পুঁজিবাজারে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিনিয়োগ নিয়ে ‘বিভ্রান্তিতে’ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার আশংকায় মঙ্গলবার লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছে দেশের দুই পুঁজিবাজারে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ জানিয়েছে, দুই সপ্তাহ ধরে পুঁজিবাজারে মন্দাভাবের প্রেক্ষাপটে ‘বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে’ এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের সামনেই সকাল থেকে বিক্ষোভ চলছে।
মঙ্গলবার সকালে পরিচালনা পর্ষদের জরুরি বৈঠকের পর ডিএসইর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের (সামরিক ও বেসামরিক) পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ব্যাপারে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদে অস্পষ্টতা প্রতীয়মান হয়েছে। ডিএসই কর্তৃপক্ষ মনে করে, এর ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে এবং পুঁজিবাজারে বড় ধরণের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সে কারণে পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ১৭ জানুয়ারি লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছে।”
“ডিএসই বোর্ড মনে করে, দেশের অর্থনীতি তথা পুঁজিবাজারের স্বার্থে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিনিয়োগের সুযোগ থাকা উচিৎ”, যোগ করেন তিনি।
পুঁজিবাজার স্থিতিশীলে সোমবার মন্ত্রীপরিষদ আয়কর আইন সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন করার পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, “পুঁজিবাজার এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ, এটা আমরা অনেকেই জানি। সরকারি দায়িত্ব পালনের অবস্থানে থেকে এই ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য করা সমীচীন নয়।”
নিয়ম অনুযায়ী দেশের প্রচলিত আইনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অন্য কোনো লাভজনক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারেন না। তবে আইনের ফাঁক দিয়ে পুঁজিবাজারে সরকারি চাকুরেরা বিনিয়োগ করে আসছে।
পরে অবশ্য আবুল কালাম আজাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি ‘অফ দ্য রেকর্ড’ ওই কথা বলেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে তার ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।
এদিকে দুই সপ্তাহ ধরে পুঁজিবাজারে মন্দাভাবের প্রেক্ষাপটে রাতেই জরুরি বৈঠক ঢাকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বৈঠক শুরুর পরপরই লেনদেন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত আসে। দুই মিনিটের মতো লেনদেন চলার পর বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) লেনদেনও।
লেনদেন বন্ধ রাখার বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ডিএসইতে লেনদেন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএসই বোর্ড। সিএসইর ওয়েবসাইটেও দেখা যায় একই ধরনের বিজ্ঞপ্তি।
বৈঠক শেষে বেলা ১২টায় এক পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ডিএসইর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি জানান, ডিএসই কর্তৃপক্ষ উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে দুপুরে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসির) চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেনের সঙ্গে আলোচনা করবে। এছাড়া অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্যও চিঠি পাঠানো হয়েছে।
লেনদেন কতদিন বন্ধ রাখা হবে সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে কিছু বলতে পারেননি মোশাররফ হোসেন। ‘সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায়’ এ ব্যাপারে পরে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিইসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ সাজিদ হোসেন বলেন, “ঢাকায় লেনদেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর আমরা পরে পেয়েছি। এর প্রভাব সিএসইতে পড়তে পারে- এমন আশঙ্কায় লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছে।”
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি আল মারুফ খান জানান, ঢাকার পুঁজিবাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অনুমতি নিয়ে চট্টগ্রামেও লেনদেন স্থগিত করা হয়। সিএসইতে মঙ্গলবার ২ মিনিটে যে লেনদেন হয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
সকালে লেনদেন বন্ধের খবরে দুই পুঁজিবাজারের সামনেরই বিক্ষোভ শুরু করে বিনিয়োগকারীরা। বিক্ষোভকারীরা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনের রাস্তায় অবস্থান নিলে বেলা ১১টার দিকে শাপলা চত্বর থেকে ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা শাপলা চত্বরের সামনে গোল হয়ে অবস্থান নিয়ে শ্লোগান দিতে থাকেন।
চট্টগ্রামেও বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিক্ষোভ শুরু করে একদল বিনিয়োগকারী। পুঁজিবাজার স্থিতিশীলে সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি করেন তারা। পুঁজিবাজারের কালো টাকা বিনিয়োগ প্রসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড রোববার একটি প্রজ্ঞাপন জারির পর ডিএসই সূচক ৮২ পয়েন্ট পড়ে যায়। সোমবার পড়ে আরো ১৬৭ পয়েন্ট। গত ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ৬ কার্যদিবসেই দরপতন হয়। বাজারে মন্দাভাবের জন্যে অর্থমন্ত্রী, এনবিআর ও সরকারকে দায়ী করে সোমবারও বিক্ষোভ করেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। দুপুর থেকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ডিএসইর সামনের সড়ক তারা অবরোধ করে রাখেন।
Discussion about this post