মঈন উদ্দিন সরকার, কুয়েত: বিশ্বের উন্নত দেশের মধ্যে অন্যতম একটি ধনী দেশ কুয়েত। তৈল সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের মরুদেশ এই কুয়েতের মূদ্রা মূল্য বিশ্বের যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি। বর্তমানে ১ এক কুয়েতি দিনার সমান বাংলাদেশের প্রায় ৩০০ (তিন শত) টাকা।
এদেশে বিভিন্ন খাতে দক্ষ শ্রমিকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য করা যায় ঝুঁকিমুক্ত নিরাপদে, রয়েছে অনেক সম্ভবনা। বাংলাদেশি অনেকে তাদের যোগ্যতা আর দক্ষতায় হয়েছেন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। দিন দিন তাদের মেধা আর শ্রম দিয়ে এগিয়ে চলেছেন আরও উন্নতির দিকে। পাশাপাশি নিজ দেশের পণ্য বাজার কুয়েতে সম্প্রসারণ করতে চালিয়ে যাচ্ছেন আপ্রাণ চেষ্টা।
কুয়েতে দুই লাখের ওপরে বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছেন। তাদের রয়েছে দেশীয় পণ্যের চাহিদা, এই চাহিদা মেটাতে এবং কুয়েতে বাংলাদেশের পণ্য বাজার সম্প্রসারণে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন প্রবাসী ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশি তাজা পণ্যের মধ্যে মাছ, শাক-সবজি, আম-কাঠাঁল সহ বিভিন্ন মৌসুমী ফল, চাউল, ভাজা মুড়ি, মসল্লা ইত্যাদি। তেমনি বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের কাছে বাংলাদেশি গার্মেন্টসের রয়েছে যথেষ্ট কদর।
এই খাতে গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি করে প্রায় ১৭ লাখ মার্কিন ডলার রেমিটেন্স বৈধ উপায়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় (১০) দশ লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ রেমিটেন্স প্রেরণ করেছে আল বারাক এবং এশিয়ান গোল্ডেন কার্গো গ্রুপ অফ কোম্পানি। এই তথ্য জানান এশিয়ান গোল্ডেন কার্গো গ্রুপ অফ কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার প্রবাসী ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিন। তিনি আরো জানান, কুয়েতে একটি স্কুলের জন্য তার কোম্পানি বাংলাদেশের তৈরি (২১০০০.০০) একুশ হাজার স্কুল পোশাকের কন্ট্রাক্ট পেয়েছে, এরই মধ্যে কাজ প্রায় শেষের দিকে।
চলতি বছর শেষের দিকে কুয়েতে বাংলাদেশি পণ্যের বাণিজ্য মেলা হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এই মেলাতে কুয়েতে বাংলাদেশি পণ্যের আমদানিকারক এজেন্ট সকল ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ করে তাদের পণ্যের পরিচিতি, কুয়েতিসহ বিভিন্ন দেশের লোকজনের কাছে তুলে ধরার সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশি ছোট ছোট অনেক ব্যবসায়ী আছে তাদের প্রতি বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি করতে এশিয়ান গোল্ডেন কার্গোর পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা করার কথা জানিয়েছেন সাহাব উদ্দিন।
যথাযথ কর্তৃপক্ষের একটু সহানুভূতি আর আন্তরিকতা থাকলে কুয়েতের এই বিশাল বাজার জয় করা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জন্য তেমন কঠিন হবে না বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল।
তবে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানির সময় বিভিন্ন সমস্যার মুখেও পড়তে হয়। এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, বিমানের বিরম্বনার কাণে তাজা পণ্য আপলোড করে যথা সময়ে ফ্লাইট না হওয়ার কারণে কাঁচা পণ্যের মান তেমন ভাল রাখা যায় না। এছাড়া আছে উন্নত প্যাকিং না থাকার সমস্যা। বিশেষ করে বিমানের বিরম্বনা আর লোডিং করতে অসর্তকতার কারণে গুণতে হয় লোকসান। তারপরও দেশের স্বার্থে বিরামহীন প্রচেষ্ঠায় থেমে নেই আমাদের ‘রেমিটেন্স যোদ্ধারা’।
সাহাব উদ্দিন সরকারের কাছে দাবি জানান, অন্যান্য পণ্যের মত প্যাকিংয়ের জন্য ব্যবহৃত কার্টন সমূহের জন্য ২০% সাবসিডিয়ারি দেওয়া হোক। এই সুবিদা পেলে বিদেশের বাজারে টিকে থাকার জন্য দেশি কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের প্যাকিং ভাল করতে পারবে।
প্রবাসীদের পক্ষ থেকে ব্যাগেজ রুলের ব্রিটিশ আমলের আইন পরিবর্তন-পরিবর্ধন করে একজন প্রবাসী এক পাসপোর্টে ১৯৯ কেজি মাল নেয়ার আইন পরিবর্তন করে কমপক্ষে ৫০০ কেজি মাল নেয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিন।
সাক্ষাৎকার : কুয়েত প্রবাসী ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিন
Discussion about this post