হাকিকুল ইসলাম (খাকন,বাপসনিঊজ:স্বনামধন্য নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমদ স্মরণে উদীচী যুক্তরাষ্ট্র ও উদীচী স্কুল অব পারফর্মিং আর্টস-এর উদ্যোগে উদীচী স্কুলে বিকেল চারটায় এক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। শোকসভায় সভাপতিত্ব করেন উদীচী স্কুলের বাংলা বিভাগের প্রধান এক সময়ের টিভি প্রযোজক এবং প্রখ্যাত কলাম লেখক হুমায়ূন আহমদের একান্ত ঘনিষ্ট বেলাল বেগ। খবর বাপসনিঊজ.প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এম এ মোমেন। মাত্র একদিনের প্রস্তুতিতে শোকসভায় কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সহ যথেষ্ট সংখ্যক হুমায়ূন ভক্তের উপস্থিতি ছিল। শোকসভায় স্মৃতিচারণ ও লেখকের বিভিন্ন গুণাবলী তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন- উদীচীর সিনিয়র সহসভাপতি সুব্রত বিশ্বাস, প্রবাসী পত্রিকার সাবেক সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ উদীচী স্কুলের গানের শিক্ষক মুত্তালিব বিশ্বাস, অধ্যাপিকা হুসনে আরা বেগম, ফাহিম রেজা নূর, সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান, বাঙালী পত্রিকার সম্পাদক কৌশিক আহমদ, বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী সুবীর নন্দী, প্রধান অতিথি ড. এম এ মোমেন এবং সভাপতি জনাব বেলাল বেগ।
শোকসভার শুরুতে লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। তারপর উদীচীর কর্মকর্তা সাবিনা হাই উর্বি লেখকের জীবনের বিভিন্ন প্রাপ্তি ও উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরে একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ স্মৃতিচারণ করে বলেন, হুমায়ূন আহমদের শেষ ইচ্ছা ছিল বাংলাদেশে একটি ক্যানসার হাসপাতাল নির্মান করা। কিন্তু তার অন্তিম ইচ্ছা আর পূরণ হয়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে হাজার হাজার লোক ক্যান্সারে মারা যান। বিত্তবানরা কলিকাতা, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, ল-ন, আমেরিকা চিকিৎসা করাতে পারেন। কিন্তু সাধারণ ও গরীব মানুষের সেই সামর্থ নেই। আমাদের দেশের হাজার মানুষ বিদেশে থাকেন। আমরা একটু উদ্যোগী হলে এবং সরকারের খানিকটা সদিচ্ছা সংযোজন করলে একটি ক্যান্সার হাসপাতাল করা কোন বিরাট বিষয় নয়। আমরা যদি করতে পারি সেটা দেশের জন্য যেমন মঙ্গলজনক একই সাথে লেখক হুমায়ূন আহমদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো হবে।
মুত্তালিব বিশ্বাস হুমায়ূন আহমদের সাথে কোন এক সময়ের একটি স্মৃতিচারণ করে শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন। একই ভাবে অধ্যাপিকা হুসনে আরা বেগম, ফাহিম রেজা নূর স্মৃতিচারণ করে শ্রদ্ধা প্রকাশ করেন। সাংবাদিক মাহবুবুর রহমান কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন নিউইয়র্কে বিভিন্ন হাসপাতাল রয়েছে। সব হাসপাতালে সমান চিকিৎসা হয় না। হুমায়ূন আহমদ ক্যান্সারে মারা যাননি। তিনি ব্লাড ইনফেকশনে মারা গেছেন এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়।
সাংবাদিক কৌশিক আহমদ বলেন, হুমায়ূন আহমদ বিরাট মাপের লেখক। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, শরৎ চন্দ্রের পর এত খ্যাতি হুমায়ূনই পেয়েছেন। তার লেখায় যুবক যুবতি ভীষণ আলোড়িত হয়েছেন। কিন্তু হুমায়ূন আহমদ সবই করেছেন টাকার জন্য। তিনি দেশের যুব সমাজের জন্য অনেক কিছু করতে পারতেন কিন্তু তিনি তার করেননি। ইচ্ছা করলে তার প্রতি মানুষের যে মোহ শক্তি ছিল তিনি অনেক কিছুই করতে পারতেন। তারপরও তিনি বাংলা সাহিত্যের একজন নন্দিত পুরুষ।
ড. মোমেন তার চিকিৎসায় সরকার ও তার সাহায্য সহযোগিতার বিভিন্ন ঘটনা ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। তিনি বলেন হুমায়ূন আহমদ একজন বিরাট মাপের লেখক ছিলেন যিনি বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়। তিনি আরো বলেন হুমায়ূন আহমদ যখন চিকিৎসার জন্য নিউইয়র্ক আসেন তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলে তাকে জাতিসংঘ মিশনের একজন প্রতিনিধি নিয়োগ করেছিলেন। তিনি তাকে বলেছিলেন, জাতিসংঘে কি হয়, আমরা কি করি তা নিয়ে লেখেন। তিনি তার চিকিৎসা ও চলে যাওয়ার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
সুব্রত বিশ্বাস বলেন, হুমায়ূন আহমদ চলে গেলেন মাত্র ৬৪ বছর বয়সে। এটা নিতান্তই অপূর্ণ বয়সে বলা যায়। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন ‘মরিতে চাহিনা আমি এই সুন্দর ভুবনে’। হুমায়য়ন আহমদের বেলায় পংক্তিটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। কেননা শুনেছি এবং পত্রপত্রিকায় দেখেছি লেখক হুমায়ূন বাঁচার জন্য ব্যাকুল ছিলেন। অপরদিকে মৃত্যু ভয়ে ভীষণ আতঙ্কিত ছিলেন। তারপরও বাস্তব সত্য হলো মরণব্যাধি ক্যান্সার তার জীবন কেড়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, নন্দিত এই লেখক ৭২ সালে ‘নন্দিত নরকে’ লেখা বই দিয়ে তার লেখার যাত্রা শুরু। তার পর তর তর করে এগিয়ে গেছেন অপ্রতিরোধ গতিতে। একদিকে বইছের পর বই লিখেছেন, অপরদিকে তার পাঠক সৃষ্টি করেছেন। তার বই বিক্রির কাটতি ছিল শতকার ৭৫ ভাগ। কোন লেখকের ১ হাজার বই বিক্রি হলে হুমায়ূন আজাদের বই বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার। প্রকাশকরা তার দ্বারে ভিড় জমিয়ে থাকতেন যেকোন ধরণের একটি পা-ুলিপির জন্য। এভাবেই তিনি তার খ্যাতি শীর্ষে নিয়ে গেছেন। তিনি নিজে নিজেকেই প্রকাশ করেছেন। তিনি আরো বলেন তিনি অত্যন্ত স্বাবলীল ভাবে সাহিত্য, নাটক ও চলচ্ছিত্রে বিচরণ করেছেন। তার সৃজনশীল সৃষ্টি কালজয়ী হয়ে থাকবে। তার মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্যের বিরাট ক্ষতি হয়েছে এটা নির্দিধায় বলা চলে। তিনি উদীচীর পক্ষ থেকে তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও তার আত্মার শান্তি কামনা করেন।
ফারুক আযম একটি কবিতা পাঠ করেন এবং জীবন বিশ্বাস তার সাথে কবিতাটি গান গেয়ে শোনান।
পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক ও উদীচী স্কুলের অধ্যক্ষ জীবন বিশ্বাস। জীবন বিশ্বাস বলেন, প্রতিটি মৃত্যুই বেদনার কিন্তু হুমায়ূন আহমদের এই অকাল-প্রয়াণ শুধুই বেদনার নয়, তাঁর এই চলে যাওয়া বাংলার সাহিত্যাকাশে এক গভীর শূণ্যতার সৃষ্টি করবে। তিনি আরো বলেন তাঁর কর্মময় জীবনের সব সৃষ্টিই যে সবার কাছে সমাদৃত হয়েছে সে দাবী ছেড়ে দিলেও একথা আজ অস্বীকার করার উপায় নেই যে তরুনসমাজকে পকড়তে এবং শিখতে অনুপ্রাণিত কওে সাহিত্যাভিমুখী করে গেছেন।
সভাপতি বেলাল বেগ হুমায়ূন আহমদের সাথে দীর্ঘ কর্মকা-ের স্মৃতিচারণ করে বলেন হুমায়ূন অত্যন্ত জনপ্রিয় লেখকই নয় ‘ওরা রাজাকার’ ইত্যাদি নানাবিধ লেখার মাধ্যমে স্বাধীনতাকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার প্রতিভার কোন অন্ত ছিল না। তিনি বলেন বহুমাত্রিক প্রতিভাধর হুমায়ূন তার সৃজনশীল কাজের মধ্যেই আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। তিনি হুমায়ূন আহমদের সাথে বিভিন্ন কাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এক পর্যায় আবেগে আপ্লোত হয়ে পড়েন। বাপসনিঊজ.
Discussion about this post