ঢাকা, ১৯ জানুয়ারি: ডলারের দর বাড়ায় ডিসেম্বরের ন্যায় জানুয়ারিতেও রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক হাওয়া। ডিসেম্বরে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আসার পর জানুয়ারির ১৩ তারিখ পর্যন্ত প্রবাসী বাংলাদেশীরা ৫৪ কোটি ৪১ লাখ ডলার বা তার সমপরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বাড়লেও নভেম্বরে রেমিট্যান্স কমে যায়। তবে রেমিট্যান্স বেশি আসার কারণ হিসেবে ডলারের উচ্চমূল্যকে ভাবা হচ্ছে। বর্তমান যে প্রবাহ রয়েছে তাতে মাস শেষে নতুন রেকর্ড গড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত অর্থবছরের জানুয়ারি মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ৯৭ কোটি ডলার। আর চলতি জানুয়ারির ১৩ তারিখ পর্যন্ত এসেছে ৫৪ কোটি ৪১ লাখ ডলার। প্রবাসীরা দেশে ডলারের বিপরীতে বেশি টাকা পাওয়ায় রেমিট্যান্স পাঠানো বাড়িয়ে দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ থেকে প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে এসব জানা যায়।
বাংলাদেশী এক পরিবারের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুবাইতে কর্মরত এক বাংলাদেশী প্রতিমাসে এক হাজার ডলার বেতন পান। তিনি প্রতিমাসে ৫০০ ডলার দেশে পাঠাতেন। ৩০০ ডলার নিজের দৈনন্দিন ব্যয়ের জন্য রাখতেন এবং বাকি ২০০ ডলার দুবাইতে সঞ্চয় করতেন। কিন্তু এখন সে হিসেব পাল্টে গেছে। বাংলাদেশে ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ঐ শ্রমিক ৮০০ ডলারই দেশে পাঠাচ্ছেন। এতে তার দৈনন্দিন ব্যয় কমিয়ে আনছেন এবং দুবাইতে যে সঞ্চয় করতেন তা এখন করছেন না। এছাড়াও গচ্ছিত অনেক ডলারও দেশে পাঠাচ্ছেন অনেকে।
গত ডিসেম্বর মাসে ১১৪ কোটি ৪৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। নভেম্বর মাসে ৯১ কোটি ৫৪ লাখ ডলার বা সমপরিমাণ মূল্যে বৈদেশিক মুদ্রা আসে। আর অক্টোবর মাসে এসেছিল ১০৩ কোটি ৯৪ লাখ ডলার।
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ ইতিবাচক থাকলেও নভেম্বর মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে। চলতি ডিসেম্বর মাসে প্রথম দশকের মতোই রেমিট্যান্স পাঠানোর ধারা অব্যাহত থাকলে এর পরিমাণ কিছু বাড়বে।
গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে ১৫ কোটি ৮২ লাখ, আগস্ট মাসে ১৭ কোটি ৭৮ লাখ, সেপ্টেম্বর মাসে এক কোটি ৭৭ লাখ এবং অক্টোবর মাসে ১১ কোটি ৫৬ লাখ ডলার বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল। কিন্তু নভেম্বর মাসে সে ধারার ব্যতয় ঘটে।
বিশেষজ্ঞদের ধারনা, মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সরকারের সঙ্গে মুসলিম দেশগুলোর সম্পর্ক ভাল না থাকায় শ্রমবাজার সম্প্রসারিত হতে পারছে না। সৌদি আরব, মালেশিয়াসহ কয়েকটি দেশে শ্রমবাজার সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেব অনুয়ায়ী, গত অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছে এক হাজার ১৬৫ কোটি তিন লাখ ডলার। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এসেছিল প্রায় এক হাজার ১০০ কোটি ডলার। সে হিসেবে গত অর্থবছরে আয় বেশি হয়েছিল ছয় শতাংশ।
পূর্বের কয়েক বছরের তুলনায় ২০১০-১১ অর্থবছরে রেমিট্যান্স অনেক কম এসেছিল। চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স আয় বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রচারণামূলক ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়ার পরও বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আসেনি।
জানুয়ারির ১৩ তারিখ পর্যন্ত ৩০টি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৩৯ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব মালিকানাধীন চার ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ১৩ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। নয়টি বিদেশী ব্যাংক থেকে এসেছে ৫৭ লাখ ডলার। আর বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৫২ লাখ ডলার বা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।
Discussion about this post