শ্রাবণী বসু • লন্ডন- তাঁর পাঠানো বিয়ের উপহার পেয়ে বেজায় চটে গিয়েছিলেন কনের ঠাকুমা। বলেছিলেন, “এই এক চিলতে কাপড় আবার কেমন উপহার! এটা আর লোকজনকে দেখাতে হবে না।” সালটা ১৯৪৭। কনের নাম এলিজাবেথ, ‘রানি’ হতে তখনও তাঁর বছর পাঁচেক দেরি। উপহারদাতা মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী। নিজের হাতে বোনা খদ্দর পাঠিয়েছিলেন এলিজাবেথের বিয়ের উপহার হিসেবে। সেটা দেখেই চটে যান এলিজাবেথের ঠাকুমা মেরি। রানি এলিজাবেথের ‘রাজত্বের’ ষাট বছরের পূর্তিতে আজ হঠাৎই উঠে এল গাঁধীর নাম। সিংহাসনের মতো বিশাল চেয়ারে বসা রানি ও তাঁর স্বামী ফিলিপের উপর ছায়া ফেললেন সেই ‘অর্ধনগ্ন ফকির’। গাঁধীর এই নামটাও অবশ্য এক ব্রিটিশের দেওয়া উইনস্টন চার্চিল। রানির শাসনের হীরক জয়ন্তী উপলক্ষে বছরের গোড়া থেকেই চলছে উৎসব-উদ্যাপন। সেই উদ্যাপন যেন আজ গাঁধীর নামোচ্চারণে এক বিশেষ মাত্রা পেল। ওয়েস্টমিনস্টারে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের সদস্যের সামনে রানির বক্তৃতার আগে স্পিকার জন বেরকে বলেন, “গাঁধী বলেছিলেন, নিজেকে সঠিক ভাবে খুঁজে পেতে হলে অন্যের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে। গত ছ’দশক ধরে রানি বহু বার এ ভাবে নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন।” বেরকে আরও বলেন, “নমনীয় ভাবে কী ভাবে সারা পৃথিবীকে নাড়িয়ে দেওয়া যায়, তা আমাদের বুঝিয়েছিলেন গাঁধী। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও অত্যন্ত নমনীয় ভাবে শুধু ব্রিটেন নয়, সারা পৃথিবী কাঁপিয়েছেন।” গাঁধীর সঙ্গে এই তুলনায় রানির মনের অবস্থা ঠিক কেমন হয়েছিল, তা স্পষ্ট বোঝা যায়নি। পার্লামেন্টে উপস্থিত অনেকেই লক্ষ করেন, রানি বা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন কারও মুখেই হাসি নেই। তাঁর বক্তৃতায় রানি শুধু বলেন, “আশা করি এই উৎসব-উদ্যাপনের মধ্যে দিয়ে এ দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ আর কাছাকাছি আসবেন।” প্রসঙ্গত, ষাট বছরের পূর্তি উদ্যাপন রানি শুরু করেছিলেন হোলির দিন, লেস্টার শহরে। গুজরাতি অধ্যুষিত এই শহরের ঠিক কেন্দ্রস্থলেই গাঁধীর একটি বিরাট মূর্তি রয়েছে।
Discussion about this post