ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সস্তা পাবলিসিটির মাধ্যমে শুরু করা অনেক প্রকল্পই হারিয়ে গেছে। তবে ‘দ্য অপ্টিমিস্টস’ সগৌরবে মানবতার সেবায় ১৯ বছর অতিক্রম করলো। এ সময়ে বাংলাদেশের ২৪ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের গরিবের চেয়েও গরিব পরিবারের ১০ হাজারের অধিক সন্তানকে শিক্ষিত করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, প্রশাসক, ব্যাংক-বীমা-কোম্পানীর ম্যানেজার হয়েছেন।
সর্বশেষ গত বছরও ১৩ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী স্কুল-কলেজে পড়ছিল প্রবাসীদের অনুদান এবং ‘দ্য অপ্টিমিস্টস’র দিক-নির্দেশনায়। এটাই সংশ্লিষ্টদের শান্তনা এবং আত্মতৃপ্তি।
‘মানবতার জন্যে প্রবাসীরা’-এমন স্লোগানে জড়ো হওয়া আমেরিকার কিছু মানুষ গত উইকেন্ডেও ৬০ হাজার ডলার প্রদান করেছেন। আর এ অর্থ সংগৃহীত হয় রবিবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে বেলজিনো পার্টি হলে সংস্থাটির ‘১৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা এবং ফান্ড রেইজিং’র অনুষ্ঠানে। আয়োজনটি সাদামাটা হলেও কাজকর্মের মধ্য দিয়ে সকলের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে। যারা এসেছিলেন তারাও অত্যন্ত নীরবে মহৎ এ কর্মে অর্থ প্রদান করেছেন।
উল্লেখ্য, এই সংস্থার মাধ্যমে ‘৪ বছর মেয়াদি ‘চাইল্ড স্পন্সরশিপ প্রোগাম’ রয়েছে। এর অধীনে একেকজন ছাত্র-ছাত্রীর জন্যে বছরে দিতে হয় ১৩৫ ডলার করে। ৬ বছর মেয়াদি প্রোগ্রামের নাম হলো ‘স্পেশাল স্পন্সরশিপ প্রোগ্রাম’। আন্ডার গ্র্যাজুয়েট, গ্র্যাজুয়েট অথবা প্রফেশনাল ডিগ্রি ক্যান্ডিডেটদের জন্যে বছরে লাগে ৩১০ ডলার করে। উভয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা কখন কী করছে তা অবলোকন করা যায় যুক্তরাষ্ট্রে বসেই। কারণ, প্রতিটি এলাকাতেই রয়েছেন এই সংস্থার ভলান্টিয়ার। তারাই অনলাইন অথবা টেলিফোনে বিস্তারিত খোঁজ-খবর রাখেন। স্পন্সরকারী নিজেও কথা বলতে পারেন তার দেয়া অর্থে অধ্যয়নকারীদের সাথে।
উল্লেখ্য, অনেকেই একাধিক ছাত্র-ছাত্রীকে স্পন্সর করছেন। এমনও রয়েছেন যারা শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীর স্পন্সর। এভাবেই কাজ করছে ‘দ্য অপ্টিমিস্টস’। সংস্থাটির চেয়ারম্যান সরোয়ার বি সালাম অনুষ্ঠানের মঞ্চে উঠেন ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. ফেরদৌস খন্দকারকে নিয়ে।
এ সময় সাদা মনের মানুষের অন্যতম সিপিএ সালাম স্বাগত বক্তব্যে বলেন, দ্য অপ্টিমিস্টস কাজ করছে মহৎপ্রাণের প্রবাসীদের সহযোগিতায়। এটিকে স্বচ্ছ্বভাবে পরিচালনায় রয়েছেন একদল ভলান্টিয়ার। দেশের মানুষের কল্যাণে আগ্রহীরা এই সংস্থার সাথে যতবেশী জড়িত হবেন তত লাভবান হবে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এ সময় ডা. ফেরদৌস খন্দকার সংস্থাটির চলমান কার্যক্রমের আলোকপাত করেন এবং স্পন্সরদের ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠান শুরু হয় সঙ্গীত পরিষদের কাবেরী দাসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে।
সঞ্চালনায় ছিলেন ফাতেমা সাহাব রুমা এবং মিনহাজ আহমেদ সাম্মু। যুক্তরাজ্য থেকে আসা সাবিরুল ইসলাম তার জাদুকরি বক্তব্যে সকলকে আপ্লুত করেন সেবামূলক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে প্রকারান্তরে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্যে। বাংলাদেশের কার্যবিবরণী উপস্থাপিত হয় সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট শাহেদ ইসলামের মাধ্যমে।
দ্য অপ্টিমিস্টের এগিয়ে চলা আলোকে উপস্থিত সুধীজনের সমন্বয়ে এক আলোচনা হয়। সাঈদ জাকি হোসেন, জহিরুল ইসলাম, হাবিব নূর প্রমুখ অংশ নেন। সকলেই সেবামূলক এ কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার সংকল্প ব্যক্ত করেন এবং এখনও যারা স্পন্সর হননি, তারা যেন এগিয়ে আসেন-সে আহবান জানান।
কমিউনিটির বিপুলসংখ্যক নতুন প্রজন্ম ছিল এ অনুষ্ঠানের প্রাণ এবং তারাও ‘দ্য অপ্টিমিস্টস’র কার্যক্রমে ক্রমান্বয়ে আকৃষ্ট হচ্ছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ্য, এই প্রবাসে গত দুই দশকে এ ধরনের অনেক সংগঠন/সংস্থার আবির্ভাব ঘটলেও টিকে রয়েছে হাতে গোণা কয়েকটি। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে ‘দ্য অপ্টিমিস্টস’ শীর্ষে রয়েছে নীরবে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবার মধ্য নিয়ে। অনুষ্ঠানে কমিউনিটির সর্বস্তরে প্রতিনিধিত্বকারীদের সমাগম ঘটেছিল।
Discussion about this post