মোবারক বিশ্বাস নিজস্ব সংবাদদাতাঃ আসছে বাংলা নববর্ষ, পহেলা বৈশাখ। বৈশাখী উপলক্ষে পাবনার তাঁতি পল্লীতে ব্যস্ততা বেড়েছে। উৎসবের এদিন হিন্দু-মুসলমান, খ্রিস্টানসব ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মিলিত হবে এক কাতারে। পাশ্চাত্যের আধুনিক পোশাক ও খাবার ছেড়ে প্রত্যেকের পরনেই থাকবে বাঙালিআনা রং-বেরঙের বাহারি পোশাক। ঘরে ঘরে রান্না হবে পানতা-ইলিশ আর নানা সুস্বাদু খাবার। এদিন পুরুষের পরনে থাকবে পাঞ্জাবি-পাজামা, ধুতি ও ফতুয়া। আর নারীদের পরনের শাড়ির জমিনে থাকবে প্রজাপতি, ঢাক-ঢোল, কুলা, ঘুড়িসহ বাঙালির ঐতিহ্যের প্রতীক নকশা করা লাল পেরে সাদা শাড়ি। এ শাড়ির ব্যাপক চাহিদার কারণে সৃষ্টি হয়েছে নতুন বাজার। পাবনার চাটমোহর উপজেলার কুয়াবাসী, পবাখালী, ফৈলজানা, ফরিদপুর উপজেলার ধানুয়াঘাটা, হাদল, বেড়হাওলিয়া, নেছরাপাড়া, ঈশ্বরদী, বেড়া, সাঁথিয়া উপজেলাসহ, পাশ্ববর্তী শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া সিরাজগঞ্জের হাজার হাজার তাঁতি দিনরাত ব্যস্ত এখন বৈশাখী শাড়ি তৈরিতে করতে। আর এবার থাকছে আরও নতুন। ৬০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা মূল্যের এসব শাড়ি এরই মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান দখল করে নেয়ায় তুলনামূলক লাভের আশঙ্কা করছে তাঁতিরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে এ অঞ্চলে প্রায় ২ লাখ হস্ত ও ইঞ্জিনচালিত তাঁত রয়েছে। আর এর সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে প্রায় ৮ লাখ লোক। তাই এরা মৌসুমভেদে সারা বছরই শাড়ি-লুঙ্গি, গামছা, ধুতি, থ্রিপিস উৎপাদন করে দেশের মানুষের চাহিদার বড় একটি অংশ মিটিয়ে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় দেশগুলোয় রফতানি করে আসছে। দুই ঈদ ও পূজায় মূলত এ ব্যবসার প্রধান বাজারকে কেন্দ্র করে তাঁতিরা তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে স্বাধীনতার পর থেকে। কিন্তু গত চার বছর ধরে বাংলা নববর্ষ, পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে নতুন বাজার সৃষ্টি হয়েছে। তবে তা লুঙ্গির নয়, শাড়ির যা অন্যবারের তুলনায় এবার দেশজুড়ে ব্যাপক চাহিদার কারণে তাঁতিরাও গত এক মাস আগে থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করে এ শাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছে। ঢোল, একতারা, তবলা, দোতারা, কুলা, প্রজাপতি, পাখা ও কলসিসহ গ্রামবাংলার নানা ঐতিহ্যের নকশা সম্বলিত এ শাড়িতে অন্য বছরের তুলনায় আনা হয়েছে বৈচিত্র্য। এক্ষেত্রে কেউ কাউকে অনুকরণ না করায় হাজারো ডিজাইন হয়েছে এই বৈখাশী শাড়ি। আর দামও রয়েছে সবার নাগালের মধ্যে। চাটমোহর উপজেলার কুয়াবাসী গ্রামের মোঃ আলাউদ্দিনসহ কয়েকজন জানান, বৈশাখ উপলক্ষে তাঁত পল্লীতে এখন পুরো ব্যস্ততা চলছে। তারা জোট বদ্ধ হয়ে শাহজাদপুর এক তাঁতে কাজ করছেন। তাঁত ব্যবসায়ী জামান টেক্সটাইলের আলহাজ এম এ বাকী, বৈদ্যনাথ রায়, তোফাজ্জল হোসেন বাবুল জানান, তিনটি উৎসবকে ঘিরে আমাদের এ ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। বৈশাখী শাড়ি তৈরির এ মৌসুমে প্রায় ৫ শতাধিক স্কিন প্রিন্ট কারখানা গড়ে উঠেছে। প্রতি কারখানায় প্রতিদিন গড়ে নকশা হচ্ছে ৪ শতাধিক শাড়ি। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে আরও ৬ হাজার লোকের।
বৈশাখী ঘিরে চাটমোহরে ইলিশের বাজার আকাশচুম্বী
মোবারক বিশ্বাস নিজস্ব সংবাদদাতাঃ বাাঙালির আটপৌরে জীবনে বর্ণিল উৎসবের আমেজ নিয়ে বছর ঘুরে আসে পহেলা বৈশাখ। তাই বৈশাখের প্রথম দিনে পরম আনন্দে বাঙালি মেতে ওঠে বর্ষবরণের উচ্ছ্বাসে। আর পহেলা বৈশাখের নানা আয়োজনে একটি অপরিহার্য পর্ব হলো ‘পান্তা-ইলিশ’। এ দিন সকালে পান্তা ভাতের সঙ্গে এক টুকরো ইলিশ না হলে যেন চলেই না। পহেলা বৈশাখের এ চাহিদাকে সামনে রেখে এরই মধ্যে বাজারে জমে উঠেছে ইলিশ-বাণিজ্য। বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও প্রতিদিন দাম বাড়ছে। সুযোগ বুঝে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দাম হাঁকাচ্ছে। রবীন্দ্রনাথের খুঁজে না পাওয়া সেই সোনার হরিণের মতোই দুষ্কর এখন পদ্মার ইলিশ, যাও পাওয়া যাচ্ছে তার দাম হাঁকা হচ্ছে আকাশচুম্বী। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক কেজি ওজনের তাজা ইলিশ ১৪’শ থেকে ১৫’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট আকারের ইলিশের দাম কেজি প্রতি ৭’শ-৮’শ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানান, এ ধরনের উৎসবে-আয়োজনে নদীর তাজা ইলিশের চাহিদাই বেশি। ক্রেতা আব্দুর রহমান জানান, একটু আগেভাগেই ইলিশ কিনতে এলাম। ফ্রিজে সংরক্ষণ করবো। তবে গরিবের পান্তা-ইলিশ ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে। হয়তো ইলিশের পরিবর্তে শুঁটকি দিয়ে পান্তা খেতে হবে এসব মানুষের।
Discussion about this post