মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে ঈশ্বরদী ইপিজেডে। রোববার দিনভর পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের দফায় দফায় সংঘর্ষে ঈশ্বরদী থানার ওসি, দু’জন এসআই ও ৩৮ কনস্টেবলসহ কয়েকশ’ শ্রমিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের ইপিজেড হাসপাতাল ও ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শতাধিক রাউন্ড গুলি, রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছে। সংঘর্ষ চলাকালে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় আঞ্চলিক মহাব্যবস্থাপকের (ডিআরএম) গাড়ি ভাংচুর করেছে বলে জানিয়েছেন ডিআরএম পংকজ কুমার সাহা। এসব ঘটনায় ঈশ্বরদী ইপিজেডের ৫টি গার্মেন্ট বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এদিকে, পুলিশের গুলিতে একজন শ্রমিকের মৃত্যুর গুজবে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গোটা ঈশ্বরদী এলাকা। শ্রমিকরা জানায়, রোববার সকালে ইপিজেডের রোশিতা নীটওয়্যার লিমিটেড ও মেগাটেক্স নীটার্সের শ্রমিকরা তাদের কাজের মজুরি বাড়ানো দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করলে রোশিতা ও মেগাটেক্সের জিএম আমির হোসেন পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে একজন পুলিশ সদস্য এসে রোশিতা নীটওয়্যারের শ্রমিক বীনা খাতুনকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করলে শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।এ সময় মারমুখি শ্রমিকরা রোশিতা ও মেগাটেক্সের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মারপিট শুরু করলে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠান থেকে পালিয়ে ইপিজেডের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে আশ্রয় নেন বলে জানান কর্মকর্তারা। একপর্যায়ে পুলিশও মারমুখি হয়ে উঠলে শ্রকিদের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এ সময় পুলিশের লাঠিচার্জ ও বেধড়ক পিটুনিতে শ্রমিক নাসরিন, নাজমা, মর্জিনা, জহুরা, চামেলি, হাফিজা, তাসলিমা, মালা, রুনিয়া, বিউটি, মিনারুল, জাহাঙ্গীর, জ্যোতি বিশ্বাস, শিখা, রঞ্জনাসহ অর্ধশত শ্রমিক আহত হন। এ পর্যায়ে শ্রমিকরা ইপিজেডের ভেতর থেকে পুলিশের প্রতি ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। দিনভর দফায় দফায় সংঘর্ষে কয়েকশ’ শ্রমিক আহত হয়েছে বলে ইপিজেডের ভেতরে থাকা শ্রমিক, প্রত্যক্ষদর্শী, হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্র নিশ্চিত করেছে। ইপিজেড হাসপতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা মোহায়মেনুল ইসলাম জানান, এখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর বেশির ভাগ শ্রমিককে অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঈশ্বরদী ৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ঈশ্বরদী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দুলাল উদ্দিন, এএসআই নুরুল আমিন, আনসারের প্লাটুন কমান্ডার রফিকুল ইসলাম, আনসার বোরহান উদ্দিন, শ্রমিক বীনা খাতুনসহ কয়েকজনকে। এদিকে, ঈশ্বরদী ইপিজেডের হাসপাতালে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) ইসরাইল হোসেন, পুলিশ সদস্য ইমরুল হোসেন, আনসারের প্লাটুন কমান্ডার রুস্তম আলী, সেকশন ইন্সপেক্টর দিনার আলম সহ বেশ কয়েকজনকে ভর্তি করা হয়েছে। এখানে প্রায় অর্ধশত শ্রমিকদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে হাসপাতাল সূত্র জানায়।
ইপিজেড সূত্র জানায় ইপিজেডের রোশিতা নীটওয়্যার লিঃ, মেগাটেক্স নীটার্স লিঃ, এবা (প্রাঃ) লিঃ, নাকানো (প্রাঃ) লিঃ ও রুলিং বিডি (প্রাঃ) লিঃ-এর সব কারখানা ও অফিস বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। সংঘর্ষের খবর পেয়ে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামীম আহমেদ, পাবনা র্যাব-১২ ও দাঙ্গা পুলিশ এসে ইপিজেডে অবস্থান নিয়েছে। রোশিতা নীটওয়্যারের শ্রমিকরা জানান, ইপিজেডের প্রধান ফটক বন্ধ করে দিয়ে পুলিশ প্রতিষ্ঠানের ভেতরে থাকা হাজার হাজার শ্রমিকদের বেধড়ক লাঠিচার্জ করে। পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার শামীম হোসেন জানান, পাবনা ও রাজশাহী থেকে ১০ প্লাটুন দাঙ্গা পুলিশ, র্যাব ও আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। ঈশ্বরদী ইপিজেডের জেনারেল ম্যানেজার মাহমুদ হাসান জানান, র্যাব-পুলিশ মোতায়েনের পর পরিস্থিতি এখন অনেকটা শান্ত। ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন শ্রমিকদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ঈশ্বরদী থানায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি জলছে বলে জানান তিনি।
Discussion about this post