পাবনা থেকে মোবারক বিশ্বাস : পাবনায় গতকাল বৃহস্পতিবারের হরতাল শুরুর দিকে ঢিমে তালে চললেও মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদির বিরুদ্ধে রায় ঘোষনার পর উত্তপ্ত হয়ে উঠে পাবনা জেলা। সাধারন মানুষজন শহর থেকে বাড়ি অভিমুখে যেতে শুরু করে। এক পর্যায়ে শহরের প্রধান সড়ক আব্দুল হামিদ রোড, হাজি মোঃ মহসিন রোডসহ সারা শহর জনশূন্য হয়ে পড়ে। রায় ঘোষনার আগ মুহুর্ত জনগণের মধ্যে আতংক ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করলেও রায় ঘোষনার পর তা ভীত সম্ভস্ত হয়ে জনসাধারন শহর ত্যাগ করে। হরতাল শুরু থেকেই শহরে যানচলাচল বন্ধ ছিল। বেশিরভাগড় দোকানপাট বন্ধ দেখা গেছে।
শহরে দু-একটি অটো রিক্সা ও রিক্সা চলাচল করেছে। দুরপাল্লা ও বা আন্তজেলায় কোন পরিবহন চলাচল করেনি। আদালত খোলা থাকলেও কোন বিচারপ্রার্থীকে আদালত চত্বরে দেখা যায়নি। ব্যাংক বিমা খোলা থাকলে লেন-দেন হয়েছে সিমিত। দেলোয়ার হোসেন সাঈদির বিরুদ্ধে রায় ঘোষনার পর পুলিশ পাহাড়ায় জেলা আ,লীগ একটি আনন্দ মিছিল করে। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদণি করে দলীয় কার্যালয়ে সমাবেশ অুনষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বক্তারা রায়ে খুশি হন বলে বক্তব্য প্রদান করেন। এদিকে রায় ঘোষনার পর শহরে থমথমে ভাব বিরাজ করছে। শহরের অদুরে জালালপুর পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ভাংচুর করে বিুদ্ধ জনতা। তারা পাবনা নগরবাড়ি মহাসড়ক পুরোটায় অবরুদ্ধ করে রাখে। রাস্তায় বিশেষ বিশেষ যায়গায় বড় বড় গাছ কেটে ব্যারিকেট দিয়ে যান চলাচল ও হলকা যান মটর সাইকেল ও রিক্সা চলাচলে বাধা প্রদান করেন। পাবনা নব-নির্মিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যান্তরে রাখা দুটি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয় হরতাল সমর্থনকারীরা। সেখানে একটি ট্রাকে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। রাস্তা অবরোধ থাকায় ফায়ার সার্ভিসের কোন গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌছাতে পারেনি। বিকাল পৌনে ৪টায় র্যাব পুলিশ ও বিজেবি সদস্যরা পাবনা বাইপাশ সড়ক থেকে শুরু করে জালালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত হরতালকারীদের ধাওয়া করে গাছের গুড়ি ও জ্বলন্ত টায়ার ও ইটপাটকেল অপসারন করে অগ্নিদগ্ধ গাড়ি নিভানোর জন্য ফায়ার ব্রিগ্রেট সদস্যদের সেখানে নিয়ে যান এবং আগুন নিয়ন্ত্রনে আনেন। এদিকে হরতাল সমর্থনকারীরা পাবনা যুবউন্নয়ন প্রশিন কেন্দ্র উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি সরকারী অফিসে ব্যাপক ভাংচুর করে। এ সময় পিকেটাররা মধুপুর নামকস্থানে একটি এ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দেয়। আরো জানা যায়, গয়েশপুর ইউনিয়নের বাঙ্গাবাড়ি গ্রামে রাস্তার দুপাশের গাছ কেটে ও বিদ্যুতের পোল দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে পিকেটাররা। রির্পোট লেখা পর্যন্ত পাবনা-নগরবাড়ি মহাসড়ক পিকেটাররা অবরোধ করে রেখেছে। পাবনা শহরসহ জেলার প্রতিটি থানা ও পৌরসদরে থমথমেভাব বিরাজ করছে। জনগণ আতংকে বসবাস করছে। বেশিরভাগ জনগণ টিভি চ্যানেলের দিকে চোখ রাখছে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানার জন্য। এদিকে জেলার ঈশ্বরদি উপজেলায় ককটেল বিস্ফোরন, রাস্তা অবরোধ ও বিছিন্ন ঘটনার মধ্যে দিয়ে হরতাল পালিত হচ্ছে। রায় ঘোষনার পর থেকে পুরো শহর উত্তপ্ত হয়ে ঊঠে ও জনশূন্য হয়ে পড়ে। বিুদ্ধ জামাত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা আওয়ামীলীগ নেতাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাংচুর-অগ্নি সংযোগ করে। দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষনায় বিুদ্ধ হয়ে ঈশ্বরদীতে আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের ৯টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ১টি কাব ঘর ও ৩টি ট্রাকে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর শেষে অগ্নি সংযোগ করেছে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। গতকাল দুপুরে রায় ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বরদী উপজেলার কোলেরকান্দি ও মিরকামারী মুন্নার মোড় এলাকায় এসব তান্ডব চালায় জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। একই সময়ে শহরের ফকিরের বটতলা এলাকায় একটি ককটেল বিষ্ফোরণ করে শিবিরের নেতাকর্মীরা। এর আগে হরতাল চলাকালে সকাল থেকেই দাশুড়িয়া-পাকশী মহাসড়কের কোলেরকান্দি ও মিরকামারী মুন্নার মোড় এলাকায় গাছের গুড়ি, বিদ্যুতের খাম্বা ও টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিভিন্ন অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে সজ্জ্বিত হয়ে বিােভ মিছিল ও সমাবেশ করে। প্রত্যদর্শীরা জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জ্বিত হয়ে দাশুড়িয়া-পাকশী মহাসড়কের কোলেরকান্দি ও মিরকামারী মুন্নার মোড় এলাকায় অবস্থান নেয়। দুপুরে রায় ঘোষনার সাথে সাথেই তারা ছলিমপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল মজিদ বাবলু মালিথা ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলম মোহাম্মদের ৪টি দোকান সহ স্থানীয় আ’লীগ নেতৃবৃন্দের মোট ৯টি দোকানপাট, একটি কাব ঘর ও ৩টি ট্রাক ভাংচুর শেষে অগ্নিসংযোগ করে। সে সময় জামায়াত-শিবিরের তান্ডব লিলার কাছে ভিড়তে পারেনি পুলিশ। এসব ঘটনায় পুরো ঈশ্বরদীতে আতংক ছড়িয়ে পুড়ে। দুপুরের মধ্যেই সমস্থ দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।
Discussion about this post