মোশাররফ হোসেন শুভ, ময়মনসিংহ থেকে : ফুল-পাপড়ি ছাড়াই গাছের কান্ড ও ডাল ভেদ করে বের হয়ে আসে আষাঢ়ে ফল লটকন। আষাঢ়র মাসের শুরুতেই পাঁকতে শুরু করা এ লটকনের জন্ম জঙ্গলে হলেও আজ তা রফতানি হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। টক-মিষ্টিতে ভরপুর এ লটকনের স্থানীয় নাম বুবি। মৌসুমের শুরতেই লটকনের বাগানগুলোতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পাইকারী ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়ে সকাল-সন্ধ্যা চলে বেঁচাকেনা। গ্রামে-গঞ্জে পাখির খাদ্য হিসেবে পরিচিতি এ লটকনের কদর এক সময়ে না থাকলেও ময়মনসিংহের গৌরীপুরে আজ শতাধিক কৃষকের ভাগ্য বদলে দিয়েছে এই লটকন। কম খরচে বাম্পার ফলন হওয়ায় এ লটকন চাষে দিনে-দিনে আগ্রহ বাড়ছে এলাকার কৃষকের।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রকৃতির নিয়মে জঙ্গলে জন্ম নেয়া এ লটকন ফলে কোন রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়না বলে ভিটামিন সমৃদ্ধ এ রসালো ফলের কদর বাড়ছে দেশ-বিদেশ। সময়ের বিবর্তনে উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের কিসমত রড়ভাগ, দক্ষিণ রড়ভাগ, উত্তর বড়ভাগ, ইয়ারপুর, বীরপুর, বাঘবেড়, ফুলহর, পশ্চিমপাড়া, পাঠানটুলা, রামগোপালপুর ইউনিয়নের দত্তপাড়া, ভবানীপুর, পশ্চিমপাড়া, মাওহা ইউনিয়নের কুমরী, নহাটা, ভূটিয়ারকোনা সহ উপজেলার প্রায় শতাধিক স্থানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এ লটকন চাষ শুরু হয়েছে। জানা গেছে এ মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ২কোটি টাকার লটকন বিক্রি হবে।
বোকাইনগর ইউনিয়নের বড়ভাগ গ্রামের কৃষক হাসিম উদ্দিন এ প্রতিনিধিকে জানান, তাঁর পরিবারের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে বাড়ির পেছনের জঙ্গলে প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেওয়া এ লটকন। তিনি জানান, জঙ্গলের ভিতরে জন্ম নেয়া এ লটকন উৎপাদনে কোন খরচ ছাড়াই প্রতিবছর প্রায় লক্ষাধিক টাকার লটকন বিক্রি করেন তিনি। দাড়িয়াপুর গ্রামের সিরাজুল, বাচ্চু ওয়াজেদ, পাঠানঠুলা গ্রামের আলমগীর সহ স্থানীয় অনেক কৃষকের সংসারের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে এ লটকন। অযতœ আর অবহেলায় প্রাকৃতিক ভাবে এ লটকন জঙ্গলের ভিতরে জন্ম নিলেও ইয়ারপুর গ্রামের কৃষক মোঃ আঃ হেলিম জানান, কম খরচে অধিক লাভবান হয়েছেন তিনি এ লটকন চাষে। কেবল জৈব সার ব্যবহার করে ২০শতাংশ জমিতি হাইব্রীড জাতের ২‘শ লটকনের চারা লাগিয়ে লাভবান হয়েছেন তিনি।
সহনাটি ইউনিয়নের ঘাটেরকোনা গ্রামের লটকন বেপারী সিরাজ মিয়া জানান, লটকনের কদর বাড়ার সাথে সাথে এর দামও অনেক বেড়েছে। দেশের বাহিরে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও এ লটকন রপ্তানী হচ্ছে।
Discussion about this post