ড্রাইভারদের মোবাইল ফোনে কথা বলার কারণে হরহামেশাই দুর্ঘটনা ঘটছে। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অর্ধশতাধিক ছাত্রের প্রাণহানি, এটিএন নিউজ এর সিইও মিশুক মুনিরের প্রাণহানি ও কালের কণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার নিখিল ভদ্রের সড়ক দুর্ঘটনায় অঙ্গহানির ঘটনার পর থেকে সারা দেশে ট্রাফিক পুলিশও কিছুটা সক্রিয় হয়েছেন। এ বিষয়ে প্রায়ই সভা, সমাবেশ, সেমিনার, মানববন্ধন ও সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান হচ্ছে। তারপরও চলন্ত গাড়িতে মোবাইল ফোনে কথা বন্ধ করা যাচ্ছেনা। বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন অথবা হেডফোনে কথা বলাকে ২০০৭ সালের মোটরযান আইনের ১৪০ ধারা অনুযায়ী সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এই আইন অমান্য করলে চালকের এক মাসের কারাদন্ড অথবা ৫০০ টাকা জারিমানা অথবা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। এই বিধি-বিধানের কথা ড্রাইভিং শেখার সময় জানানো হয় বলে জানান বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ড্রাইভারদের অধিকাংশই এই আইন সম্বন্ধে তেমন কিছুই জানেন না। গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা অপরাধ -এটা তারা জানেন। কিন্তু এ অপরাধের শাস্তি কি তা চালকরা জানেন না বলে জানান। সায়েদাবাদ থেকে ছেড়ে আসা তিশা পরিবহনের বাসচালক গিয়াসউদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা অন্যায় জানি। কিন্তু এ অন্যায়ের কি শাস্তি তা জানা নেই। ড্রাইভিং শেখার সময় এ বিষয়ে কিছু জেনেছেন কি-না জানতে চাইলে বলেন, আমরা এ ড্রাইভিং লাইনের লোক। আমাদের পরীক্ষা দেওন লাগেনা। ওস্তাদকে টাকা দিছি। টার্মিনালে এসে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়া গেছে। গাজীপুর থেকে থেকে ছেড়ে আসা বলাকা পরিবহনের বাসের ড্রাইভার মো. কামালের সাথে কথা হয় রাজধানীর মালিবাগের সিআইডি অফিসের সামনে। তিনি বলেন, গাড়ি চালানোর সময় স্টিয়ারিংয়ে বসে মোবাইল ফোনে কথা বলা অপরাধ। বেশি দরকার না হলে কথা বলি না, কিন্তু এর শাস্তি কি জানি না। এ নিয়ে কখনো জরিমানা হয়নি।। তিনিও জানান, তার ড্রাইভিং লাইসেন্স বৈধ। তবে এজন্য তাকে ড্রাইভিং পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স নিতে হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরটিএর জনৈক কর্মকর্তা জানান, বিআরটিএ-তে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া এবং নেয়া উভয় ক্ষেত্রেই দুর্নীতি বেশি কাজ করে। নামমাত্র ড্রাইভিং জানা থাকলেই টাকার বিনিময়ে চালকরা লাইসেন্স পেয়ে যান। যার ফলে এসব চালকদের কেউই গাড়ী চালানোর সঠিক নিয়ম-কানুন খুব একটা জানেন না। পেশাদার চালক ছাড়াও সৌখিন প্রাইভেট কার চালকরাও ড্রাইভিং এর নিয়ম-কানুন সম্পর্কে তেমন ওয়াকিবহাল নন। মহাখালী ডিওএইচএসের একটি বেসরকারি গ্র�প অব কোম্পানীর কর্মকর্তা ফিরোজ মাহমুদ ১৬ বছর ধরে নিজেই গাড়ি চালান বলে জানান। তিনিও মোবাইল ফোনে কথা বলার আইন সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানেন না। তিনিও অবৈধভাবে লাইসেন্স নিয়েছেন। তবে এখন তিনি গাড়ি ভালোই চালান বলে জানান। কোম্পানীর ব্যস্ত কর্মকর্তা হওয়ায় তাকে গাড়ি চালানো অবস্থায় ফোন রিসিভ করতে হয়। তবে তিনি স্বীকার করেন, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা ঠিক না। গাড়ী চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলার শাস্তি কঠোর করে তার সঠিক প্রয়োগ হওয়া উচিত। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) এর চেয়ারম্যান জানান, মোবাইল ফোনে কথা বলার অপরাধে জরিমানা করা হচ্ছে। সচেতনতা বাড়াতে আমরা প্রতিমাসে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞাপনও দিচ্ছি। এ বিষয়ে এ পর্যন্ত ৪০টি জেলায় গিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করেছি। তিনি বলেন, আমাদের সদিচ্ছা আছে তবে জনসাধারণ একটু সচেতন হলেই এর ব্যবহার বন্ধ হবে। গাড়ী চালানো অবস্থায় মোবাইল চালকদের মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় যাত্রীরা উদ্যোগী হলে খবই দ্রুত এটি বন্ধ হবে বলে তিনি মনে করেন। ট্রাফিকের দক্ষিণ জোনের উপ কমিশনার জানান, আইন আছে তবে তার প্রয়োগ ঠিকমত ছিল না। মিরসরাইয়ের ঘটনার পর আমরা রাজধানীতে এ বিষয়ে অভিযান চালিয়েছিলাম। খুবই ভাল ফল পাওয়া গিয়েছিল। এটিএন নিউজ এর সিইও মিশুক মুনির ও কালের কণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার নিখিল ভদ্রের ঘটনার পর থেকে সারা দেশে ট্রাফিক পুলিশও সক্রিয় হয়েছেন। এক্ষেত্রে আমরা মোবাইল ফোনটি সিজ করে নেই। এরপর গাড়ির কাগজপত্র জব্দ করে মামলা দিই। তবে তিনি এ বিষয়টিকে ট্রাফিক পুলিশের �রুটিন ওয়ার্ক� করার উপর জোর দেন।
Discussion about this post