গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের প্রযুক্তি অঙ্গনে ছিলো একটি হাহাকার- মোবাইল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। এ প্রযুক্তির জনপ্রিয় সংস্করণ থ্রিজি আসবে আসবে করেও আসছিলোনা। বিটিআরসি এবং মোবাইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নানা জটিলতায় আটকে ছিলো বাংলাদেশে থ্রিজি’র আগমন। সেই সাথে বেড়ে চলছিলো দ্রুতগতির ইন্টারনেটের অভাবে নানা ভোগান্তিতে পড়া মানুষের অপেক্ষা। তবে সুখবর হলো অপেক্ষা ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। সম্প্রতি থ্রিজি সেবা প্রদানের জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে দেশীয় মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিটকসহ আরো চারটি বড় প্রতিষ্ঠানকে। এর মধ্যে রবি, গ্রামীণফোন ও এয়ারটেল স্বল্পপরিসরে থ্রিজি সেবা শুরুও করে দিয়েছে। বাংলালিংকও খুব দ্রুতই শুরু করবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই অক্টোবর মাসের মধ্যেই বৃহৎ পরিসরে সেবা ছড়িয়ে দিবে।
তো যে থ্রিজি নিয়ে এতো অপেক্ষা- তা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নেই অনেকের। বহু মানুষ জানেনই না এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে কী কী করা সম্ভব।
আসুন জেনে নেই, থ্রিজি কী? থ্রিজি বলতে মূলত তৃতীয় প্রজন্মের তারহীন নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি বোঝায়। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেসেকেন্ডপ্রতি সর্বোচ্চ গতিতে তথ্য আদান প্রদান করা যায়। যা তারযুক্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সবচেয়ে সেরা বিকল্প। সম্প্রতি এ হার আরো বাড়ানো হয়েছে। ফলে তথ্য আদান প্রদানের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
থ্রিজি প্রযুক্তির উদ্ভাবন হয় আশির দশকের প্রথম দিকে। এরপর দীর্ঘ গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর থ্রিজি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের উপযোগী হয়। থ্রিজি প্রযুক্তির মাধ্যমেই প্রথমবার তারযুক্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের কার্যকর বিকল্প পাওয়া যায়। সেই সাথে ব্যাপক পরিবর্তন আসে আধুনিক বিশ্বের যোগাযোগ ব্যবস্থায়।
থ্রিজি প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগ ও ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে অনলাইনে ভিডিও দেখা যায়, কোনো রকম অপেক্ষা করা ছাড়া অডিও গান শোনা যায়, বড় আকারের ফাইল নির্বিঘ্নে আদান প্রদান করা সম্ভব হয়। সেই সাথে আপলোড ও ডাউনলোডেও ধীরগতির ইন্টারনেটের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়।
থ্রিজি প্রযুক্তি শুরু হওয়ায় আরো পাওয়া যাবে- একই সাথে ভিডিও ও অডিও কল করার সুবিধা। যাতে ভিডিও ও কন্ঠস্বরের মান থাকবে সবচেয়ে উন্নত। থ্রিজি ক্ষমতা সম্পন্ন স্মার্টফোন ব্যবহার করলে সহজেই হাতের মুঠোয় রাখা যাবে সারাটা পৃথিবী- পড়া যাবে খবর, সরাসরি দেখা যাবে টিভি। যাতে অক্ষুণ্ন থাকবে টিভি চিত্রের গুণ ও মান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংযুক্ত থাকা যাবে কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই। স্মার্ট ফোন থেকে ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক মেইলও আদান প্রদান করা যাবে দারুণ গতিতে। এক কথায় স্মার্টফোনের সবচেয়ে ভালো ব্যবহার সম্ভব হবে থ্রিজি প্রযুক্তির মাধ্যমে।
আরো একটি কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, থ্রিজির পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে বদলে যাবে পুরো দেশের চিত্র। তথ্য প্রযুক্তিখাতে কাজ করা এ দেশের তথ্যপ্রযুক্তিবিদরা উপার্জন করতে পারবেন বহু বৈদেশিক মুদ্রা।
স্মার্টফোনে থ্রিজি সেবা উপভোগ করতে হলে মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে থ্রিজি সংযোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে পুরোনো সিম পরিবর্তন করার কোনো প্রয়োজন হবে না। শুধুমাত্র সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম মেনে থ্রিজি সচল করতে হবে। সেই সাথে সঠিক ভাবে ফোনের সেটিংসও সেট করে নিতে হবে। তারও আগে নিশ্চিত হতে হবে যে, স্মার্টফোনটি সঠিকভাবে থ্রিজির সর্বশেষ সংস্করণ সমর্থন করে কি না।
Discussion about this post