কুয়েতে আনন্দঘন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বাংলাদেশের বসন্ত উৎসব। উৎসবে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়; যা বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। কুয়েতে প্রতিবছর কোনো না কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস। এসব অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এবার আয়োজন করা হয় বসন্ত উৎসবের।
শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৩টায় রিগাই পার্কে এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ ছিল হরেক রকমের পিঠা। কুয়েতে বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি নারীরা নানা নামের বাহারি নকশার মুখরোচক সব পিঠা নিয়ে হাজির হন উৎসবে।
ভাপা, নারিকেল দুধ পুলি, গোলাপ পিঠা, পাটিসাপটা, চিতই, মালপোয়া, ফুলঝুরি, সেমাই পিঠার মতো সুস্বাদু ও নজরকাড়া পিঠার পাশাপাশি ছিল মজার মিঠাই সন্দেশও। উৎসবে অন্তত ৬০ জন গৃহিণী সর্বোচ্চ ৫০ রকমের বাহারি পিঠা প্রদর্শন করেন। এছাড়া প্রদর্শন করা হয় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হরেক রকমের বিরিয়ানি, কোরমা ও পোলাও।
বাংলাদেশ ভ্রমণে উৎসাহী করতে মেলায় মাঠের চারদিকে ঐতিহাসিক স্থাপনা, সৌন্দর্য ঘেরা স্থানসহ আধুনিক বাংলাদেশের বিভিন্ন চিত্রের ফেস্টুন-ব্যানার দিয়ে সাজানো হয়। দুপর থেকেই উৎসবে স্বপরিবারে আসতে থাকেন কুয়েতে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের মিশন ও দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত, কুয়েতে বিভিন্ন পর্যায়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও কূটনীতিক। কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান ও দূতাবাসের অন্য কর্মকর্তারা অতিথিদের স্বাগত জানান।
অতিথিরা পিঠার স্টল ঘুরে দেখেন এবং পছন্দমতো বিভিন্ন পিঠা ও খাবারের স্বাদ গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের বাহারি সব খাবারের স্বাদ ও গুণগতমানের বেশ প্রশংসা করেন তারা। এদিন বাসন্তী সাজে সাজেন নারী, পুরুষ ও শিশুরা। বন্ধুবান্ধব ও পরিবার মিলে দিনটি উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করেন তারা। উৎসবটি বাঙালির মিলনমেলায় পরিণত হয়। যেন মরুর বুকে একখণ্ড বাংলাদেশ। খাওয়া-দাওয়া, খেলাধুলা ও আড্ডায় মেতেছিল ছোট-বড় সবাই।
বাহারি পিঠায় মুগ্ধ হয়ে কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশিকুজ্জামান বলেন, ‘এ যেন মরুর বুকে একখণ্ড বাংলাদেশ। বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে পিঠা। আর তাই পিঠা বাঙালির জীবন ও লোকজ খাদ্য সংস্কৃতির এক অপরিহার্য অংশ। বিদেশিদের কাছে আমাদের দেশের ভালো দিক, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি তুলে ধরতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রবাসের মাটিতে এ ধরনের অনুষ্ঠান দেশের সুনাম ও পরিচিতি বাড়াবে। বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিসহ ঐতিহ্যবাহী সব খাবার পরিচিত করে তুলতে এমন আয়োজনের বিকল্প নেই।
বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের পরিচয় তুলে ধরতে দূতাবাসের এমন আয়োজনে প্রবাসী আয়োজকরাও আনন্দিত। দেশের সুনামের জন্য এমন দায়িত্ব পালন তারা নিঃস্বার্থভাবে করে যাবেন বলে জানান তারা। বাংলাদেশের বসন্ত উৎসব হলেও অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশি থেকে বিদেশি অতিথিদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।
বিদেশের মাটিতে বৈশাখী মেলা, বসন্ত উৎসব, ফাল্গুনী উৎসব, পিঠা মেলাসহ বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে বিদেশি অতিথিদের উপস্থিতি একদিকে যেমন অনুষ্ঠানের মান বাড়ায়; অন্যদিকে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বিদেশিরা অবগত হন। এতে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়।
Discussion about this post