ঝালকাটি প্রতিনিধি : ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি মাহমুদ হোসেন রিপনের বিরুদ্ধে জমি দখল এবং প্রতারনা করে বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ইউনিয়নের সেন্টারের হাট নামক স্থানে ব্যাক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তিতে জোড় পূর্বক টলঘর নির্মানের প্রতিবাদে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে এলাকাবাসি মামলা দায়ের করেছে। এ মামলায় আদালত চেয়ারম্যান মাহমুদ রিপন, উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমিসহ ৭ জন বিবাদিকে শোকজ করেছে। গত ১৬ জুন কাঠালিয়া সহকারি জজ আদালতে দায়েরকৃত ৬৮ নং মামলায় এলাকার ৪৪ জন বাদি এ নিষেধাজ্ঞার আদেশ চেয়েছেন। আদালত শুনানী শেষে বিবাদিগনের বিরুদ্ধে কেন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে না জানতে চেয়ে উক্ত সম্পত্তিতে স্থিতাবস্থার নির্দেশ দিয়ে ৭ দিনের মধ্যে কারন দর্শানোর আদেশ দেন।
মামলার আইনজীবী এ্যাভোকেট শাহাদাৎ হোসেন জানান, এ সম্পত্তি সরকারি হলে তা ১নং খতিয়ানের অথবা পেরীফেরী ভুক্ত হতো। তা না হওয়ায় এই জমিতে টলশেড বা সরকারি ভাবে কোন কার্যক্রম করা সম্পূর্ন বেআইনি। কিন্তু সরকার দলীয় প্রভাবশালী চেয়ারম্যান মাহমুদ রিপন অন্যায় ভাবে সরকারি সম্পত্তি দাবি করে লোকজন নিয়ে টলঘর নির্মানের নামে দখলের পায়তারা চালাচ্ছে। তাই এসএ রেকর্ড অনুযায়ী উক্ত সম্পত্তির মূল মালিকদের ওয়ারিশগন বাদি হয়ে আদালতের আশ্রয় নিলে ন্যায়সঙ্গত ভাবেই এ আদেশ দেয়া হয়। বাদি পক্ষ জানান, ইতিপূর্বে কাঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৬৬৩ নং স্বারকের এক চিঠিতে হাট বাজারের পেরীফেরী ম্যাপ অনুমোদন ব্যতীত টলশেড নির্মান প্রসঙ্গে বলেন, জেলা প্রশাসকের অনুমোদিত পেরীফেরী ম্যাপের বাহিরে হাটবাজারে কোন নির্মান কাজ করা যাবেনা। কিন্ত এ ক্ষেত্রে উল্লেখিত নির্দেশনার ব্যাত্যয় ঘটেছে কিনা জানতে চাইলে কাঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল বাশার মহাম্মদ আমীর উদ্দিন বলেন, এলজিইডি এই টলশেড নির্মান করছে। কিসের ভিত্তিতে নির্মান কাজ হচ্ছে বিষয়টি জানতে চেয়ে তাদের চিঠি দেয়া হয়েছে। তাছাড়া শৌলজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে মৌখিক ভাবে বলেছে, নির্মানাধীন টলশেডের জমি ইউনিয়ন পরিষদের অনূকুলে দান করা।
এছাড়াও শৌলজালিয়া ইউপি চেয়ারম্যানের দূর্নীতির বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক, দূর্নীতি দমন কমিশন, র্যাব বরাবরে প্রেরীত অভিযোগে উল্লেখ করা হয় যে, দলীয় ও নিকট জনদের প্রভাব খাটিয়ে চাকুরী দেয়ার প্রলভন ও ঠিকাদারী কাজের লভ্যাংশ দেয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন রিপন চেয়ারম্যান। এ প্রসঙ্গে পশ্চিম শৌলজালিয়া গ্রামের মোস্তফা মৃধার স্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমার স্বামীর কাছ থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়েছে তাকে ঠিকাদারি কাজের লভ্যাংশ দেয়ার কথা বলে। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর তার ভাই সুমনের মাধ্যমে এ টাকা নিয়ে আজ পর্যন্ত না দিয়ে টালবাহানা করছে। আল্লায় বিচার করবে। বেতাগীর শিক্ষিত বেকার যুবক আরিফ জানান, চেয়ারম্যানের বড় ভাইয়ের সাথে আমার বড় ভাইয়ের সুসম্পর্ক। সেই সূত্র ধরে ২০১০ সনে ষ্ট্যাম্পে ও ব্লাংঙ্ক চেকের মাধ্যমে ডকুমেন্ট রেখে চাকুরীর জন্য ৫ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। চাকরিতো দূরের কথা টাকাই পাচ্ছিনা। মাত্র ৭০ হাজার টাকা দিয়েছে এ পর্যন্ত। এলাকাবাসি জানিয়েছে দেনাদাররা টাকা চাইতে এলে এ নিয়ে প্রায় দিনই চেয়ারম্যানের সাথে হাট বাজারসহ এলাকায় বসে প্রকাশ্যে কথা কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। অনেকেই টাকা পেলেও চেয়ারম্যানের ভয়ে মুখ খুলতে রাজি নয়। কারন চেয়ারম্যান রিপন প্রধান মন্ত্রীর সাবেক এপিএস খায়রুল ইসলাম মান্নানের ভাই। তারই প্রভাব খাটিয়ে তিনি এসব করছেন।
এব্যাপারে চেয়ারম্যান মাহামুদ রিপন জানান, চাকুরী দেয়ার নামে আমি টাকা নেয়ার বিষয়ে কিছুই জানিনা। এলাকার উন্নয়নে কাজ করি বলেই প্রতিহিংসার জের ধরে এসব অভিযোগ হচ্ছে। আর সেন্টারের হাটে টলশেড করছে এলজিইডি। শুনেছি ওটা কমিউনিটি সেন্টারে দান করা জমির ভিতরেই টলশেড নির্মান করা হচ্ছে। তবে আমার কাছে এই মূহুর্তে এর কোন কাগজপত্র নেই। তাই কমিউনিটি সেন্টারের দলিলের কপি উঠাতে দিয়েছি।
Discussion about this post