মো. অলিউল্লাহ সরকার অতুল,কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধিঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় রেল লাইনে কাটা পরে রোজিনা আক্তার নামের এক গৃহবধূর মৃতু
হয়েছে। নিহতের পরিবারের দাবী মেয়েটির স্বামী ও পরিবারের লোকজন তাকে মেরে রেললাইনে তার লাশ
ফেলে রাখে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মন্দভাগ রেল স্টেশন থেকে উদ্ধার করেছে আখউড়া রেলওয়ে জিআরপি
থানা পুলিশ। একই কায়দায় ৫ বছর আগেও তার বড় বোন শিউলী আক্তারকে মেরে ফেলে ওই স্বামী।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কসবা উপজেলার কাইমপুর গ্রামের আবুল
হাসেমের মেয়ে বড় মেয়ে শিউলী আক্তারকে ১২ বছর আগে বিয়ে দেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া
উপজেলার চান্দলা ইউনিয়নের জামতলী গ্রামের আবদুর রশিদের পুত্র তফাজ্জল হোসেন (৩৭) এর সাথে
। বিয়ের পর থেকে মেয়েটির উপর শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করত তফাজ্জল ও তার পরিবারের
লোকজন। তাদের পরিবারের ২টি পুত্র সন্তান রয়েছে। এক পর্যায়ে মেয়েটি ২০০৮ সালে আতœহত্যা
করে।
পরে এলাকার সাহেব সর্দারদের এক শালিস বৈঠকের মাধ্যমে আবুল হাসেমের ছোট মেয়ে
রোজিনা আক্তারকে তফাজ্জলের সাথে ২০০৮ সালে আবারও বিয়ে দেন। বিয়ের পর তাদের ঔরষে একটি
পুত্র সন্তান জন্ম নেয়।
তফাজ্জল আবুদাবীতে চাকুরী করেন। তখন থেকেই তার পরিবারের লোকজন মেয়েটির উপর
নির্যাতন চালায়। এবছর ৫ অক্টোবর দেশে আসেন তফাজ্জল। বাড়িতে এসেই তফাজ্জল নিজেই
নির্যাতন শুরু করে। এ নিয়ে ২০/২৫ দিন আগে তফাজ্জলের বাড়িতে কয়েক দফা বৈঠক হয়।
গত সোমবার গভীর রাতে রোজিনা আক্তারকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না একটি খবর তার
মায়ের মোবাইলে খবর দেয় তফাজ্জলের মামা। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রোজিনা আক্তারের ভাই ফরিদ
মিয়া, খালাত ভাই আবুল হাসনাতসহ কয়েকজন লোক জামতুলী গেলে তফাজ্জল ও তাদের পরিবারের
লোকজন তাদেরকে আটকে রেখে নির্যাতন চালায়। পরে স্থানীয় লোকজন এসে তাদেরকে ছেড়ে দেয়।
পরে স্থানীয় লোকজন খবর পায় কসবা উপজেলা মন্দভাগ রেল স্টেশনের ৩ নং লাইনে একটি লাশ
পরে আছে। রোজিনা আক্তারের পরিবারের লোকজন এসে সনাক্ত করে এটি রোজিনা আক্তারের লাশ। খবর
পেয়ে আখাউড়া রেলওয়ে জিআরপি থানার পুলিশ নিহত রোজিনার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়
নিহতের বাবা আবুল হাসেম বলেন; তার আগের মেয়েটিকে তার জামাতা তফাজ্জল
নির্যাতন করত। তার নির্যাতনের জ্বালা সইতে না পেরে ৫ বছর আগে আতœহত্যা করেছে। তার
দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। এলাকার সাহেব সর্দারের অনুরোধে ২টি ছেলে সন্তানের কথা চিন্তা
করে তার ছোট মেয়ে রোজিনা কে বিয়ে দেন। বিয়ের পর তাদের একটি পুত্র সন্তান জন্ম নেয়।
বিয়ের পর থেকেই তার মেয়ের উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে। তিনি বলেন; তার
মেয়েকে মেরে রেল লাইনে ফেলে রাখেন।
নিহতের মা হালিমা বেগম বলেন; রাতের বেলায় তার মেয়েকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না এ
রকম একটি খবর তার মোবাইল ফোনে আসে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে মেয়ের বাড়িতে তার ছেলে ও
আতœীয় স্বজনরা গেলে তাদেরকে মেরে আটকে রাখে। পরে স্থানীয় লোকজন তাদেরকে ছেড়ে দেয়।
মন্দভাগ রেলস্টেশন মাস্টার জয়নাল আবেদীন বলেন; ধারণা করা হচ্ছে কেউ মেয়েটিকে মেরে
রেলস্টেশনের ৩ নং লাইনে ফেলে রাখে। রেল লাইনে লাশটি নিয়ে যাওয়ার ফুটা ফুটা রক্ত রাস্তায় পড়ে
আছে। ৩ নং লাইনে লাশটি পড়ে থাকায় লাশটি দ্বিখন্ডিত হয়ে যায়। ফুটা ফুটা রক্তের পাথরগুলি
পুলিশ জব্দ করেছে।
আখাউড়া রেলওয়ের জিআর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন;
যেহেতু ট্রেণে কাটা পড়েছে তাই থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করে লাশটির ময়না তদন্তের জন্য
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর হাসপালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে কেউ তাকে খুন করে ট্রেণের লাইনে
এসে ফেলে রাখা হয়েছে কিনা তা কয়েকদিনের মধ্যে লাশের ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পেলে তদন্ত করে
ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Discussion about this post