বাংলা প্রেস, নিউইংল্যান্ড: বস্টন প্রবাসী বাংলাদেশি যুবকের প্রতিবন্ধীদের নিয়ে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে নিরলস কাজ করার খবর শুনে খুশি হলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা ও বাংলাদেশের জাতীয় অটিজম কমিটির চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বস্টন প্রবাসী মিন্টু কামরুজ্জামানের এ অবদানের কথা শুনে তিনি তাকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রন জানান। মিন্টুকে নিয়ে একত্রে কাজ করার মধ্য দিয়ে পুতুল বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী মানুষের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি জীবন বদলে দেয়ার আশা প্রকাশ করেন। বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে গত ৩ এপ্রিল জাতিসংঘ ৬৬ তম সভায় যোগ দিতে এসে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের সাথে দেখা হয় বস্টন প্রবাসী যুবক মিন্টু কামরুজ্জামানের সাথে। কুশল বিনিময়ের এক পর্যায়ে অটিজম বিষয়ে মিন্টুর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা নিয়ে দু’জনের মধ্যে কথা হয়। অটিজমদের নিয়ে পুতুলের অনেক কিছু জানার আরও আগ্রহ জাগে। তিনি মিন্টুকে বাংলাদেশে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে ১০ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী। তাদেরকে নিয়ে সাধারন মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করতে আগ্রহীদের প্রশিক্ষন দেয়ার জন্য তিনি মিন্টুর সকল প্রকার সহযোগিতা কামনা করেন। এ জন্য তিনি মিন্টুকে অতিসত্তর বাংলাদেশ ভ্রমনের জন্য আমন্ত্রন জানান। মিন্টু সাদরে তার আমন্ত্রন গ্রহন করেন। একই সাথে তিনি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করতে বাংলাদেশ যাবার আশা ব্যক্ত করেন। অটিজমদের সাথে কাজ করতে পেরে তিনি নিজেকে ধন্য ও গৌরাম্বিত মনে করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা ও বাংলাদেশের জাতীয় অটিজম কমিটির চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের আমন্ত্রন পেয়ে মিন্টু খুবই আনন্দিত। মিন্টু দীর্ঘ ১১ বছর ধরে বস্টনের মে ইন্সটিটিউট নামে একটি অটিজম প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। তিনি মেহেরপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রিমিলারী মাস্টার্স সম্পন্ন করে জীবন ও জীবিকার তাগিদে ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। তিনি গত ২০১১ সালে বস্টনের লেসিয়াল কলেজ থেকে ম্যানেজমেন্ট অব হিউম্যান রিসোর্স-এ মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। গত ২০১১ সালে লন্ডন ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিস মিশনে তিনি যোগদান করেন। মিন্টু নিউইংল্যান্ড যুবলীগের আহবায়ক। তার দেশের বাড়ি মেহেরপুরের রাজাপুর গ্রামে। উল্লেখ্য, বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ ৬৬ তম সভায় স্বাগত বক্তৃতা প্রদান করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ.কে. আব্দুল মোমেন। তিনি প্রতিবন্ধীদের বিকাশে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের বিস্তারিত কর্মসূচি তুলে ধরেন। সূচনা পর্বে আরও বক্তৃতা করেন জাতিসংঘের ৬৬তম অধিবেশনের সাধারণ পরিষদের সভাপতি নাসির আব্দুল আজিজ আল নাসের, কাতারের স্থায়ী প্রতিনিধি শেখ মেশাল হামাদ, মিসেস সুজানি রাইট, মি. বব রাইট, এবং মিসেস সুসান ই রাইস। প্যানেল ডিসকাশন পর্ব সঞ্চালনা করেন প্রখ্যাত সাংবাদিক সিএনএন প্রতিনিধি ক্রিস্টিয়ান আমানপুর। এতে অংশ নেন ড.গিরালডিন দশন, শেখর সাক্সেনা, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, টনি ব্রাক্সটন, মাইকেল জন কেরলি প্রমুখ। বাংলাদেশের জাতীয় অটিজম কমিটির চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বলেন, অটিজম হল একটি ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য সমস্যা। সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল (সিডিসি) এর তথ্য অনুসারে আমেরিকাতে প্রতি ৮৮ জন শিশুর মধ্যে একজন অটিজমে আক্রান্ত। তবে এর মধ্যে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের আক্রান্তের হার অনেক বেশী। যেমন প্রতি ৫৪ জন ছেলের মধ্যে একজন এবং ২৫২ জন মেয়ের মধ্যে ১ জন অটিজমে আক্রান্ত যা সম্মিলিতভাবে ডায়াবেটিস, এইডস, ক্যান্সার, সেরিব্রাল পলসি, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, ডাউন সিনড্রোম এ আক্রান্ত শিশুদের তুলনায় অনেক বেশি। গ্লোবাল অটিজম পাবলিক হেলথ বাংলাদেশে যা গ্যাপ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে গ্যাপ স্ব-উদ্যোগে পুরানো বাধাগুলো অতিক্রম করে নতুনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এজন্য সকলের অকুন্ঠ সমর্থনের জন্য তিনি গ্যাপ বাংলাদেশের ন্যাশনাল এ্যাডভাইজারি কমিটির চেয়ার হিসেবে সকলকে ধন্যবাদ জানান।
Discussion about this post