সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ
মানবতা বিরোধী মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে হতাশা, ক্ষোভ ও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
রায় ঘোষণার পর পরই সাপোর্ট বাংলাদেশের ব্যানারে প্রবাসী বাংলাদেশী জনগণ যেমন ক্ষোভ প্রকাশ করে কাদের মোল্লার ফাঁসি দাবী করেছেন, একই সাথে ৩৩টি সংগঠনের ব্যানারে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম স্ট্রাটেজী ফোরাম পূর্ব লন্ডনে তাৎক্ষণিক ভাবে সমবেত হয়ে রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবী জানিয়েছে। উপস্থিত নেতৃবৃন্দের সকলেই রায়ের ব্যপারে হতাশা ব্যক্ত করেন এবং তথ্য প্রমাণাদির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, কাদের মোল্লা মুক্তিযুদ্ধের সময় শুধু একজন বা ছয়টি অপরাধ করেনি, সে পুরো নয়মাস ধরে শত শত বাঙালি হত্যা করেছে, লুট-পাট ও অগ্নি-সংযোগ করেছে, ধর্ষণ করেছে। এই মোল্লা ৭১ সালে কসাই মোল্লার খেতাব পেয়েছিলো অপকর্মের জন্য।
অপরদিকে রায় যেদিন ঘোষিত হয়, সেদিন সেইভ বাংলাদেশের ব্যানারের কতিপয় লোক লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং রায়ের ব্যাপারে নিজেরাও উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, এতেই প্রমাণিত হয় কাদের মোল্লা অপরাধী নন।
লন্ডনের রাজপথে এবং বাঙালি অধ্যুষিত দ্বিতীয় বাংলা খ্যাত ব্রিকলেনের বাঙালিরা রায় শুনার পর যার পর নাই হতাশা ব্যক্ত করেন। প্রবাসী মফিজুল, মুজিব, রায়হান, কুদ্দুস, আলী , মিসবাহ, জিয়াউল সহ বেশ কিছু বাংলাদেশী সঙ্গীতা সহ মধুবন মিষ্টি ঘরে জড়ো হয়ে রায়ের ব্যাপারে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ ও হতাশা ব্যক্ত করেন। বাংলা বাজারে শপিং-রত প্রবাসী মহিলা রাহেলা, রেখা, রীণা, মৌরুসী-যাদের অধিকাংশই বাংলাদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষা করে এসেছেন, তারা সকলেই বলেন, কাদের মোল্লার অপরাধের তুলনায় যাবজ্জীবন নেহায়েতই কম শাস্তি। এতো নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা করে যদি এই অপরাধীর ফাঁসি না হয়, তাহলে আর কাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে ? তাদের অনেকেই বলেন, রায় দেখে মনে হয় কোথায় যেন একটা আপোষ-আপোষ গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
বিলেতের প্রাচীনতম বাংলা সাপ্তাহিক জনমতের সম্পাদক ও প্রভাবশালী বাংলা মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সৈয়দ নাহাস পাশা ক্ষোভের সাথে বলেন, এতো বিশাল মানবতা বিরোধী অপরাধ করে কাদের মোল্লার মতো ব্যক্তি যদি আজকে পার পেয়ে যায়, তখন কাল সরকার বদলের সাথে সাথে সে বিশেষ ক্ষমায় বেরিয়ে এসে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে মন্ত্রিত্বের আসনে বসলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা।বাংলাদেশে-তো ইতিপূর্বে তাই ঘটেছে.।
আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক ছাত্রনেতা সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক বলেন, তিনিও হতাশ। কাদের মোল্লার মতো ৭১-এর এই কসাইয়ের ফাঁসি হওয়া উচিৎ । তিনি আরো বলেন, ৭১ সালে এই কসাই বাঙালি জনগণকে কসাইয়ের মতো হত্যা করেছে। যাবজ্জীবন তার জন্য খুব লঘু শাস্তি হয়ে গেছে।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আনসার উল্লাহ বলেন, কাদের মোল্লার মতো চিহ্নিত অপরাধীর ফাঁসি হওয়া উচিৎ। কোনরূপ ক্ষমার ও লঘু শাস্তি এই ভয়ংকর অপরাধীর ঔদ্ধত্য বরং শত শহীদের আত্মাকে কলঙ্কিত করবে।
লন্ডন ছাড়াও বার্মিংহাম, মানচেস্টার, ব্রাডফোর্ড, লীডস, নিউক্যাসল, সান্ডারল্যান্ড, ডার্লিংটন, ডারহাম, ডরসেট, কেন্ট, ওয়েলস, লেস্টার, লাফবারা, শেফিল্ড, সর্বত্র যেখানেই প্রবাসী বাঙ্গালিরা আছেন, সেখানেই টেলিফোনে ও ক্ষুদে ম্যাসেজ বার্তায় সকলেই হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এদের সকলেই মোল্লার ফাঁসি দাবী করেছেন।
এদিকে বিএনপি সহ সেইভ বাংলাদেশ নামক সংগঠন কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিরোধিতা করে ট্রাইব্যুনালের ব্যাপারে উষ্মা প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন। বিলুপ্ত ঘোষিত কমিটির আহবায়ক বিএনপি নেতা এম এ মালিক ট্রাইব্যুনালকে ক্যাঙ্গারু ট্রাইব্যুনাল হিসেবে উল্লেখ করে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি কাদের মোল্লাকে নির্দোষ দাবী করেন। একই বক্তব্য সেইভ বাংলাদেশের নেতা ব্যারিস্টার নজরুল ইসলামেরও। তিনি আরো যোগ করেন, কাদের মোল্লা অপরাধী হলে ট্রাইব্যুনাল তাকে ফাঁসী দিতো। অপরাধী নায় বলেই তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে, যা অন্যায় বলে তিনি প্রতিবাদ করেন।
Discussion about this post