বগুড়া জেলা প্রতিনিধি : শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিতি জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম বগুড়ায় পুরোদমে বোরো ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। ভরছে কৃষকের ঘর। বাজারগুলোতে উঠছে ধান-চাল। ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা ঘুরছে বাজারে বাজারে। বসে নেই খাদ্য কর্মকর্তারাও। কৃষি বিভাগের ধারনা এবার ৮ লক্ষাধিক মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হবে। আর অভ্যন্তরীন খাদ্য মজুদ করতে সরকার বগুড়া থেকে প্রায় ৮০ হাজার মেট্রিক টন চাল ও ৬ হাজার মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করবে। এ লক্ষ্যে জেলায় ৮ মে থেকে বোরো সংগ্রহ অভিযানের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রস্তুতি নিচ্ছেন মিল মালিকরা। বগুড়া কৃষি বিভাগ সুত্র জানায়, উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদনের অন্যতম বগুড়া জেলার প্রায় সব উপজেলায় বোরো ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। আর এ কাজে ব্যস্ত দিন পার করছে এ অঞ্চলের কৃষক-কৃষানি। পোকামাকড়-রোগবালাই কম, নন ইউরিয়া সারের ব্যবহার বৃদ্ধি, সেচ ব্যবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক থাকা, কৃষক প্রশিক্ষন ও মনিটারিংসহ উচ্চ ফলনশীল জাতের আবাদ বেশি হওয়ায় এবার জেলায় বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এবার বগুড়া জেলায় ১ লাখ ৮৬ হাজার ৭৩৯ হেক্টর জমিতে ৭ লাখ ৩০ হাজার ৭৮৩ মেট্রিক টন (চালের আকারে) বোরোর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়। সেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এর ফলে ৮ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি মেট্রিক টন উৎপাদন (চালের আকারে) হতে পারে।
এবার নন্দীগ্রাম উপজেলায় ২১ হাজার ৫৩০ হেক্টর, শিবগঞ্জে ২১ হাজার ৫০০ হেক্টর, শেরপুরে ২০ হাজার ২৫০ হেক্টর, কাহালুতে ১৮ হাজার ৭৭৫ হেক্টর, ধুনটে ১৭ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ করা হয়েছে। যা অন্যান্য উপজেলার চেয়ে বেশি।
গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের রানীর পাড়া গ্রামের রায়হান আলী জানান, এবার ৪ বিঘা জমিতে বোরা ধান চাষ করে ফসল ঘরে তুলেছেন। প্রতি বিঘায় গড়ে ১৭-১৮ মন ধান পেয়েছে। বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫২০ থেকে ৫৪০ টাকা মন ধান। সব খরচ বাদ দিয়ে তার বিঘায় ৪/৫ হাজার টাকা লাভ হবে। কাহালুর বিরকেদারের কৃষক আবু সাঈদ জানান এবার ৫ বিঘা ধান আবাদ করেছেন। মোটামুটি ফলন হয়েছে তার। ধান কাটার মজুরী বেশি তাই লাভ তেমন হবে না। বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বেশিরভাগ এলাকায় ভালো ফলন হয়েছে। বিভিন্ন বাজারে পুরো দমে ধান না উঠলেও বর্তমানে প্রকারভেদে ৫২০ থেকে ৬০০ টাকা মন ধান কেনা বেচা হচ্ছে।
বগুড়া জেলার সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ জহিরুল ইসলাম জানান, বগুড়ায় ৭৯ হাজার ৭৫৫ মেট্রিক টন চাল ও ৬ হাজার ২১৪ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। এলক্ষ্যে বগুড়া খাদ্য অফিস গত ৮ মে থেকে সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করেছে। এবার ২৮ টাকা কেজি দরে চাল ও ১৮ টাকা কেজি দরে ধান সংগ্রহ করা হবে। খাদ্য বিভাগের লাইসেন্সধারী ১৫ শ’র অধিক চাল কল মালিক (মিলার) আগামী ২৮ মে পর্যন্ত চাল সরবরাহে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবেন। আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এই সংগ্রহ অভিযান চলবে।
বগুড়া সদর (এলএসডি) খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মকলেচ আল আমিন জানান, বোরো সংগ্রহের জন্য সদর খাদ্য গুদাম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল কাদির জানান, এই সংগ্রহ অভিযান সুষ্ঠু ও শান্তিপুর্ন ভাবে পরিচালনার জন্য বগুড়া খাদ্য বিভাগ নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
Discussion about this post