জহুরুল ইসলাম :পবিত্র রমজান ও ধর্মীয় উৎসবকে সামনে রেখে ভেজাল, নিম্নমানের ভোগ্যপণ্য, বিষাক্ত উপাদানে বিভিন্ন খাবার তৈরি, ফলমূলে রং ফরমালিন মিশ্রণ সারাবছরই চললেও তার পরিধি বিস্তৃত হয়। রমজান এবং ঈদকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই চট্টগ্রাম মহানগর ও আশেপাশের উপজেলায় ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য উৎপাদনের দিবারাত্র আয়োজন সম্পন্ন করে চলেছে শতশত কারখানা। ভেজাল, নকল উপকরণের সাথে নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে উৎপাদিত হচ্ছে বাংলা সেমাই, লাচ্ছা সেমাই, নানা রকমের ভেজাল ঘি, নুডলস, মসলা, ময়দা, আটা, ভোজ্যতেল, কেক, পাউরুটি এসব। সেই সাথে ফলমূল, মাছ, শুটকিসহ নানা খাদ্যপণ্যে মেশানো হচ্ছে কার্বাইড, ফরমালিন, মেয়াদউত্তীর্ণ কাঁচামাল, সুতা রাঙানোর বিষাক্ত রঙ, ভেজাল পাম তেল, পঁচা ডিম এইসব ক্ষতিকর জিনিস। কিন্তু কিছু অনিয়মিত ও হাতেগোনা ভ্রাম্যমান অভিযান দিয়ে ভেজাল ও নিম্নমানের পণ্য উৎপাদন বন্ধ করা সম্ভব নয়। জেলা প্রশাসন, বিএসটিআই, সিটি কর্পোরেশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ ক্যাব প্রতিনিধিসহ সকল প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত ভাবে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও ভেজাল প্রতিরোধকে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের অন্যতম অগ্রাধিকার কাজ হিসাবে বিবেচনা করা, ভোক্তা অধিকার লংগিত হলে তাৎক্ষনিক প্রতিকারের জন্য হেলপ লাইন চালু করার দাবী করা হয়। নতুবা আগামীতে বাংলাদেশ একটি পঙ্গু জাতিতে পরিনত হবে। ২৩ জুলাই নগরীর সিএসডিএফ মিলনায়তনে পবিত্র রমজান উপলক্ষে চলমান ভেজাল বিরোধী অভিযান জোরদার, মাছ ও ফলমুলে ফরমালিন ব্যবহার বন্ধ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সহনীয় পর্যায়ে রাখা এবং ভোক্তা অধিকার সুরক্ষার লক্ষ্যে ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ বাস্তবায়নে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এর ব্যবহার বিষয়ে এক সমন্বয় বিভিন্ন বক্তাগন উপরোক্ত মন্তব্য করেন। কনজমুারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ক্যাব) এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সমন্বয় সভায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক(উপ-সচিব) জোবায়ের আহমদের সভাপতিত্বে সভায় আলোচনায় অংশনেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, বিএসটিআই’র প্রতিনিধি আবদুল আজিজ, সিটিকর্পোরেশনের প্রতিনিধি নুরুল কবির, সমাজসেবক ফজলকরিম মাহমুদ, ক্যাব নেতা হাজী আবু তাহের, আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, জানে আলম, ইসমাইল ফারুকী, নারী নেত্রী আবিদা আজাদ, শাহীন আকতার বিউটি প্রমুখ। সভায় বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংগঠন, বাজার মালিক সমিতি, র্যাব, জেলা মৎস্য অফিসের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহন করেন। সভায় বলা হয় জনস্বাস্থ্যকে যারা ঝুঁকির মুখে ফেলছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় এধরনের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। এছাড়াও মজুদ ও প্রয়োজন অতিরিক্ত পণ্য ক্রয় এ প্রবণতা পরিহার এবং মান ও মূল্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতাদের সচেতনতার অভাবে সরকারের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ কর্মসুচী ব্যাহত হচ্ছে। নিয়মিত বাজার মনিটরিং নিয়মিত করা ও সকল বিক্রেতা যাতে মূল্য তালিকা টানানোতে গড়িমসি না করে তা প্রশাসনকে তা কঠোর ভাবে নিশ্চিত করতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও ভেজাল প্রতিরোধকে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ১নং অগ্রাধিকার প্রদান করা, ভোক্তা অধিকার লংগিত হলে তাৎক্ষনিক প্রতিকারের জন্য হেলপ লাইন না থাকায় মানুষ প্রতিনিয়ত ঠকছে এবং প্রতারিত হচ্ছে। একই সাথে সরকারী বিভিন্ন সংস্থা ও আইন প্রয়োগকারী কতৃপক্ষের মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয় না হলে পুরো পক্রিয়াটি মাঠে মারা যাবে। এ ক্ষেত্রে জনগনের নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান হিসাবে চট্টগ্রাম সিটিকর্পোরেশনের ভুমিকা একদম হতাশাজনক বলে সভায় মতপ্রকাশ করা হয়। সভায় নকল, ভেজাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উর্ধ্বগতি প্রতিরোধে স্থানীয় ভাবে বাজার ও মার্কেট কমিটিগুলি স্থানীয় ভাবে তদারিকর নিশ্চিত করা, প্রতিটি বাজার কমিটি জেলা প্রশাসনের কাছে প্রতি মাসে/সপ্তাহে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা প্রদান, বাজারে প্রতিটি দোকানে মুল্য তালিকা প্রদর্শন নিশ্চিত করা, সকল বাজার মালিক সমিতি, আড়তদার, আমদানীকারকদের নিয়ে মাসিক ভিত্তিতে বাজার মনিটরিং সভা আয়োজন, জরিমানার পরিবর্তে জেল করার বিধান চালুর প্রস্তাব করা, ভেজালকারীকে সামাজিকভাবে বয়কট করা, ফরমালিন বা ক্যামিকেল মিশ্রণের উৎসস্থল চিহ্নত হরে মোবাইল কোর্টের মাধ্যেমে উৎস স্থলে নির্মুল করা, নকল ও ভেজাল বিরোধী বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও হিন্দু ধর্মীয় ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে উদ্যোগ নেয়া, মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাস শুরুর পুর্বে নকল ও ভেজাল বিরোধী বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে চিটি প্রদান, জেলা প্রশাসন, র্যাব, বিএসটিআই, সিটিকর্পোরেশন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর থেকে ভেজাল বিরোধী মোবাইল কোর্টের সংখ্যা বাড়ানো, ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ , তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ বিষয়ে আরও জনসচেতনতা সৃষ্ঠিসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়।
Discussion about this post