বাঙালি উৎসবের এক পরিচিত নাম মেলা। সেই মেলায় বাহারি রকমের পণ্য নিয়ে হাজির হন উদ্যোক্তারা। তেমনি এক মেলায় ঘুরতে গিয়ে হোমমেড খাবার এবং হাতে তৈরি বিভিন্ন পণ্যের পসরা নিয়ে নারীদের অনবদ্য অংশগ্রহণ দেখে অনুপ্রাণিত হন কানিজ। অনুপ্রেরণা থেকেই হোমমেড খাবারের উদ্যোক্তা হলেন কানিজ ফেরদৌসি। বর্তমানে তিনি ৮০ রকমের পিঠা তৈরি করছেন, সেই সাথে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেও পেয়েছেন সম্মাননা।
২০১০ সালে উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কানিজ ফেরদৌসি। বিভিন্ন মেলায় নারীদের অংশগ্রহণ এবং তাদের পুরস্কার অর্জন কানিজকে উৎসাহিত করেছে একজন উদ্যোক্তা হতে। উদ্যোক্তা হওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন কোর্স করে রান্না বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করেন এবং হাতের কাজের বিষয়েও প্রশিক্ষণ নেন।
এরপর শতাব্দী হ্যান্ডিক্রাফট অ্যান্ড কুকিং একাডেমি নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যেখানে মহিলাদের কাজ শেখানো শুরু করেন এবং খুব ভালো রেসপন্স পান কানিজ।
মাত্র পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে পিঠা এবং আচার নিয়ে উদ্যোগ শুরু করেছিলেন তিনি। শুরুতে কানিজের ক্রেতা ছিলেন তার আত্মীয়স্বজন। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তৈরি করায় সবাই খুব প্রশংসা করতেন। সেই উৎসাহ থেকেই সিদ্ধান্ত নিলেন অনলাইনে কাজ শুরু করবেন। ‘শতাব্দী পিঠা পুলি ও আচার ঘর’ নামে একটি অনলাইন প্লাটফর্ম চালু করেন তাই।
অনলাইনের পাশাপাশি তিনি প্রিন্স বাজার, কেরি ফ্যামেলি, আইটি নেট, মিরপুর ডিওএইচএস, কুকিং এসোসিয়েশনের পিঠা মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন। কেরি ফ্যামেলি শপিং মলে পরপর চারবার ১ম পুরষ্কার অর্জন করেন। প্রিন্স বাজারে দু’বার ১ম এবং দু’বার ২য় পুরস্কার পান। এছাড়াও আইটি নেট পিঠা মেলায় একবার অংশ নিয়ে ১ম পুরস্কার লাভ করেছেন।
তিনি দু’বার প্রাণ জাতীয় আচার প্রতিযোগিতা থেকেও পুরস্কার অর্জন করেন।
কানিজ মূলত পিঠা ও আচার নিয়ে কাজ করেন। পাশাপাশি হ্যান্ডিক্রাফটের জুয়েলারি ও বিভিন্ন প্রকার শোপিস তৈরি করে থাকেন। হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠা এবং আচার স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরির মাধ্যমে দেশের হারানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে চান কানিজ ফেরদৌসি।
গোলাপ মিষ্টি পিঠা, পুর ভরা ঝাল গোলাপ পিঠা, গরুর মাংসের ঝাল পুলি, হৃদয় হরণ পিঠা, নকশী পিঠা, মুগ পাক্কন পিঠা, ঝিনুক পিঠা, শামুক পিঠা, লবঙ্গ লতিকা, ক্ষিরসা পিঠা, সুজির রাজকাটারিভোগ, সিরিষ পিঠাসহ প্রায় ৮০ ধরনের পিঠা তৈরি করেন তিনি। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন সিজনাল ফলের আচার।
নিজ বাসা থেকেই কাজ করেন তিনি। বর্তমানে তার ৫/৬ জন কর্মী রয়েছেন। হোমমেড খাবারগুলো ঢাকা এবং ময়মনসিংহে তিনি ডেলিভারি দিয়েছেন। এছাড়া আমেরিকাতেও তার পণ্য গিয়েছে। মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেন।
ময়মনসিংহের আনন্দমোহন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে পদার্থবিদ্যায় অনার্স সম্পন্ন করেন কানিজ ফেরদৌসি। তার বাবা এ.কে.এম জহিরুল হক ছিলেন পরিবার পরিকল্পনার ডিরেক্টর এবং মা জাহানারা বেগম রুপালি ব্যাংকের একজন সিনিয়র অফিসার। শৈশব এবং কৈশোর ছিল ময়মনসিংহ শহরে। বিয়ের পর উদ্যোক্তাজীবনে পা রাখেন কানিজ ফেরদৌসি।
তিনি বলেন, ‘আমি যে পণ্য নিয়ে কাজ করছি তাতে অনেক রেসপন্স পাচ্ছি। আমি আমার কাজকে ভালোবাসি এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ক্রেতাকে তার চাহিদা অনুযায়ী পণ্য দিয়ে থাকি। আমি আমার কর্ম ক্ষেত্রে সফল কিনা জানিনা। তবে এতটুকু বলতে পারি, কোন কাজকে অসম্মান করা উচিত না। পরিশ্রম ও ধৈর্যসহ কাজ করলে সকল কাজেই আপনি সম্মানিত হবেন এবং আপনার জীবনে সফলতা একদিন আসবেই। আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো: শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই নয়, পুরো বাংলাদেশ জুড়ে আমার পণ্য ডেলিভারি দিতে চাই।
Discussion about this post