মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন (সেলিম), নিউইয়র্ক: নন্দিত লেখক, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের প্রথম নামাজে জানাজা শুক্রবার বাদ জুমা নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে স্থানীয় সময় ১১ টার পর থেকে জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার এলাকায় মানুষের ঢল নামে। এসময় জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার সংলগ্ন কয়েকটি সড়কে জান চলাচল বন্ধ কওে দেয়া হয়। জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের বেজমেন্টসহ তিনতলা মসজিদের ভেতর-বাইরে কয়েক হাজার প্রবাসী বাঙালি তার জানাজায় অংশ নেন। মসজিদেরর দ্বিতীয় তলায় কেবলমাত্র নারীদের জন্য জানাজার ব্যবস্থা করা হয়। জানাজায় ইমামতি করেন জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের ইমাম মির্জা আবু জাফর বেগ। এতে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী নারী ও অংশ নেন। অন্যান্যদের মধ্যে জানাজায় হুমায়ূন আহমেদের ছোটভাই ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, আমেরিকার ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড.এ কে আবদুল মোমেন, অন্য প্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
এসময় আমেরিকার ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের বাংলাদেশ সরকার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনির পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করেন। জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. এ কে আবদুল মোমেনও শোক প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তারা তার বিদেহী আত্মার শান্তির জন্য সবাইকে দোয়া করার আহবান জানান।
জানাজা শেষে হুমায়ূন আহমেদকে একনজর দেখার জন্য উপস্থিত মুসল্লীরা হুমরী খেয়ে পড়েন। দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে হুমায়ূন আহমেদকে শেষবারের মত দেখেন তারা।নিবেদন করেন শেষ শ্রদ্ধা। এসময় অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। সর্বস্তরের মানুষের দেখার পর বিকেলে তার মরদেহ আবার জ্যামাইকার ইসলামী ফিউনারেল হোমে নিয়ে যাওয়া হয়।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড.এ কে আবদুল মোমেন, অন্য প্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম ও মুক্তধারার কর্ণধার বিশ্বজিত সাহা জানান, সব ঠিক থাকলে হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ সোমবার সকাল ৯ টায় দেশে পৌঁছাবে। হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ বহনকারী অ্যামিরাটস এয়ার ওয়েজের বিমান ইকে ২০৩ স্থানীয় সময় ২১ জুলাই, শনিবার রাত ১১ টা ২০ মিেিনিট নিউইয়কের্র জে এফ কে বিমান বন্দর থেকে ছেড়ে যাবে। জ্যামাইকার ইসলামী ফিউনারেল হোমে থেকে সরাসরি হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে জে এফকে বিমান বন্দরে। হুমায়ূন আহমেদের মরদেহের সাথে যাচ্ছেন তার স্ত্রী অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, দু’ছেলে নিষাদ ও নিনিত, শাওনের মা তহুরা আলী এমপি, বোন সেজুতি এবং অন্য প্রকাশের মাজহারুল ইসলাম। ড. এ কে আবদুল মোমেন জানান, হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ, তার স্ত্রী অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন এবং দু’ছেলে নিষাদ ও নিনিত এর যাতায়াত খরচ বহন করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল জানান, হুমায়ূন আহমেদকে কোথায় দাফন করা হবে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। গাজীপুরে হুমায়ূনের গড়া নুহাশ পল্লীতে তাকে দাফন করা হতে পারে বলে তার ছোট ভাই আহসান হাবিব জানালেও তিনি বলেন তার দেশে ফেরার পর সবাই মিলে এ বিষয়ে চ’ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ড. নাসরিন হক শুক্রবার রাতে অ্যামিরাটস এয়ার ওয়েজের বিমানে নিউইয়র্কের জে এফ কে থেকে দেশের উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে গেছেন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাতে নিউইয়র্কের ম্যানহাটানের বেলভ্যু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় হুমায়ূন আহমেদের । শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ার এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে বিদায় নিলেন তিনি। বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় এই লেখকের বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর।
Discussion about this post