“ত্রাণ দান বা করুণা নয়-দুর্গত মানুষের অধিকার” বিশ্বব্যাপী শ্লোগানটি প্রচলিত হলেও বিগত ২ মাস ধরে ককসবাজার জেলার চকরিয়া ও এর সন্নিহিত এলাকা সমুহ জলমগ্ন। রাস্তাঘাট, কৃষি ফসল ও জীবন জীবিকা মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও জনগনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও মাননীয় প্রধান মন্ত্রী মনোনিত দু’জন সাংসাদই এলাকার জনগনের দুঃখ দুর্দশা দেখার জন্য আসেনি। ফলে বন্যাদুর্গত মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করলেও তাদেরকে দেখার এবং তাদের দুঃখ দুর্দশার কথা সরকারের কাছে পৌঁছানোর কেউ নেই। সেকারনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনটি পাশ হলে এটি দুর্গত মানুষের অধিকার রক্ষায় ভুমিকা পালন করতে পারবে।
০২ আগষ্ঠ’১২ইং বিকালে ককসবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলা পরিষদ হল মোহনায় অনুষ্ঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন পাশ ও কার্যকর করার দাবিতে তৃণমূল পর্যায়ে পরামর্শ সভায় বক্তারা উপরোক্ত মন্ত্য করেন। অক্সফাম, ইবিসি’র সহায়তায় আইএসডিই বাংলাদেশ আয়োজিত পরামর্শ সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদদের সাধারন সম্পাদক এস এম মঞ্জুর হোসেন চৌধুরী। সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি খন্দকার জাকির হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এস এম জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব বাকী বিল্লাহ, উপজেলা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির টীম লিডার ও জেলা আওয়ামীলীগের ত্রান সম্পাদক নুরুল আবচার, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার হাজী বশিরুল আলম, উপজেলা ইউপি চেয়ারম্যান এসোসিয়েশনের সভাপতি ও বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান এটিএম জিয়াউদ্দীন চৌধুরী জিয়া। আইএসডিই বাংলাদেশ’র নির্বাহী পরিচালক এস এম নাজের হোসাইন সভায় মুল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। আইএসডিই বাংলাদেশের কর্মসুচী ব্যবস্থাপক মোঃ গিয়াস উদ্দীন ও শেখ আজাদ কামাল টিপুর সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশনেন বিএমচর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব বদিউল আলম, পুর্ব বড় ভেওলা ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইব্রাহিম খলিল, খুটাখালী ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান জন্নাতুল ফেরদৌস, চকরিয়া আইনজীবি সমিতির সাবেক সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট লুৎফুল কবির, অ্যাডভোকেট ওমর আলী, উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্ঠান ঐক্য পরিষদের নেতা এম আর চৌধুরী, নারী নেত্রী জন্নাতুল বকেয়া রেখা প্রমুখ।
তৃণমূল পরামর্শ সভায় বক্তারা বলেন ভৌগলিক অবস্থানগত কারনেই বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ এবং দুর্যোগের প্রকৃতি এক অঞ্চল ভেধে ভিন্নতা রয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদের উপর অধিক নির্ভরশীলতা, জনসংখ্যার আধিক্য, সম্পদের অসম ব্ন্টন, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা, অব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কারনে এখানকার জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ মারাত্মকভাবে বিপন্ন। প্রাকৃতিক বিভিন্ন বিপর্যয় এ বিপন্নতাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষত নদী ও উপকূলীয় ভাঙন, পাহাড়ী ঢল, সাইক্লোন, পাহাড় ধ্বংস, অতিবৃষ্ঠি, সাগরে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, লবনাক্ততা বৃদ্ধি, অকাল বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছাসের মতো ঘটনার কারনে প্রতিবছর যে পরিমান মানুষ চরম দরিদ্র ও সর্বহারায় পরিনত হন তার সংখ্যা অকল্পনীয়। ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। জাতিসংঘের ‘মর্টালিটি রিস্ক ইনডেক্স’ অনুযায়ী ভূমিকম্প, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও ভূমিধ্বসের কারনে সবচেয়ে বিপন্ন দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ শীর্ষে। আর এ কারনেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন প্রনয়ন করা দরকার। তাই জীবন, জীবিকা ও সম্পদের নিরাপত্তা দিন ব্যাপক হুমকির বিপন্নতার মোকাবেলা ও আভ্যন্তরীণ ব্যাপক প্রস্তুতিই দুর্যোগের ক্ষতি হ্রাসে আভ্যন্তরীণ প্রস্তুতির অত্যাবশ্যক অনেকগুলো দিকের একটি হলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা। বক্তাগন প্রস্তাবিত খসড়া আইনটি নিয়ে তৃনমুল পর্যায়ে বিস্তারিত আলোচনার দাবী জানান। একই সাথে ভৌগলিক অবস্থান ও স্থানীয় চাহিদা প্রেক্ষিতে আইনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের বিধান রাখা, দুর্যোগ প্রস্তুতি ও ব্যবস্থাপনায় যে কোন অনিয়মে জড়িত যে কারো বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের বিধান থাকা জরুরী বলে মতপ্রকাশ করেন।
সভায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি মানবসৃষ্ঠ দুর্যোগের ব্যবস্থাপনায়ও বিধান তৈরী করা দরকার। রাজনৈতিক দলের ব্যানারে পাহাড় কাটা, বৃক্ষ নিধন, চিংডি জমি দখলের মতো পরিবেশ ও প্রতিবেশের ধ্বংস করার জন্য একটি মহল সব সময় সক্রিয় থাকে। যা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন দমনে অনেক সময় প্রতিবন্ধকতার বাধার সম্মুখীন হয়। সেকারনে জলবায়ুর উষ্ণতায় পরিবর্তন ঝুুঁকির মধ্যে ককসবাজার উপকুলে প্রতিনিয়ত হুমকি বাড়ছে।
তৃনমুল পরামর্শ সভায় রাজনৈতক দলের নেতা কর্মী, ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার, নারী নেত্রী, আইনজীবি, সাংবাদিক, সমাজ কর্মী, সরকারী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদকঃ মোঃ গিয়াস উদ্দীন
উর্ধ্বতন কর্মসুচী ব্যবস্থাপক, আইএসডিই বাংলাদেশ চকরিয়া।
Discussion about this post