নাজমুল হক বাংলার র্বাতা জামালপুর প্রতনিধিঃি তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও দারিদ্রের হার অনেক। দরিদ্রতার করাল গ্রাসে লিপ্ত হয়ে জীবন বাঁচানোর তাগিদে জনসংখ্যার একটি বড় অংশ দিনমজুর, রিক্সাচালক, গৃহকর্মী ইত্যাদির কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। পাশাপাশি যারা কোন কাজকর্ম করার সুযোগ পায়না বা কাজকর্ম করতে অক্ষম তারা জীবিকার তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তিকে বেছে নিয়েছে। প্রতিনিয়ত রাস্তাঘাট, ট্রেন, বাস, লঞ্চ-স্টীমার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি স্থানে দেখা যায় ভিক্ষুকদের আনাগোনা। তারা যাত্রী সাধারন ও পথযাত্রীদের কিছু বুঝে উঠার আগেই সামনে হাত পেতে বসে। এতে করে চলারপথে অনেক সময় অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আবার বিদেশীদের কাছে এরুপ পরিস্থিতিতে দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষন্ন হয়। তাই এদেরকে পুনর্বাসন করা দেশ ও জনগনের স্বার্থে জরুরী। শোনা যায় দেশের কিছু স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্ন স্থানে নানা কৌশলে ভিক্ষাবৃত্তিতে লিপ্ত করে হাতিয়ে নিচ্ছে অসহায় মানুষদের উপার্জন। তাই স্থায়ীভাবে এদেরকে পূনর্বাসন ও ভিক্ষাবৃত্তি রোধকল্পে সরকার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা গ্রহন করতে পারে।
যেমন :-
১:০০ নির্দিষ্ট এলাকায় ভিক্ষুকদের তালিকা ও পরিবারের সদস্য সংখ্যা নিরুপন করে মাসিক সম্ভাব্য খরচের পরিমান নির্ধারন করা যেতে পারে।
২:০০ সমগ্র বাংলাদেশে যানবাহনের টিকিটে উল্লেখিত নির্ধারিত ভাড়ার সাথে ভিক্ষুকদের পূনর্বাসন চাঁদা বাবদ ২/৩ টাকা যোগ করে আদায় করে উক্ত চাঁদার টাকা দৈনিক/ সাপ্তাহিক ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় বা জেলা পরিষদের তহবিলে জমা করা যেতে পারে।
৩:০০ মাসিক জমাকৃত টাকা হতে উক্ত এলাকার ভিক্ষুকদের মাসিক ভাতা প্রদানসহ নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ কোষাগারে জমা রাখা যেতে পারে।
৪:০০ বাৎসরিক জমাকৃত টাকা হতে ভিক্ষুক পল্লী নির্মান করে তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
উল্লেখিত পত্থায় ভিক্ষুক পূনর্বাসনে একটি কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সরকারী নীতিমালা জরুরী। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে না। সেদিকে খেয়াল রেখে সরকারের প্রতি সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।
একটি দুঃসহ ট্রেন ভ্রমন- নাজমুল হক
বাড়ী জামালপুর। ঢাকায় চাকুরী। সপ্তাহের বৃহস্পতিবার কর্মশেষে বাড়ীতে গমন ও শনিবার অথবা রবিবার অফিসের উদ্দেশ্যে যাত্রা। প্রতি সপ্তাহে যাতায়াত যেন একটি সিডিউল ওয়ার্ক-এ পরিণত হয়েছে। বিকাল বেলা ঢাকা থেকে জামালপুর-এ যেতে ট্রেনের সংখ্যা তিনটি হলেও অধিকাংশ চাকুরীজীবী কর্মশেষে ব্রম্মপুত্র নামক ট্রেনে বেশীর ভাগ যাতায়াত করেন। অপরদিকে জামালপুর থেকে অফিস সময় ধরার জন্য ঢাকাগামী ট্রেন শনিবার বিকালে দুইটি ও রবিবার রাত ৩ঃ২০ ঘটিকায় একটি। উক্ত ট্রেনসমূহে ঢাকা থেকে জামালপুর ও জামালপুর হতে ঢাকা যেতে প্রতিনিয়ত যাত্রীদের হয়রানির শিকার হতে হয়।
সেদিন ১২ জুলাই,২০১২। অফিসের কাজ শেষে বসের অনুমতি নিয়ে বিকাল ৪ঃ২০ ঘটিকায় যমুনা ট্রেন ধরার জন্য বিকাল ৪ঃ০০ ঘটিকায় অফিস ত্যাগ করি। যথারীতি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে উপস্থিত হয়ে দুই নম্বর লাইনে কালনী এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ট্রেন দেখতে পাই। কিছুক্ষনের মধ্যে কালনী এন্টারপ্রাইজ ছেড়ে যাওয়ার পর ৪ঃ০০ঘটিকায় যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনখানা দুই নম্বর লাইনে এসে দাড়ায়। ট্রেনে উঠে নির্ধারিত আসনে বসি। এইতো কিছুক্ষনের মধ্যে ট্রেন ছাড়বে এই আশায় বসে থাকি। মিনিট পেরোয়, ঘন্টা পেরোয় ট্রেন আর ছাড়ে না। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘন্টার পর ট্রেনখানা ছাড়ে। ১৩ জুলাই,২০১২ রাত ১২ঃ১৫ ঘটিকার সময় জামালপুর স্টেশনে পৌঁছাই। ট্রেন থেকে নেমে দেখি মুষলধারে বৃষ্টি। এর একটু আগে কমিউটার ট্রেনের যাত্রী বৃষ্টির ফাঁদে স্টেশনে আটকা পড়েছে। পনের মিনিট পর ব্রম্মপুত্র ট্রেন স্টেশনে পৌঁছলো। সেই ট্রেনের যাত্রীরাও বৃষ্টির ফাঁদে। তিনটি ট্রেনের যাত্রী বৃষ্টির ফাঁদে একাকার হয়ে স্টেশনে অপেক্ষা করতে থাকি কখন বৃষ্টি শেষ হবে। না বৃষ্টি কমার কোন লক্ষন নেই। শেষমেশ বৃষ্টির মধ্যে লেগুনায় উঠলাম। বাইরের চেয়ে লেগুনায় বৃষ্টি যেন বেশী পড়ছে। মুহুর্তেই ভিজে একাকার হয়ে রাত ১ঃ০০ টায় বাড়ী পৌঁছে কিছুক্ষনের জন্য হাফ ছাড়লাম।
এদিকে শনিবার বিকাল ৫ঃ০৫ঘটিকায় অগ্নীবিনা ট্রেনে ঢাকায় আসার উদ্দেশ্যে রাত তিনটা থেকে সকাল ১০ঃ০০ ঘটিকা পর্যন্ত অপেক্ষা করে আমার ভাতিজা ১৪/০৭/২০১২ তারিখের একটি টিকেট করে রেখেছিল। ১৩/০৭/২০১২ তারিখে হঠাৎ টেলিভিশনের হেড নিউজে ভেসে উঠে খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনখানা ইঞ্জিনসহ লাইনচ্যূত হয়ে একজন নিহত। উদ্ধারকারী ট্রেন উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে এবং খবরে দেখলাম মাননীয় রেলমন্ত্রী সবুজ ফ্লাগ নেড়ে লাইন ক্লিয়ারের ঘোষনা দিচ্ছেন। তখনও মনে হচ্ছিল না অগ্নীবিনা ট্রেনে ঢাকা যেতে পারবোনা। ১৪/০৭/২০১২ তারিখ দুপুরের পর স্টেশনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। বিকাল ৪ঃ২৫ ঘটিকায় হঠাৎ একটি ফোন আসে অগ্নীবিনা ট্রেন ঢাকা এখনও ছাড়েনি। তারপর খোঁজ নিতে থাকি অগ্নীবিনা ট্রেন খানা ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়েছে কি-না। অপেক্ষায় থাকতে থাকতে রাত ৭ঃ৩০ ঘটিকায় স্টেশনে গিয়ে জানতে পারলাম অগ্নীবিনা ট্রেনখানা জামালপুর পৌঁছবে না। উপায়ন্তর না দেখে টিকিট ফেরত দেই এবং রাত ৩ঃ২০ মিনিটে ছেড়ে যাবে যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনখানার একটি টিকিট ব্ল্যাকারদের নিকট থেকে চারশত টাকায় ক্রয় করি। নির্ধারিত সময়ে স্টেশনে পৌঁছে জানতে পারি যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনখানা জামালপুর স্টেশনে পৌঁছতে দুই ঘন্টা দেরী হবে। চোখে ঘুম নিয়ে অপেক্ষার পালা যেন কিছুতেই শেষ হচ্ছে না। রাত ৫ঃ২৫ ঘটিকার সময় ট্রেন স্টেশনে এসে পৌছে এবং ৫ঃ৩০ঘটিকার সময় যাত্রা শুরু করি। মনে হলো যথাসময়ে অফিসে উপস্থিত হতে পারবো। সকাল ৮ঃ১৫ ঘটিকার সময় ট্রেনখানা গফরগাঁও স্টেশনে পৌছলে বসকে ফোন করে বলে দেই স্যার, আমার অফিসে আসতে আধ ঘন্টা দেরী হবে-আমি ট্রেনে আছি। স্যার বললেন, ঠিক আছে, আসেন। গফরগাঁও স্টেশন থেকে এক স্টেশন পরে ট্রেন থামে। কি কারনে থামে জানা নেই। সেখানে প্রায় আধ ঘন্টা। অতঃপর আবার যাত্রা । কাওরাইদ রেল স্টেশন থেকে সাতখামাইর পার হয়ে শ্রীপুর রেলষ্টেশনে এসে ট্রেনখানা আবার ১ঃ০০ঘন্টা দেরী। শুনলাম ট্রেনের দূর্ঘটনার জন্য দেরী হচ্ছে। শ্রীপুর রেলস্টেশন থেকে দুই/তিন কিলোমিটার যাওয়ার পর ট্রেনখানা আবার থামে। সেখানে প্রায় ১ঃ০০ঘন্টা দেরী। ইতিমধ্যে ১০ঃ৩০ বেজে অফিস সময় পার হয়েছে। স্যারকে আবার ফোন । স্যার বললেন, আসেন। সেখান থেকে ইজ্জতপুর রেলষ্টেশনে আবার থামে
সেখানেও অনেকক্ষন দেরী। বাইরে বৃষ্টি। কিন্তু ট্রেনের ভিতরের গরমে অতিষ্ট মানুষ সরকার ও মন্ত্রীদের সমালোচনা নিয়ে গালিগালাজে ব্যস্ত। আমি যে আসনে বসে ছিলাম সে আসনের পাশে কয়েকজন ভদ্র মহিলা দাড়িয়ে ছিল। ট্রেনে পা রাখার জায়গা ছিল না। অবশেষে পালাক্রমে বসে বিশ্রাম নেয়া শুরু করি। পানি নেই, খাবার নেই। পেটে ক্ষুধা আর দুঃসহ গরমে মনে হচ্ছিল এখনই ট্রেন থেকে নেমে হাটা শুরু করি। ট্রেনটি দীর্ঘক্ষন অপেক্ষা করে রাজেন্দ্রপুর আউটার সিগনাল-এর কাছে কিছুক্ষন দাড়িয়ে স্টেশনে পৌঁছে। সেখানে দীর্ঘক্ষন দেরী করে জয়দেবপুর স্টেশনে দাড়ায়। অবশেষে বিকাল ২ঃ১৫ঘটিকার সময় কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছে অফিসে এসে দেখি হাজিরা খাতায় লালকালির দাগ।
জামালপুর থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন ১১ঃ৩০ ঘন্টার এই ভ্রমন। ট্রেনের এই অব্যবস্থাপনা দুর করে জামালপুরবাসীর মুক্তি কবে হবে জানা নেই কারো।
Discussion about this post