্রবাস মানেই স্বেচ্ছায় বনবাস বা দেয়ালাবিহীন কারাগারে দুঃসহ কর্মবন্দী জীবন যাপন। একমাত্র অর্থ উপার্জনের জন্যই মানুষ প্রবাসে আসে। কোন রং তামাসা-আনন্দ-ফুর্তি বা বিলাসিতার জন্য নয়। অতিস্বল্প সময়ে অধিক অর্থোপার্জন করে জীবনকে সমৃদ্ধ ও সুন্দর করে সাজাতে অভাবমুক্ত স্বচ্ছল,সুখী ও উন্নত জীবন যাপন করার লক্ষ্যেই মানুষের প্রবাসগমন। প্রবাসে আসাটাও এতো সহজ ব্যাপার নয়। ভিটি-মাটি বিত্র“ী করে লক্ষ-লক্ষ টাকা যোগার করে কাঠ- খর পুড়িয়ে তার পরেই কেবল প্রবাসের দ্বার উম্মক্ত হয়। দালালের খপ্পরে পড়ে অনেকে আবার সর্বস্বান্ত হয়। পাহাড় সমান ঋণের বোজা মাথায় নিয়ে মানুষকে দুর্গম প্রবাসের পথে পাড়ি দিতে হয়। কিন্তু এখানে এসে ক’জনাই ভাগ্য উম্মোচিত হয়। ক’জনই পারে তার সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরেয়ে এনে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে। পেট্রো-ডলার নামে খ্যাত দেশ কুয়েত দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক রফতানি বন্ধ রয়েছে। আর যারা আছে কিছু সংখ্যাক শ্রমিক তাদের মধ্যে অনেকে আবার দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। কুয়েতের বিভিন্ন কোম্পানির শ্রমিকদের সাথে সরজমিনে সাক্ষাৎ করে যা জানতে পেলাম তাদের প্রবাস জীবনের বঞ্চনার উপাখ্যান। শহিদুল্লাহ জানান দীর্ঘদিন প্রবাসে আছি কখনো কখনো মনে হয় এ বন্ধী জীবনটা তুচ্ছ জীবন বাঘের খাচাঁয় বন্ধী। কোম্পানি নানা ভাবে হয়রানি করেন কখনো বেতন কমায় আবার কখনো দু’এক মাসের বেতন পাইনা। শর্ত মোতাবেক বেতন চুক্তি থাকলেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আমাদের বেতন দিচ্ছে না। পতিবাদ করতে গেলে আমাদের নানা ভাবে ঝড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়। কেমন ঝড়যন্ত্রের শিকার হতে হয় জানতে চাইলে অনেক কোম্পানির শ্রমিকরা ভয়ে মুখ খুলতে চায় না। সংবাদকর্মীদের সাথে শ্রমিকরা নিরুপায় হয়ে বলেন আমরা আজ কোম্পানির নামে অত্যাচারের কথা বলবো আপনি পত্র পত্রিকায় প্রকাশ করবেন এতে আমাদের উপর সমস্যা দেখা দিবে। আমাদের দেশে পাঠিয়ে দিবে,নানা হুমকি,দেয়। এমনিতে কুয়েতে বাংলাদেশীদের জন্য ভিসা বন্ধ রয়েছে। সওকত,হোসেন,আবুল সবাই জানান তিন বছর হয়ে গেলো দেশে যেতে পারিনা। কেন পারেন না,জানতে চাইলে বলেন-অনেক সময় সুপারভাইজারকে যদি ভাতা না দেই ছুটির পেপারে স্বাক্ষর করে না। আজ না কাল এমনি ভাবে চলে যায় দিন। এ ব্যাপারে আপনারা বাংলাদেশ দূতাবাসের কোন সহযোগিতা বা এ সমস্যা গুলো তাদের কাছে বলে প্রতিকার পাননি? তারা জানান দূতাবাসের সহযোগিতা সে তো আকাশ ছোঁয়ার মতো। আমাদের কথা শুনার সময় কি তাদের আছে। শওকত বলেন কুয়েতে কিছু কোম্পানির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলাদেশী তাদের কোম্পানিতে হাজার-হাজার বাংঙালী শ্রমিক কাজ করে তাদের শরীরের ঘামের ফসলে তারা কোটিপতি কিন্তু আমাদের দুঃখের কথা কেউ শুনতে নারাজ। কথায় আছে’আপন নামের অনেক স্বার্থ পরই মৃত্যুর পর কাফনের অর্ধেক খরচ বহন করার মত ও আত্মা হয় না’ তেমনে আমাদের বাঙালী উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ দূতাবাস ও প্রবাসী মন্ত্রনালয়ের কাছে বিনীত আবেদন প্রবাসীদের এহেন দুঃখ-দুর্দশার প্রতি সচেতন দৃষ্টি একান্ত জরুরী বলে মনে করে ভূক্তভোগি শ্রমিকরা। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েত,এখানে আমাদের পথ চলার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। এই মরুর দেশে অবস্থানরত দু’লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশী দীর্ঘ সময় ধরে দেশের অর্থোনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আগ্রনী ভূমিকা পালন করে আসছে। দেশের চাকা স্বচ্ছল রাখতে কঠোর প্ররিশ্রম করে যাচ্ছে। বাংলার শ্রমিকদের ঘামে সজীব হয় এদেশের মৃত পাথর। নানা প্রতিকুলতার মাঝেও প্রবাসীরা প্রবাস জীবন অতিবাহিত করে। প্রবাসে একমাত্র আশ্র“য়দাতা বাংলাদেশ দূতাবাস। আর সে দূতাবাস থেকে যদি কোন শ্রমিকরা সহযোগিতা না পায় কার কাছে যাবে?। কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে অনেক রাষ্ট্রদূত এসেছে আবার চলে গেছে। কে কি পেলাম তা আমরা প্রবাসীরাই জানি। তবে বর্তমান রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আসহাব উদ্দিন এনডিসি,পিএসসি সম্প্রতি দূতাবাসে যোগ দেয়ার পর থেকেই অনিয়ম দুর করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে।হতে। তবে বর্তমানে কুয়েতে আগের তোলনায় অধিকাংশ কোম্পানির শ্রমিকরা ভালো আছেন,কিন্তু কিছু-কিছু কোম্পানির শ্রমিকরা ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না, চাকুরি হারানোর ভয়ে,তাই এহেন দুঃখ দুর্দশার প্রতি মাননীয় রাষ্ট্রদূত মহাদয়ের আরো সচেতন দৃষ্টি একান্ত জরুরী বলে মনে করেন ভুক্তভোগি শ্রমিকরা।
Discussion about this post