ক্যাব বোয়ালখালীর উদ্যোগে আলোচনা সভায় বক্তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপন্য ও কাপড়ের বাজার নিয়ন্ত্রণ-খাদ্যে ভেজাল রোধে প্রশাসনের কঠোর কর্মসূচি না হলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে প্রকট
চট্টগ্রামসহ দেশীব্যাপী বাজার মনিটিরিং কার্যক্রম জনগনের চাহিদা তুলনায় অনেকটাই সীমিত আকারে পরিচালিত হচ্ছে। জনদুর্ভোগ ও সমস্যা সমাধানে দ্রুত ও সহজ উপায় হিসাবে ভ্রাম্যমান আদালত বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে এবং জনগনের কাছেও আস্থার প্রতীকে পরিনত করেছে সে কারনে মানুষ ভ্রাম্যমান আদালতের উপর নির্ভরশীলতা ক্রমাগত বাড়ছে। তবে প্রশাসনের কঠোর নজরদারির অভাবে রমজান, ঈদ-পুজা-পার্বন আনন্দ-উৎসবের চেয়ে আতংকে পরিনত হয়েছে। সেখানে ১৬ কোটি মানুষের সমস্যা নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্য, কাপড়, কসমেটিকস, জুতা, খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে চলমান অভিযান জোরদার করা না গেলে গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে পুরো সমাজে অস্থিরতা প্রকট হবে। কারন নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের মূল্যবৃদ্দি ও অস্থিরতার চাপ দারিদ্রের দুষ্ঠু চক্রের মতো পুরো সমাজকে বিশৃংখলায় পথে ধাবিত করছে, জীবন-জীবিকায় মানুষ বাধ্য হয়ে অনেকে অনৈতিক পন্থা অবলম্বন, দুর্নীতি ও অবৈধ উপায়ে আয়ে জড়াচ্ছে। সভ্য সমাজে এ ধরণের নৈরাজ্য চলতে দেয়া উচিত নয়। ৪ জুন ২০১৮ইং বোয়ালখালী উপজেলা পালকি কমিউনিটি সেন্টারে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ক্যাব) বোয়ালখালী উপজেলার উদ্যোগে আয়োজিত ইফতার পূর্ব আলোচনা সভায় বক্তাগন উপরোক্ত মন্তব্য করেন। বোয়ালখালী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মওলানা ওবাইদুল হক হাক্কানীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, প্রধান বক্তা ছিলেন ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী। ক্যাব বোয়ালখালীর সাংগঠনিক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা সামশুল হুদার সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশনেন সরোয়াতলী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ, ক্যাব বোয়ালখালীর সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক শাহনেওয়াজ আলী মির্জা, যুগ্ন সম্পাদক কামাল উদ্দীন প্রমুখ।
বক্তাগন বলেন পবিত্র কোরআনে আল্লাহ স্বয়ং নিজেই ওয়াদা করেছেন রমজানে রোজাদারের প্রতিদান আল্লাহ নিজেই দিবেন। আর যারা খাদ্যে ভেজাল ও দ্রব্যমূল্য মজুত, ওজনে কারচুপি ও মানুষকে প্রতারনা মাধ্যমে ঠকাবে তাদেরও কঠিন শাস্তিও প্রদান করা হবে। তারপরও দেশ খাদ্যে ভেজাল থেমে নেই, দ্রব্যমূল্য মজুতারী, সিন্ডিকেট করে জনগনের পকেট কাটার উৎসবও জোরদার। যদিও মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর অনেক দেশে রমজান ও ঈদে মূল্য হ্রাস হয়। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও পুজার সময় মূল্য ছাড় হয়। কিন্তু পৃথিবীর ২য় বহৎ মুসলিম রাস্ট্র বাংলাদেশে তার চিত্র পুরো উল্টো। এ অবস্থার পরিত্রানে ব্যবসায়ীদের যেরকম সতর্ক হতে হবে, তেমনি ভোক্তা হিসাবেও সচেতনতার বিকল্প নেই। কারন দেখে শুনে-যাচাই বাছাই করে পণ্য কেনার বিকল্প নেই। যে পণ্যের দাম বাড়বে সে পণ্য ক্রয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ার কোন অর্থ নেই।
বক্তাগন পবিত্র মাহে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ, পচা-বাসি খাবার বিক্রি বন্ধে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের দাবি জানিয়ে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদারের দাবি জানান। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় উপজেলা পর্যায়ে বাজারগুলির ভোগ্যপণ্যের দাম সাধারন জনগনের নাগালের বাইরে আর এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পণ্য মজুত ও কৃত্রিম সংকট তৈরী করে কাঁচা বাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্ঠি করছে। প্রশাসন যথাযথ ভাবে বিষয়টি তদারকি করলে ১৬ কোটি ভোক্তারাই উপকৃত হবেন। বক্তাগন পবিত্র রমজান আসলেই একশ্রেণীর ধনাঢ্য ব্যক্তি জনগনের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরন করে থাকেন। প্রতিবছর ইফতার ও যাকাতের কাপড় সংগ্রহ করতে বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। সদ্য সংগঠিত সাতকানিয়া ট্রাজেডীতে বিপুল প্রাণহানি ঘটলেও এ ধারা অব্যাহত আছে। এছাড়াও অসংখ্য ধনাঢ্য ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান ইফতার সামগ্রী বিতরণের কারনে ভোগ্য পণ্যের বাজারে চাপ তৈরী হয়। যার কারনে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ায়। এছাড়াও নগদ অর্থ প্রদান করলে দরিদ্র মানুষ তাঁর প্রয়োজন অনুযায়ী কেনা কাটা করতে পারবে। অন্যদিকে ইফতার সামগ্রী বিতরনের সময় অপচয় ও অব্যবস্থাপনায় বিপুল পরিমান সামগ্রী নষ্ঠ হচ্ছে। তাই ইফতার সামগ্রীর পরিবর্তে নগদ অর্থ প্রদানের জন্য সর্বসাধারণের প্রতি আহবান জানান।
প্রতিবেদকঃ শম্পা কে নাহার
ক্যাব বিভাগীয় কার্যালয়, চট্টগ্রাম।
Discussion about this post