পিবিসি ডেস্ক: ঠিক যে মুহুর্তে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ঢাকায় জাতীয় নির্বাহী কমিটির মিটিং ডেকে সরকার বিরোধী আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন, সেই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির বিশেষ উদ্যোগ চলছে। আর এটা করছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডঃ ওসমান ফারুক। বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক এ কর্মকর্তাটি বিএনপির শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন ২০০৬ অবধি। ননপলিটিক্যাল এ ব্যক্তি বছরে দু’তিন বার করে যুক্তরাষ্ট্রে আসলেও কখনই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় বিএনপি নিয়ে মাথা ঘামাতেন না, এমনকি কোনো নেতাকর্মীর সাথে দেখা হতো না। আমেরিকায় নেমেই হঠাৎ করে গত রবিবার চলে আসেন নিউইয়র্কে এবং জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্টুরেন্টে বিশেষ এলাকার কিছু ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে রাজনৈতিক মিটিং করে ফেলেন। এ নিয়ে বিএনপি কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়ে উৎকন্ঠা ও উত্তেজনা। প্রতিবাদ সভাও হয়। কেন্দ্রে চলে যায় খবর।
এ সভায় ওসমান ফারুক নিজেকে অনেক গুরুত্বপূর্ন দায়িত্বপ্রাপ্ত বলে প্রচার করতে থাকেন। কাকে উঠাবেন আর কাকে নামাবেন তা নিয়েও কিছু উক্তি করে ফেলেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কমিটি করার বিশেষ উদ্দেশ্যের কথাও জানান দেন। গত বছর মে মাসে বেগম জিয়ার যুক্তরাষ্ট্র সফরের পরে বিএনপির নতুন কমিটি হবে এমন প্রচারণা ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু বিগত ১১ মাসেও কোনো নতুন কমিটি আসেনি, যদিও প্রায়ই খবর বের হয়, আজ কমিটি আসছে, কাল কমিটি আসছে। বিভিন্ন সময়ে বিএনপির অনেক কেন্দ্রীয় নেতারা যুক্তরাষ্ট্র ঘুরে গেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন যুগ্মমহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, ফরেন রিলেশনস কমিটির চেয়ারম্যান সাংবাদিক শফিক রেহমান, সাবেক এমপি ও বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক নাজিমউদ্দিন আলম ঘুরে গেছেন। জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ জয়নাল আবেদীন ফারুক চিকিৎসার জন্য নিজেই কয়েকমাস অবস্থান করে গেছেন নিউইয়র্কে। এ সকল নেতারা যেখানে বিভিন্ন নেতাকর্মীদের একজোট হয়ে কাজ করতে বলেছেন, সরকার বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে বলেছেন, সেখানে ওসমান ফারুক বিশেষ কিছু লোককে ডেকে সিংহভাগ নেতাকর্মীকে বাইরে রেখে বিভেদ বিসম্বাদ বাড়িয়ে দিয়ে গেলেন। এটা কি তার রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতা, নাকি ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহন?
অভিযোগ পাওয়া গেছে, কেবল নিউইয়র্কেই নয়, ওসমান ফারুক নিউজার্সিতে গেছেন স্বীকৃতিবিহীন কিছু লোককে বিএনপির কমিটি হিসাবে প্রতিষ্ঠার জন্য। এ খবর জানাজানি হলে নিউজার্সি বিএনপির কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে ওসমান ফারুক ও তার সাথে থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রতিহত করার ঘোষনা দেন। পরস্পর বিরোধী উত্তেজনা প্রশমনে এগিয়ে আসেন নিউজার্সি বিএনপির সভাপতি সোলায়মান সেরনিয়াবাদ। তার হস্তক্ষেপে একটি অনাকাংঙ্খিত ঘটনা এড়ানো গেছে। আর অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওসমান ফারুক নিজের মোবাইল বন্ধ রাখেন। এ প্রসঙ্গে পিবিসি নিউজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে নিউজার্সি বিএনপির সভাপতি সোলায়মান সেরনিয়াবাদ জানান, তাকে না জানিয়েই ওসমান ফারুকের নিউজার্সি আগমন। ব্যক্তিগত প্রয়াসে কিছু লোককে খুশী করার জন্যই এ সফর। গত বছর মে মাসে সোলায়মান সেরনিয়াবাদ সহ আরো কয়েক ব্যক্তির জোরালো লবিইংয়ে নিউজার্সি সিনেটের এক বিশেষ অধিবেশন বিল পাশ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিশেষ সম্মামনা প্রদান করা হয়। ঐ সময় ওসমান ফারুকও নিজেও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি ভালো করেই জানেন, নিউজার্সি বিএনপির বৈধ কমিটি সম্পর্কে। এরপরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ নির্দেশনায় সোলায়মান যখন যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার সাথে বিএনপির সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টায় অনেকদূর এগিয়েছেন, এমনকি সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনকে অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করে এসেছেন, এরপর থেকে একটি মহল উঠে পরে লাগে এ বিশেষ প্রয়াসকে থামিয়ে দেয়ার জন্য। এ লক্ষে মূল কমিটিকে পাশ কাটিয়ে একটি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠিকে নিউজার্সিতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ওসমান ফারুক নিজে জড়িত হয়ে পড়েছেন মর্মে তিনি জানান। এ বিষয়ে মতামত জানার জন্য শনিবার ওসমান ফারুককে ফোন করে তাকে সাড়া মেলেনি, মেসেজ রাখলেও জবাব পাওয়া যায় নি। ওসমান ফারুকের এ বিশেষ মিশনে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি আরেকবার ভাঙ্গনের মুখে পড়ল এবং মূলধারার সাথে বিএনপির সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা বাধাগ্রস্থ করা হচ্ছে, এমন ধারনা এখন কমিউনিটির মধ্যে প্রবল হয়ে উঠছে। প্রশ্ন উঠছে, কার স্বার্থে ওসমান ফারুকের এ মিশন??
Discussion about this post