মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন, নিউইয়র্ক : নিউইয়র্কে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয় একুশে পিঠা উৎসব, উত্তর আমেরিকার বৃহত্তম এ উৎসবে নামে মানুষের ঢল, বাঙালী সংস্কৃতির জয় গান- যুক্তরাষ্ট্রের বাঙালী অধ্যুষিত নিউইয়র্কে ১ এপ্রিল রোববার অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো জমজমাট একুশে পিঠা উৎসবও বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উত্তর আমেরিকার বৃহত্তম এ উৎসবে নামে মানুষের ঢল। বাংলাদেশের গ্রাম বাংলার সংষ্কৃতির ধারক এ পিঠা উৎসবটি পরিণত হয় বাঙালীর মহা মিলন মেলায়। উচ্চারিত হয় বাঙালী সংস্কৃতির জয় গান। বাংলাদেশের জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টেলিভিশন পরিবর্তনের অঙ্গিকার নিয়ে সবসময় সবখানে- এ শ্লোগানকে সামনে নিয়ে দর্শকবান্ধব কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঐতিহ্যবাহী এ পিঠা উৎসবের আয়োজন করে । আমেরিকায় জন্ম নেয়া ও বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের কাছে বাঙালী সংস্কৃতিকে তুলে ধরাই এর অন্যতম লক্ষ্য। রোববার দুপুর ১২ টা থেকে সিটির উডসাইডে অবস্থিত কুইন্স প্যালেসের সুপরিসর মিলনায়তনে বিভিন্ন দেশীয় সাজে সজ্জিত হয়ে বিপুল সংখ্যক বাঙালী পরিবার নানা স্বাদের পিঠা নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন। যোগ দেয় অিন্যান্য কমিউনিটির লোকেরাও। পিঠা উৎসবে বিভিন্ন স্বাদের দেশীয় ঐতিহ্যবাহী মুখরোচক পিঠার প্রাচুর্য দেখা যায়। ভাপা পিঠা, পাটিশাপটা পিঠা, চিতুই পিঠা, জিলাপী পিঠা, রসভরা পিঠা, পুলি পিঠা, নক্সি পিঠা, কলা পিঠা, ফুলঝুরি পিঠা, ভালবাসার পিঠা সহ হরেক রকম মজার মজার পিঠার মৌ মৌ সুবাসে চারদিক ভরপুর করে রাখে। সারি সারি পিঠার স্টল ছাড়াও উৎসবের শোভা বর্ধন করে দেশী শাড়ি, চুড়ি ও গয়না সহ বিভিন্ন ষ্টল। পিঠার এ উৎসব ক্ষনিকের জন্য হলেও বাংলাদেশের শীতকালীন দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেয় প্রবাসীদের। শীত কালে গ্রামের বাড়িতে ভোর বেলার খেজুরের রসের সাথে নানা রকম পিঠার স্বাদ ভুলার নয়। নষ্টালজিক অনুভুতি কিছঝুটা হলেও নিউইয়র্কের বাঙালিরা অনুভব করেছে রোববার।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের। বিশেষ অতিথি ছিলেন নিউইয়র্ক সিটির কম্পট্রলার জন ল্যু ও ভয়েস আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান রোকেয়া হায়দার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একুশে টেলিশিনের যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সমন্বয়কারী দেওয়ান বজলু। অনুষ্ঠানে একুশে পদক পাওয়া দু’যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিশিষ্ট কবি শহীদ কাদরী ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড.মনসুর খানকে বিশেষ সম্মাাননা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের বলেন, নিজ দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে নিজের কৃষ্টি-সংস্কৃতিকে এ ভাবে তুলে ধরে এখানকার নতুন প্রজন্মের সাথে একুশে টেলিভিশন সেতু বন্ধন রচনা করেছে। একুশে টেলিভিশনের এ প্রশংসনীয় উদ্যোগ মাইল ফলক হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, বহুমাত্রিক বাঙালী সংস্কৃতির মধ্যে খাদ্য সংস্কৃতির অন্যতম স্তম্ভ। এর মাধ্যমেও অন্য জাতির কাছে নিজের সংস্কৃতি তুলে ধরা সম্ভব। নিউইয়র্ক সহ যুক্তরাষ্ট্রে যেভাবে পিঠা উৎসবের আয়োজন হচ্ছে, তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। এসব পিঠা উৎসবে বাঙালীরা ছাড়াও অন্যান্য দেশের মানুষের যে আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে, এধারা অব্যাহত থাকলে হয়তো একদিন পিঠাও বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানী পণ্য হিসেবে জায়গা করে নেবে। তিনি দেশজ সংস্কৃতিকে প্রবাসে আরো বেশি বেশি করে তুলে ধরার জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান।
বিশেষ অতিথি নিউইয়র্ক সিটির কম্পট্রলার জন ল্যু এ চমৎকার আয়োজনের জন্য একুশে টেলিভিশন কে ধন্যবাদ জানান। ভয়েস আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান রোকেয়া হায়দার বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা দু’দেশের সংস্কৃতির মধ্যে বড় হচ্ছে। আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। খাবারের মাধ্যমেও যে, নিজের দেশের সংস্কৃতিকে বড় করে তুলে ধরা যায় একুশে পিঠা উৎসব তার স্বাক্ষ্য বহন করলো। পিঠা উৎসবকে বৈচিত্রময় ও ভিন্ন মাত্রা দেয় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ নানান কর্মসূচি। দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত একটানা চলে অনুষ্ঠানমালা। প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা নাচে গানে মাতিয়ে রাখেন আগত দর্শক- শ্রোতাদের। অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতা চিত্রাঙ্কন ও যেমন খুশি তেমন সাজ, ধাঁধাঁ প্রতিযোগিতা, পুঁথি পাঠ, জারি,সারি, কবি গান,যাদু প্রদর্শন ইত্যাদি। মেলায় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রকমারী পিঠা, কাপড় ও জুয়েলারীর দোকানে হরেকরকম পণ্যের বেচাকেনাও হয় উল্লেখ করার মত। পিঠা উৎসবে অংশগ্রহনকারী স্টল থেকে ৩ টি স্টলকে সেরা নির্বাচিত করে পুরষ্কৃত করা হয়। র্যাফেল ড্র বিজয়ীদের মাঝেও বিতরণ করা হয় আকর্ষণীয় পুরষ্কার। প্রবাসে বাঙালী ঐতিহ্যকে ধরে রাখার অঙ্গিকারে একুশে টেলিভিশন আয়োজিত বর্ণাঢ্য এ পিঠা উৎসবের সহযোগী সংগঠন হিসেবে ছিল মহিলা উন্নয়ন বিষয়ক সংগঠন আভা এবং স্কুল-কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতার সংগঠন প্যারেন্টস ক্লাব। মিডিয়া পার্টনার ছিল আর টিভি।
Discussion about this post