মুহাম্মদ জালাল উদ্দিন, কুয়েতঃ বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক মহান মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস উপলক্ষে ১ম পর্বের আলোচনা সভা কুয়েতে আওয়ামী লীগের বিবাদমান গ্রুপ গুলোর সংঘর্ষের কারণে ভন্ডুল হয়ে যায়। কুয়েতের ইতিহাসে বাংলাদেশ মিশনে শহীদদের স্মরণে আয়োজিত স্মরণ সভা ভন্ডুলের এই প্রথম ঘটনা যা ইতিহাসের খাতায় ন্যাক্কার জনক হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকবে।
এদিকে এই প্রথম বারের মত বাংলাদেশ দূতাবাস ব্যাপক আয়োজনের মাধ্যমে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিকমাতৃভাষা দিবসটি পতাকা উত্তোলন, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক, শিশু ও বড়দের চিত্রাঙ্কন ও সুন্দর বাংলা ভাষা হস্তাক্ষর লেখা প্রতিযোগীতার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন কুয়েত’র রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আস্হাব উদ্দীন, এনডিসি,পিএসসি, এর নির্দেশে।
স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় দূতাবাস চত্বরে রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আস্হাব উদ্দীন, এনডিসি,পিএসসি, দূতাবাসের সামরিক এট্যাচি বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাসিমূল গণি স্বপন, এনডিসি,পিএসসি, বাংলাদেশ মেলেটারী কনটেইনজেন্ট উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নিয়ে দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতি ও স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিকবৃন্দদের উপস্থিতিতে সকল বীর শহীদদের স্মরণে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে অর্ধনির্মিত রাখেন।
পতাকা উত্তোলনের পরপরই হলরুমে রাষ্ট্রদূতের সভাপতিত্বে শহীদদের স্মরণে পবিত্র কোরআন থেকে তেলোয়াত ও ১মিনিট নিরবতা পালনের মধ্যদিয়ে আলোচনা সভার কার্যক্রম শুরু হয়। এরপরে আওয়ামী লীগ কুয়েত এর সাবেক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রকৌশলী এম.এ. হান্নানের ২১শে ফেব্র“য়ারীর উপর মূল প্রবন্ধ পাঠের পরপরই পর্যায়ক্রমে উন্মুক্ত আলোচনা সভার ঘোষনা আসে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
উন্মুক্ত আলোচনা সভার শুরুতে হঠাৎ আওয়ামী লীগের সভাপতি সাদেক হোসেন এর উপস্থিতিতে তার থেকে ভাগ হয়ে যাওয়া অন্য গ্র“পের সর্বনিম্ন সারির একজন সদস্য তার অংশের নেতাদের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে ফয়েজ কামালের নাম ঘোষণাসহ উপস্থিত অন্যান্য নেতাদের পরিচিতি দিতে থাকে আলোচনায় অংশগ্রহণ না করেই। এতে প্রতিবাদ করেন সভাপতি সাদেক গ্র“পের সমর্থকরা। মুহুর্তের মধ্যে শুরু হয়ে যায় বাক্-বিতন্ডা, হাতাহাতি ও চেয়ার ওলট-পালট্। সাথে সাথে লন্ড-ভন্ড হয়ে যায় বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক ভাষা শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা।
দূতাবাসের কর্মকর্তারা শত চেষ্টা করেও চিহ্নিত আওয়ামী উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীদের নির্বিত করা যায়নি। তাদের উচ্ছৃঙ্খলতার ধরণ দেখে বুঝা গিয়েছে একটি গ্র“প আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে দূতাবাসের আয়োজনটি ভন্ডল করার জন্য। গন্ডগল চলাকালীন অবস্থায় দূতাবাসের মূল পটক বন্ধ করে দেওয়া হয় যাতে গন্ডগলটি বাহিরে ছড়িয়ে না পরে। ঘন্টাখানেক পর পরিস্থিতি কিছু শীথিল হলে আলোচনা সভা ছাড়াই রাষ্ট্রদূত কড়া হুশিয়ারী দিয়ে সকলকে বসিয়ে আবেগীয় কন্ঠে তিনি কিছু কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি এখনো একজন সৈনিক, আমি রাজনীতি বুঝিনা, আমি দেশ ও জনসেবার কাজে এখানে এসেছি, আজ আমার উপস্থিতিতে এখানে যা দেখলাম তা কোন ভাবে মেনে নিতে পারি না। যাদের জন্য দূতাবাসের প্রবিত্র স্থানে ভাষা শহীদদের স্মরণ সভা করতে পারলেন না তাদের তিনি অন্তর থেকে ক্ষমা করবেন না। পাশাপাশি তিনি তাদের বৎসনা করেন। সেই সাথে তিনি ঐসব উচ্ছৃঙ্খল চিহ্নিত ব্যক্তিদের দূতাবাস স্থল ত্যাগ করার নির্দেশ দেন।
স্মরণ সভায় কুয়েতে অবস্থানরত বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিরাসহ আওয়ামী লীগ ছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
কুয়েতে আওয়ামী লীগের বিবাদমান উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীদের ন্যাক্কার জনক ঘটনায় ২১ ফেব্র“য়ারীর সভা ভন্ডলের খবরটি মুহুর্তের মধ্যে বাংলাদেশী কমিউনিটিতে পৌঁছে যায়। আর এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ইতিহাসের খাতায় কালো তালিকা ভুক্ত হয়ে থাকবে। কুয়েত প্রবাসী সচেতন বাংলাদেশীরা মনে করেন এমন একটি দিন যে দিনটি না এলে হয়তো আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারতাম না। আর সেই দিনটিতেই যে সকল চিহ্নিত আওয়ামী উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মী ন্যাক্কার জনক সংঘর্ষ করে অনুষ্ঠানটি ভন্ডল করে দিছে তাদের চিহ্নিত করে দূতাবাসে চিরতরে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে শাস্তি দিলে পূনরায় এই ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকবে না ।
অন্যদিকে একুশের ২য় পর্বের অনুষ্ঠানে ঐসব চিহ্নিত ব্যক্তিদের দেখা যায় নাই। তবে সাধারণ উৎসুক প্রবাসীদের জড় হতে দেখা গেছে দূতাবাসের চত্বরে। কোন প্রকার অনাকাঙ্খিত ঘটনা ছাড়াই উৎসাহ উদ্দিপনার মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান দুপুর ২.৩০ থেকে আরম্ভ করে রাত ৮.৩০ পর্যন্ত বিরতিহীন ভাবে চলে। পুরো অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তারা ও প্রবাসী বাংলাদেশীরা উপস্থিত ছিলেন।
দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠানে শিশু ও বড়দের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগীতা, বাংলা সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগীতা, নাচ, গান ছিলো। এরপরেই স্থানীয় বাংলাদেশী সংগীত শিল্পীরা সংগীত পরিবেশনের পরপরই রাষ্ট্রদূত প্রতিযোগীদেও মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
Discussion about this post