সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ-দেশে একের পর এক গুম, গুপ্তহত্যা, খুন, রাহাজানি বেড়েই চলছে।যখন-তখন যাকে ইচ্ছা তাকে বলা হচ্ছে ডিবি, এনএসআই, র্যাব, গোয়ান্দা বিভাগের লোকজন নানান ছলা-কলা-কৌশলের আশ্রয় নিয়ে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।বরাবরই প্রতিটি গুম, গুপ্তহত্যা, খুনের পর সরকারের এই সব বাহিনী বরবরের মতো অস্বীকার করে আসছে।
বুধবার বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক এম,পি এবং সিলেটের জনপ্রিয় নেতা এম, ইলিয়াস আলীকে রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র থেকে বিশেষ বাহিনীর লোকজন তার গাড়ীর ড্রাইভার সহ রাতের বেলা বিশেষ কায়দায় উঠিয়ে নিয়ে গেছে বলে তার পরিবার এবং দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। বরাবরের মতোই সরকারের সকল বিশেষ বাহিনী এবং পুলিশ বিভাগ ইলিয়াস আলী তাদের হেফাজতে থাকার কথা অস্বীকার করেছে। তাহলে প্রশ্ন হলো হঠাৎ করে জলজ্যান্ত সুস্থ স্বাভাবিক একজন মানুষ, বিশেষ করে বিরোধীদলের শক্তিশালী এক দক্ষ সাংগঠনিক সম্পাদক লক্ষ কোটি চোখের সামনে থেকে হাওয়া হয়ে গেলেন কি করে? ইলিয়াস আলীর কাছে কি আলাদিনের কোনো যাদুর মন্ত্র আছে নাকি যে ফুতঁ করে তিনি সবার সামনে থেকে হাওয়ায় মিশে যাবেন?
সন্দেহ নেই ইলিয়াস আলী একজন দক্ষ রাজনীতিক, সংগঠক, অসীম সাহসী জাতীয়তাবাদী এই লড়াকু সৈনিকের যেমন রয়েছে অসংখ্য ভক্ত, অনুরাগী-একইভাবে রয়েছে তার দলের ভিতরে ও বাইরে রাজনৈতিক এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাক্তিগত শত্রুও।কিন্তু দলের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা এমন কোনো উপদল কিংবা এই রকম নিখোঁজ বা কিডন্যাপ করার মতো সাহস কেউ রাখেন বলে সাধারণ জনগণও বিশ্বাস করবে না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মধ্যে এমন কেউ নেই যে এককভাবে ইলিয়াস আলীকে কিডন্যাপ বা গুম করার মতো দুঃসাহস দেখাতে পারেন। সরকারের বিশেষ মদদে, এবং অবশ্যই সরকারের বিশেষ বাহিনীর সরাসরি সহযোগিতা ছাড়া কারো পক্ষে ইলিয়াস আলীকে গুম করার মতো বুকের পাঠা খুব কম লোকেরই আছে।
আমি এই কারণে আমার এই ধারণা এবং মিথ প্রকাশ করার কারণ আছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি ইলিয়াস আলীকে খুব কাছে থেকে দেখে এসেছি। ১০টি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময়ে ইলিয়াস আলীকে আমি কাছে থেকে দেখার আমার সুযোগ হয়েছিল। যদিও আমি তার কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড কিংবা তাদের রাজনীতির সাথে কোনোভাবেই সম্পর্কিত ছিলাম না। অসম্ভব রকম জেদি, ত্যাগী, সাহসী জাতীয়তাবাদী রাজনীতি এবং নেত্রীর প্রতি এমন অনুগত রাজনৈতিক সৈনিক আজকের যুগে বিরল। ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার ঘটনাকে দেখতে হবে সেই রকম দৃষ্টিকোণ থেকে। এটাকে নিছক হেলাফেলা করে দেখলে চলবে না। বিএনপির চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলন এবং নেত্রীর অনুগত সৈনিককে তার জায়গা থেকে সরিয়ে দিতে পারলে বরং সরকারের লাভ-লোকশানের হিসাব-নিকাশ কষতে সহজ হয়।
তবে এসবের ফল কিন্তু কোনোকালেই ভালো হয়নি।আর এ ক্ষেত্রে তো হওয়ার প্রশ্নই আসে না। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের অন্যায়, অত্যাচার, জুলুমের সবচাইতে সোচ্চার এই লড়াকু সৈনিককে কে বা কারা গুম করছে তা অনেকই অনুমান করছেন। তবে তাদের অনুমান ভুল প্রমাণ করার দায়িত্ব সরকারের।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত তিন মাসে দেশে খুন, গুম, গুপ্তহত্যা বেড়েই চলেছে। প্রথম তিন মাসে খুনের মতো ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ৯৫০টি-যা জানুয়ারিতে ৩৩৬টি, ফেব্রুয়ারিতে ২৭৬টি, মার্চে ৩৩৮টি। তিন মাসে গুপ্তহত্যা সংঘটিত হয়েছে জানুয়ারিতে ৩১, ফেব্রুয়ারিতে ৯০, মার্চে ৯৩। আর খোদ রাজধানীতে খুন হয়েছে ৮২ জনের বেশি।
এর মধ্যে রাজনৈতিক হত্যা ৮৩,স আর আহত ছয় হাজারেরও বেশি। আর বিচারবহির্ভূত হত্যা ৩৫টির মতো ঘটেছে বলে রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। আর রেকর্ডের বাইরে এই সংখ্যা আরো বেশি এমনকি দ্বিগুণ সাধারণভাবে ধারণা করা হয়।
দোষে-গুণে মানুষ। পথ চলতে গিয়ে কিংবা রাজনীতির ময়দানে একে অন্যকে টেক্কা দেয়ার জন্য নানান কৌশল-ফিকির করা হয়ে থাকে। এটা স্বাভাবিক। তাই বলে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে গিয়ে একেবারে খুন কিংবা গুম করে ফেলতে হবে-এটা কোন ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি? এটা তো কোনো কৌশল হতে পারে না। এটা আদিম বর্বরতাকেও হার মানায়।
ইলিয়াস আলীকে যে বা যারা গুম করে নোংরা খেলায় মেতে উঠেছেন অবিলম্বে তাদের বোধোদয় হোক। নয়তো জাতিকে ভয়াবহ করুণ পরিণতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আমরা ইলিয়াস আলীকে আবিলম্বে সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় জনগণের কাতারে ফেরত দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই দাবি কি আমরা করতে পারি না?
সৈয়দ শাহ সেলিম আহমেদ: বৃটেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, লেখালেখির সঙ্গে জড়িত
ইমেইল: salim932@googlemail.com
Discussion about this post