মঈন উদ্দিন সরকার সুমনঃ মধ্যপ্রচ্যের অন্যতম শেখ শাসিত ধনী দেশ কুয়েত। এই দেশে রাজনীতি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তার পরও বাংলাদেশের কিছু মানুষ তাদের দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের অক্লান্ত প্রচেষ্ঠায় অনেক বছর পূর্ব থেকে বিভিন্ন নামে আওয়ামীলীগ এর কর্মকান্ড চালিয়ে আসছেন। এক সময় কুয়েতে আওয়ামী লীগ এর নাম পর্যন্ত নিতে পারতেন না বলে দাবি করেছেন বিভিন্ন সময়ে কুয়েত প্রবাসী প্রবীন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। বিভিন্ন সময়ে সকল গ্রপকে ঐক্য করার জন্য কিছু প্রবীন নেতা কর্মি চেষ্টা করে আসছিলেন। কুয়েতে বর্তমান রাষ্ট্রদূত চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের একজন বলিষ্ট প্রবীন নেতা। তিনি কুয়েতে আসার পর থেকে কয়েক ভাগে বিভক্ত কুয়েত আওয়ামীলীগ এর সকল গ্রুপের নেতাকর্মি ঐক্যের জন্য রাষ্ট্রদূত এর কাছে দাবি জানান কুয়েত আওয়ামীলীগ এর নেতাকর্মিরা। অবশেষে সবার সম্মতিক্রমে একটি সুষ্ঠ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি দেবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন। ১৯ আগষ্ট ২০১৬ কুয়েত সিটির মালিয়ায় হোটেল সুইচ বেল প্লাজায় এক অনুষ্ঠানে কুয়েতে কয়েক ভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্য করার লক্ষে আনুষ্ঠানিক ভাবে সকল কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষনা করেন রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম। সেই থেকে রবিউল আলম রবি কে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ঠ একটি নির্বাচন কমিটি গঠন করে তাদের কাছে দায়িত্ব দেয়া হয়। দুই মাসের মধ্যে একটি সুষ্ঠ নির্বাচন করার কথা ছিলো। সেই থেকে চলছে কুয়েত আওয়ামী লীগের নেতা কর্মিদের মাঝে নির্বাচনের আনন্দ। এই নিয়ে কুয়েত সিটির রাজধানী আর গুলশান হোটেলে প্রতিদিন মধ্যরাত পর্যন্ত চলে সভা আর চায়ের আড্ড। শুরুতে এই নির্বাচণে পূর্বের অনুমোদিত কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ সাদেক হোসেন এর গ্রুপের কোন তৎপরতা দেখা না গেলেও থেমে থাকেনি দ্বিতীয় গ্রুপের ফয়েজ কামাল, তৃতীয় গ্রুপের আবদুর রব মাওলা, আওয়ামী ফাউন্ডেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ভুলুর নির্বাচনি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। দীর্ঘ দুই মাস অতিবাহিত হয়ে গেল নির্বাচন কমিটি তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে তৃর্নমূল থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগি সকল অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে, সুধী সমাজ, সাংবাদিকদের সাথেও বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ নিয়েছেন। শীঘ্রই নির্বাচন দেয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তিতায়। নির্বাচন কমিটির ভাষ্য মতে দুই থেকে আড়াই শত ভোটার দিয়ে এই নির্বাচন সম্পন্ন করবেন। কতজন সঠিক ভোটার পাওয়া গেছে তার কোন লিষ্ট, বা কে ভোটার হতে পারবে, কে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে এখনো পর্যন্ত প্রকাশ করেনি। এরই মধ্যে সভাপতি পদে শোনা যাচ্ছে কুয়েতে স্বনামধন্য কিছু ব্যবসায়ীর নাম। সমর্থকদের মুখে বিভিন্ন স্থানে শোনা যাচ্ছে তাদের পছন্দের পার্থীর প্রশংসা। বর্তমানে সভাপতি পদে পার্থীর নির্বাচনি প্রচারনা চালাচ্ছেন এক ফয়েজ কামাল, আবদুর রব মাওলা, প্রথম দিকে রফিকুল ইসলাম ভুলু তিনি নির্বাচনি প্রচারনা চালালেও বর্তমানে কোন তৎপরতা দেখা যায়না। বিশিষ্ঠ সংগঠক আতাউল গনি মামুনে এর পক্ষে একটি গ্রুপ কাজ করছে মাঠে। সম্প্রতী বাংলাদেশের বর্তমান আওয়ামী লীগ এর সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কারকে অভিনন্দন জানাতে এক নৈশ ভোজের আয়োজন করে কুয়েত এর স্বনামধন্য ব্যবসায়ী শহীদ ইসলাম পাপুল যেখানে কয়েকশত প্রবাসী উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই আগামী সভাপতি হিসেবে তার সমর্থনে শ্লোগান দেখে প্রবাসে মিনি বাংলাদেশের সরওয়ার্দী উদ্যানের চিত্র বলে অনেকে মনে করেছেন। আবার কিছু মাণুষের কাছ থেকে কুয়েত প্রবাসী স্বনামধন্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারীর নাম শোনা যাচ্ছে। তবে কে মাঠে নামছে কুয়েত আওয়ামীলীগ এর সভাপতি পদের পার্থী হিসেবে তা দেখার অপেক্ষায় আছে সাধারণ প্রবাসীরা। সাধারণ প্রবাসী সহ সম্ভাব্য ভোটার ও কিছু নেতা কর্মীদের কথা শোনে ধারণা করা যায় যদি নির্বাচন হয় তাহলে বিপদে আপদে প্রবাসীদের পাশে থাকবে এমন নেতাকেই তারা আশা করেন।
অন্যদিকে মোহাম্মদ সাদেক হোসেন বলেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ২০০৪ সালে কুয়েত আওয়ামী লীগ এর কমিটির অনুমোদন দিতে সে সময় কুয়েতে আসেন শেখ সেলিম, ডা. হাসান মাহমুদ, জাহাঙ্গীর হোসেন। সেই কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয় মোহাম্মদ সাদেক হোসেন কে আর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মোহাম্মদ হাবীব। সেই থেকে চলে আসছে আওয়ামী লীগ এর কার্যক্রম। মোহাম্মদ সাদেক হোসেন এর সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন এই নির্বাচন এবং কমিটি গঠনতন্ত্র বহিরবুত, তিনি আরো বলেন রাষ্ট্রদূত সবাইকে ঐক্য হওয়ার কথা বলতে পারেন কিন্তু উনার কোন এখতিয়ার নাই কোন অনুমোদিত কমিটিকে বিলুপ্ত করার, কুয়েত আওয়ামীলীগ এর নির্বাচন নিয়ে কথা বলা্র। জনাব সাদেক হোসেন এই নির্বাচন কমিটিকে স্বঘোষিত কমিটি বলেন, তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির লিখিত আদেশ বা ঘোষনা ব্যতিত তার অনুমোদিত কমিটির কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন বলে জানান। কত বছর এই কমিটির অনুমোদন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন কেন্দ্র থেকে বিলুপ্ত করার পূর্ব পর্যন্ত পূর্বে কমিটি বলবৎ থাকবে বলে দাবি করেন।
একান্ত সাক্ষাতে কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম এর সাথে নির্বাচন নিয়ে কথা বললে তিনি জানান তিনি ষোল কোটি মানুষের প্রতিনিদিত্ব করতে কুয়েতে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তিনি চান সবাই মিলে মিশে ঐক্য হয়ে দেশটাকে এগিয়ে নেয়ার। সবাই একতা থাকলে প্রবাসীদের স্বার্থে অনেক কিছুই করা সম্ভব। কুয়েতে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকা সত্যেও এখানে রাজনীতি নিয়ে রাষ্ট্রদূতের হস্তক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন বিদেশে মিশনগুলোতে রাষ্ট্রদূত কোন দলের নয় সবার কাছে সমান। তিনি কুয়েত প্রবাসীদের সম্পর্কে অবগত আছেন। বিভিন্ন সময়ে রাজনীতিক কর্মকান্ড নিয়ে মারা মারি হানা হানি সম্পর্কেও তিনি যথাযথ ভাবে অবগত আছেন। প্রায় আড়াই লাখ প্রবাসীর মধ্যে খুবই অল্প সংখক প্রবাসী বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনীতিক কর্মকান্ডের সাথে জরিত যা ২% হবে কিনা সন্দেহ আছে। তাদের কিছু উশৃঙ্খল কর্মের জন্য আড়াই লাখ প্রবাসী ভুগান্তিতে পরেন। সেই দিকটি চিন্তা করে সবাইকে ঐক থাকতে কয়েক ভাগে বিভক্ত বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে ঐক্যের মাধ্যমে কাজ করার সবাই মিলে মিশে প্রবাস জীব অতিবাহিত করার আগ্রহ জাগান। স্থানীয় আইনকে সম্মানের সাথে মেনে চলেতে সবার প্রতি অনুরুধ জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান কুয়েতে বাংলাদেশের সম্মান ক্ষুন্ন করে এমন কোন কাজের সাথে জরীত আছে এমন প্রমান পেলে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করবেন বলে হুশিয়ারী করেন।
অনেকে সেই কমিটির আনাস্থা দিয়ে আলাদা গ্রুপ করেও চালিয়েছে তাদের কমিটির কার্যক্রম। দীর্ঘ অনেক বছর বিভিন্ন কারণে কয়েক ভাগে বিভক্ত কুয়েত আওয়ামী লীগ। সর্বপরি কুয়েত আওয়ামীলীগ এর নির্বাচনকে ঘিরে এখনো চলছে নানা কল্পনা জলপনা।
Discussion about this post