মুসা আহমেদ বখতপুরী, কাতার থেকে ॥ ব্যাপক আয়োজনের মধদিয়ে কাতারস্থ ওয়ালটন শোরুমের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এক মনোরম বনভোজনের আয়োজন করে স্থানীয় ওয়াকারা ফ্যামিলী গার্ডেনে। ওয়ালটন বাংলাদেশ এর একমাত্র পরিবেশক কাতার ওয়ালটন শোরুমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসিমউদ্দীন আহমেদ দুলালের আমন্ত্রণে প্রধান অতিথি বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহম্মদ শাহদাৎ হোসেন, বিশেষ অতিথি কাউন্সিলর মুহম্মদ নাসিরউদ্দীন, প্রথম (শ্রম) মাকসুদুর রহমান, বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের কান্ট্রি ম্যানেজার এ.টি.এম.জি. মোস্তফা, রাজনীতিবিদ, প্রকৌশলী, বুদ্ধিজীবী, ডাক্তার, সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিকসহ প্রায় চার হাজার প্রবাসী উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।দেশ সেবায় এগিয়ে আসুন ওয়ালটন পণ্য ঘরে রাখুন। ওয়ালটন পেয়ে আমরা ধন্য ওয়ালটন যে বিশ্বমানের বাংলাদেশের পণ্য। আমার পণ্য আমার দেশ এগিয়ে চলো বাংলাদেশ। উপরোক্ত শ্লোগানে উজ্জ্বীবিত হয়ে দেশমাতৃকার টানে এবং দেশ প্রেমের ঐক্যতানে সেদিন স্থানীয় আল ওয়াকারা ফ্যামিলী গার্ডেনে ওয়ালটন শোরুমের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বসেছিল বাঙালিদের বিশাল মিলনমেলা। জীবন জীবিকার টানে কর্মব্যস্ততার ভীড়ে যান্ত্রিক জীবনে সুদুর প্রবাসে মরুকাবেলায় বালির পাহাড়ের তীরে সবুজ ও সুসজ্জিত ফুটন্ত ফুলের সমারোহে, গাছ গাছালির ছায়াতলে, দূর্বাঘাসের কোমল আচলে বাঙালিদের স্মরণকালের স্মরণাতীত এমন মিলনমেলা স্বদেশের কথাই মনে করিয়ে দেয়। ক্ষণিকের তরে মনে হলো, যেন বাংলার বুকেই আছি আমরা। এই মরুদেশে বাংলার ঐতিহ্যবাহী এমন অপূর্ব আনন্দক্ষণ স্মরণ করিয়ে দেয় বাংলার বার মাসের ইতিকথা। বাঙালিরা দেশ থেকে যতই দুরে থাকুক না কেন, তারা জীবিকার নেশায় যতই নির্মম কষ্ট করুক না কেন, তাদের হৃদয়ের আছে অনাবিল আনন্দ সুপ্তমনে দেশ প্রেমের সুপ্ত বাসনা আর সীমাহীন দুঃখ বেদনার মাঝেও দেশ মাটি ও মায়ের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা। তাইতো প্রবাসের বুকে স্বদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে একপাও পিছু হটে না তারা। সময় সুযোগমত বাঙালিরা প্রমাণ করে, আমরাও পারি। আমাদেরও আছে নিজস্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও একান্ত আপন সত্ত্বা। আমরাও ভালবাসি আমাদের দেশ, আমাদের দেশের শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিকে। আমরা গর্বের সাথে বিশ্ববাসীকে বলতে পারি, এমন সোনার দেশ বিশ্বে আর কোথাও নেই। যেকোন কেউ বাংলাররূপ দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারেননা। তাইতো বাংলার অপূর্ব সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ কলমে কবি লিখেছিলেন, ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রাণী সেযে আমার জন্মভূমি’। সত্যি! দেশ থেকে দুরে, বহু দুরে সাত সমুদ্র তের নদীর এপারে সুদূর ধুধু মরুতরে না আসলে আমাদের দেশকে হয়ত বুঝতে পারতাম না, আমাদের দেশ কত সুন্দর বাংলাদেশ। ফলে মনের অজান্তেই বলে ফেলি, আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি। আমরা যারা ভাগ্যেচক্রে আজ প্রবাসী, তারাই বুঝি, মাতৃভুমি কি? মায়ের আদর কি? আর মায়ের ভাষা কি? আমরা থাকি প্রবাসে, আমাদের ব্যাকুল মনটা পড়ে থাকে বাংলাদেশে। আমরা সয়নে স্বপনে শুধু এটকা কথাই বলি, হে বাংলা মা, তোমায় আমরা ভালবাসি। আমরা বাঙালি! বাংলা আমাদের দেশ!! বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা!!! বাংলা আমাদের গর্ব, বাংলা আমাদের অহংকার, আমরা বাংলার গর্বিত সন্তান। সকাল ৮টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। ভোরের প্রাতরাশ বা সকালের নাস্তা পরিবেশনের ফাঁকে ফাঁকে আরম্ভ করা হয় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ধেলাধুলা। যা আমাদের স্কুল কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনে হাজারো মধুর স্মৃতি দিনগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। অত্যাধুনিক বাদ্যযন্ত্রের ঝংকারে আর আবহামান বাংলার ঐতিহ্যবাহী গানের তালে তালে উপস্থিত সমাগত অতিথিদের মুহুমুহু করতাালিতে গার্ডেনের সবুজ চত্বর যেন মহা আনন্দেররূƒপ নেয়। বিভিন্ন খেলাধুলায় সকল শ্রেণীর প্রবাসী বাঙালিা অংশ নেন। এমন কি এই অপূর্ব আনন্দঘন চিত্তবিনোদন মুখর ধেলাধুলা থেকে ছোট শিশুমুনিরাও বাদ পড়েনি। কথায় বলে যারা রাধে, তারা চুলও বাধে। বাঙালি রমণীরা প্রবাসে শুধু গৃহকাজেই ব্যস্ত থাকেন না, তারাও যে ধেলাধুলায় পারদর্শি সেই প্রমাণও সেদিন তারা দেখিয়েছেন। জুুমার নামাজ আদায়ের পর পরিবেশন করা হয় মধ্যাহ্নভোজ। মুহম্মদ মোকলেছুর রহমানের সার্বিক পরিচালনায় ও আবদুল করিম বাবুর্চি ১৪ জনের দল নিয়ে অভিজ্ঞ হাতের তৈরি প্রায় ১৫মন তাজা গরুর সুসাদু মাংস আর ৫শ মুরগীর রোষ্ট এমন তুপ্তির মধ্যাহ্নভোজ দেশের মেজবানের কথাই মনে হচ্ছি যেন বারবার। সম্পূর্ণ বাঙালিপনায় খাবারের প্রশংসাইছিল সবার মুখে মুখে।
ভোজ পর্বের পর কাতার প্রবাসী শিল্পী গোষ্ঠী চিরন্তন বাউল সংঘের পরিবেশনায় সঙ্গীতানুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও গার্ডেন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না পাওয়ায় উপস্থিত দর্শকরা এ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হন। অবশেষে শুরু হয় পুরস্কার বিতরণ ও র্যাফেল ড্র পর্ব। মুহম্মদ জসিমউদ্দীন আহমেদ দুলালের সভাপতিত্বে, এম. রহমানের সাবলিল উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে প্রধান ও বিশেষ অতিথিগণ এক এক করে মঞ্চে আসনগ্রহণ করেন। আহমেদ রিয়াজের স্বাগত বক্তব্যের পর বিমানের কান্ট্রি ম্যানেজার এ.টি.এম.জি মোস্তফা ও প্রধান অতিথি রাষ্ট্রদূত মুহম্মদ শাহদাৎ হোসেন ওয়ালটন পণ্যের ভূঁয়সী প্রশংসা করে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। রাষ্ট্রদূত মুহম্মদ শাহদাৎ হোসেন ভাষণদান কালে বলেন, ওয়ালটন পণ্য আজ স্বদেশ জয় করে বিদেশের মাটিতে পা রেখে যেভাবে বিশ্বকে জয় করার গৌরবময় প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে শুধু ওয়ালটন কর্তৃপক্ষই গর্বিতবোধ করতে পারবেন তাই নয়, পাশাপাশি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরাও এ সুন্দর বিশ্বমানের পথচলায় আনন্দিত ও গর্বের অংশিদারীত্ববোধ করছি। ওয়ালট পণ্যের গুণগতমান এবং তার দুর্বার নিপুণ পথচলা দেখে আমার দৃঢ়বিশ্বাস, ওয়ালটন পণ্য অচিরেই বিশ্ববাসীকে জয় করে গৌরবদীপ্ত ইতিহাস রচনা করতে সক্ষম হবে ইন্শাল্লাহ। রাষ্ট্রদূত ওয়ালটন কোম্পানিসহ কাতারে ওযালটন শাখা শোরুমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহম্মদ জসিমউদ্দীন আহমেদ দুলালের কর্মনিষ্ঠা, কর্মদক্ষতার ও ব্যবসায় লব্ধ অভিজ্ঞতার ভূঁয়সী প্রশংসা করেন।
পুরো অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ইভেন্ট অত্যন্ত সুন্দর সফলভাবে পরিচালনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন, আবদুল মতিন পাটোয়ারী, নজরুল ইসলাম সিইসি, প্রকৌশলী জালাল আহমেদ, প্রকৌশলী আনোয়ার ইসলাম আকন্দ, প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম, প্রকৌশলী সামস্দ্দিন মন্ডল, শাহজাহান সাজু, এম রহমান, প্রকৌশলী আবদুল ওদুদ, প্রকৌশলী আহম্মদউল্লাহ, আবদুল খালেক, এম. বাকের, এম. বাতেন, মুহম্মদ ইসমাইল হোসেন, শফিকুল ইসলাম প্রধান, শফিকল ইসলাম তালুকদার বাবু, আহমেদ রিয়াজ, আহমেদ জাহিদ, শাহ আলম, বদরুল আলম, আবিদুর রহমান ফারুক, আরিফুল ইসলাম আরিফ, মনির হোসেন ও আবদুল সালাম প্রমূখ।
Discussion about this post