আবদুল কাদের, কুয়েত প্রতিনিধি, স্বপ্নের হরিন ধরার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ৮০ লাখ ২১ হাজার ৬৭৮ জন বাংলাদেশী অভিবাসী হিসেবে বসবাস করে আসছে, আর এরা হাজারো সমস্যার মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে। বিশেষ করে কুয়েত সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোতে যে সব প্রবাসী আছে তারা প্রতিনিয়ত কঠিন বাস্তবতার মাঝে অনেক কষ্টে উপার্জিত অর্থের কিছু অংশ বাচিয়ে পরিবার পরিজনের জন্য দেশে পাঠায়। এখানে অন্য দেশীদের তুলনায় বাংলাদেশীদের বেতন অনেক কম তার পর প্রতি বছর আকামা রেনুয়েলের জন্য মোটা অংকের টাকা ব্যয় করতে হয়। এর পরে বাসা ভাড়া খাওয়া খরছ টেলিফোন বিল ইত্যাদি মিলিয়ে কুয়েতে একজন প্রবাসীর সর্বনিম্ন ১৫ হাজার টাকা খরছ হয়ে যায়।
এত কিছুর পরে আবার কুয়েত সরকারের পুলিশ বাহীনি কর্তৃক অনেক রকমের মোকালেফা[জরিমানা] রাস্তায় নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে না চলার জন্য জরিমানা, রাস্তার পাশে গাড়ী রাখার জন্য জরিমানা, দোকানে সাইন বোর্ড না থাকায় জরিমানা, সাইন বোর্ডের সাইজ ঠিক না থাকলে তাও সেই জরিমানা, এই রকম হাজারো জরিমানার নাম আছে যা বহন করতে গিয়ে প্রবাসীরা দিশেহারা।
সম্প্রতি কুয়েতের ফরওয়ানীয়া অঞ্চলের ফখরুল ইসলাম বাবুল নামের এক বাংলাদেশী ফাষ্ট ফুড ব্যাবসায়ী সিগারেট হাতে নেওয়ার জন্য ৩০০০০[ত্রিশ হাজার] টাকা জরিমানা দিতে হল। গত প্রায় দুই বছর আগে প্রতি দিনের মত তিনি ফাষ্ট ফুডের দোকানে দায়িত্ব পালন শেষে দুপুরে বাসায় আসার উদ্যেশ্যে দোকান বন্দ করে বের হওয়ার সময় তার হাতে ছিল একটি অজলন্ত সিগারেট। তিনি সিগারেটটা নিয়েছিলেন বাসায় গিয়ে খাওয়ার জন্য। এমন সময় সামনে এসে পড়ল কুয়েত মিউনিসিপিলিটির দুই জন কর্মকর্তা তারা বাবুলের সিভিল আইডি নিয়ে নাম নাম্বার নোট করে নিয়ে গেল। জুন মাসের বিশ তারিখ বাবুল গেল আকামা[ওয়ার্ক পারমিট]রেনুয়েল করতে গেলে সেখানে দায়িত্বরত অফিসার তাকে জানান ঐ সিগারেটের মাসুল হিসেবে তার নামে এক শত কুয়েতী দিনার বাংলাদেশী টাকায় ত্রিশ হাজার টাকা জরিমানা আছে।
বাবুল এই কথা শুনে হতবাক এক মাসে আয় যা হয় তার সব টাকা এইখানে আক্বেল সেলামি দিতে হবে তাহলে বাসার খরছ বাড়ির খরছ কি দিয়ে চলবে ? এদিক ওদিক টেলিফোন করে বুঝতে পারল এই টাকা না দিলে কোন ভাবেই আকামা লাগানো সম্ভব হবেনা। বাধ্য হয়ে জনাব বাবুল সেখানে ত্রিশ হাজার টাকা দিতে রাজি হয় কিন্তু তাতেও মুক্তি মেলেনি, এই অফিস থেকে ঐ অফিসে দৌড়াদৌড়ি করে টাকা পরিশোধ করার পর পরিশোধের রশিদ আকামা অফিসে জমা দেওয়ার দুই দিন পর আকামা লাগাতে সক্ষম হন।
এই ভাবেই শত অসুবিধার মাঝে প্রবাসীরা নিজের আয়ের অবশিষ্ট অংশ দেশে পাঠিয়ে নিজের পরিবারের ভরন-পোশন করেন পাশাপাশি অবদান রাখছেন দেশের অর্থনীতিতে। শত প্রতিকুলতা পার করে দেশের অর্থনীতিতে অত্যান্ত গুরুত্বপুর্ন অবদান রাখার পরেও কেন প্রবাসীদের সমস্যা গুলো সব সময়ই উপেক্ষিত ?
Discussion about this post