খুব আশা নিয়ে মিলিওনার বাবার অফিসে গিয়েছিলেন- একটা পার্ট টাইম চাকরির জন্য। বাপ ছেলেকে তাঁর প্রতিষ্ঠানে চাকুরি দিতে সরাসরি প্রত্যাখান করেন। আশাহত হয়ে ছেলেটি সাত মাইল দূরে এক পত্রিকা অফিসে কাজ নেয়। পিতা তাকে তাঁর গাড়িতো দেন নি বরং একটা বাইসাইকেলও কিনে দেননি। তাই সাত মাইল পথ তাকে দৌড়ে অথবা হেঁটে পত্রিকা অফিসে যেতে হতো। ছেঁড়া জুতো পরে স্কুলে যেতো বলে বন্ধরা হাসি-তামাশা করতো। তাই, একদিন বাপকে না বলে বাপের জুতো পরে স্কুলে গেলে – পিতা খুব মনক্ষুণ্ন হন। বলেছিলেন-আগামী ক্রিসমাসের আগে কোনো জুতো কিনে দেয়া যাবেনা।
হাইস্কুল পাশের পর ছেলে পিতাকে অনুরোধ করলো- একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার করার জন্য সুপারিশ করতে। একটা ভালো ডোনেশন বিশ্ববিদ্যালয়ে দিলে ভর্তি সহজ হয়। যে পিতা নিজের জুতো পরে স্কুলে যাওয়ায় বকা দেন-সেই পিতা ডোনেশান দিয়ে ছেলেকে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাবেন? এখানে প্রত্যাখাত হয়ে ছেলেটি একটা লোকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। পাশ করে পেশাগত দিক দিয়ে ভালো সুবিধা করতে না পেরে সেনাবাহিনীর একেবারে রিজার্ভ সৈনিক হিসাবে যোগ দেন। সেখানে কাটে সাত বছর। সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থায় আবারো ভর্তির প্রস্তুতি নেন এবং নিজের যোগ্যতায় স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তারপর শুরু হয় ইতিহাস। পাশ করে হন্য হয়ে আর চাকুরীর পেছনে ছুটেন নি। জুতোর ফ্যাক্টরিতে বন্ধু বিল বাওয়ারম্যানের সাথে দিনে ষোল ঘন্টা করে কাজ করে বিজন্যাস পাইওনীয়ার হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেন।
বর্তমানে পৃথিবীর ১৫ তম ধনী ব্যক্তি এবং ২৪.৪ বিলিয়ন ডলারের মালিক। যে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতে বাপের সুপারিশ পাননি-সেই স্টানফোর্ডেই ডোনেশন করেছেন- ৭০৫ মিলিয়ন ডলার। একদিন ছেড়াজুতো পরে স্কুলে যাওয়ায় হাসিতামাশা আর বাপের বকুনি খাওয়া সেই ছেলেটি আজকের দুনিয়ার বিখ্যাত জুতো কোম্পানি নাইকির মালিক-ফিল নাইট । ফিল নাইট বলেন-সব সাফল্যের জন্য বাপের কাছে ঋণি। সেদিন শুধু চেহারা দেখে নিজের পুত্র হিসাবে স্বজনপ্রীতি করে বাপের অফিসে চাকুরি দিলে, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও স্টানফোর্ডে ভর্তির জন্য সুপারিশ করলে-আর বিলাসী জীবনের প্রলোভনে জড়িয়ে পড়লে -এই অবস্থায় কোনোদিনও আসতে পারতাম না।
বাবা শিখিয়েছিলেন- যার যতটুকু যোগ্যতা, তার ততটুকুই প্রাপ্য। যোগ্যতার বাইরে বেশী কিছু প্রত্যাশা করা হলো আত্মপ্রবঞ্চনা। রাস্তা যতই সুন্দর হোক কিন্তু নিজের পায়ে জোর না থাকলে সেই রাস্তা কোনোদিন দৌড়ে শেষ করে যায়না। ফিল নাইট বলেন -ছেঁড়াজুতো পায়ে সাত মাইল পথ দৌড়াতে দৌড়াতে যতবারই হোঁচট খেয়েছি ঠিক ততবারই নিজের ভিতর সাফল্যের অনুপ্রেরণা পেয়েছি। জুতো ঠিক যেভাবে ছিঁড়েছিলো সেই ছেঁড়া অংশটুকুর আদলেই নাইকির লগো বানিয়েছি যা অনেকটা দেখতে গ্রিক বিজয়ী দেবতার সিম্বল নাইকের ডানার মতো।
জীবনের কোনো অভিজ্ঞতাই ফেলনা নয়, এমনকি এক জোড়া ছেঁড়া জুতোও হতে পারে সাফল্যের এক বিশাল অনুপ্রেরণা।
( কার্টেসি: Dr-Tabassum Urme Roza)
Discussion about this post