আওরঙ্গজেব কামাল : বর্তমানে প্রাকৃতিক বিপর্যের ও উষ্ণতা বৃদ্ধির কারনে বাংলাদেশের আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। আবহাওয়ার এ পরিবর্তন জনসাধারনের জীবনযাত্রার মান একেবারে অতিষ্ট করে তুলেছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন গুলো হচ্ছে- অধিকমাত্রায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাবৃদ্ধি, পানির ঘনীভূমনে পরিবর্তন, জলধারা ও ভূগর্ভের পানি সংরতি হওয়ার পরিমান হ্রাস, চরম আবহাওয়া যেমন-বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছাস ইত্যাদি। জাতীসংঘের আন্ত:রাষ্ট্রীয় জলবায়ূ পরিবর্তন সংক্রান্ত প্যালেন (আইপিসিসি)র তৃতীয় সমীা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- বিগত ১০০ বছরে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ০.৭ ডিগ্রী বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি কুড়ি বছর অন্তর আবহাওয়া ০.০৪% পরিবর্তন ঘটছে। তাপমাত্রা বাড়ায় ভূপৃষ্ঠের পানির মান বিশেষত দ্রবীভুত অক্সিজেনের পরিমান কমে যাচ্ছে। এতে ভুপৃষ্ঠের পানি সরবরাহ ব্যহত হচ্ছে। বাতাসে তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় পানি দ্রুত বাস্প হয়ে উড়ে যাচ্ছে। ফলে লোকালয়ে পানির অভাব দেখা দিচ্ছে। ২০৭৫ সাল নাগাদ যতটুকু তাপমাত্রা বাড়ার অনুমান করা হচ্ছে তাতে পানির মান ও চাহিদা দুটোই প্রভাবিত হবে। পানির তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়লে পানির অক্সিজেন কমে পানির মান কমে যায়। বর্তমানে ব্যবহৃত দূষিত পানি জলধার গুলোয় ফেলার কাজ চলতে থাকলে অবস্থা মারাত্বক হয়ে দাড়াবে। আমাদের দেশে সমুদ্র পৃষ্ঠে উচ্চতা বেড়ে গেলে উপকুলে বিস্তীর্ণ অঞ্চল ডুবে যাবে এবং ল ল মানুষ গৃহহারা হবে। প্রাপ্ত তথ্য ভিত্তিক অনুমান হলো- সমুদ্র ৪৫ সে.মি. বেড়ে গেলে পনের হাজার কি.মি.-র বেশি ভূমি যা দেশের ভূমির ১১ শতাংশ তলিয়ে যাবে এবং ৫৫ লাখ মানুষ গৃহহারা হয়ে পড়বে। সমুদ্র ১০০সে.মি. বাড়লে ত্রিশ হাজার কি.মি.এর বেশি ভূমি তলিয়ে যাবে এবং ১৩৫ লাখ মানুষ আশ্রয়হীন হবে। ইনষ্টিটিউট ফর ওয়াটার মডেলিং এর গবেষণা প্রতিবেদনে সমুদ্র ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩২ সে:মি: পর্যন্ত বাড়লে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের ৮৪ শতাংশ সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমান শুকনো অঞ্চলে কমে যাচ্ছে এবং আদ্র অঞ্চলে আরো বৃষ্টিপাত বাড়ছে, বর্ষার আগে ও পরে বৃষ্টিপাতের পার্থক্য শুকনো অঞ্চলেই বেশি দেখা যাচ্ছে, প্রবল বর্ষণ কম হওয়ায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমছে। দেশের খরা প্রবন পশ্চিম অঞ্চলে বৃষ্টি কমে যাওয়ায় খরার তীব্রতা বেড়ে যাচ্ছে। দেশের দণি ও মধ্য দণি অঞ্চলও খরা প্রবন হয়ে উঠছে। ইদানিং দেশে বড় ধরনের ঘন ঘন বন্যা হচ্ছে। বন্যা দুর্গত এলাকার আয়তনও বাড়ছে। ভবিষ্যতে বড় ধরনের বন্যার সম্ভাবনাও বেড়েছে। বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী সামুদ্রিক ঝড় হওয়ার প্রবণতা পূর্ববর্তী ১৪ বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের উপর মহসেন আঘাত হানে। এসময় দেশের কয়েকটি অঞ্চল প্লাবিত হয়। সরকারের ব্যাপক প্রস্তুতির কারনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান খুব কম হয়। বর্তমানে কয়েকদিন ভ্যাপসা গরমে জনসাধারনের জীবন একেবারে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। জৈষ্ঠমাস প্রায় শেষ যদিও কয়েকবার প্রচন্ড বৃষ্টি হয়েছে । তবুও কাটছে না ভ্যপসা গরম। প্রচন্ড ভ্রাপসা গরমের তীব্রতায় ওষ্ঠাগত প্রণীকুল। রোদ্রের খরতাপে জনজীবন একে বারে বিপর্যস্ত প্রায়। ফলে মানুষও একপ্রকার অসহায় হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিনের তাপমাত্রা সর্বশীর্ষে অবস্থানের কারনে এমনি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে আবওয়া অফিস সুত্রে জানিয়েছে , যা ইতিপূর্বে কখনও হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিজ্ঞমহল। তার উপর বিদ্যুতের লোডশেডিং আরও অতিষ্ঠ করে তুলেছে জীবন যাত্রার মান। খুলনা সহ তার পাশ্ববর্তী এলাকায় গত কয়েক দিনে দেখাগেছে কর্মব্যাস্ত মানুষের চরম দুরাবস্থা। গায়ের ঘাম ঝরিয়ে অকান্ত পরিশ্রম করার কারনে অনেকেরই পানি শূন্যতা দেখাদেয়। এমতাবস্থায় ঘাটতি মেটাতে অনেকে স্যালাইন সংগ্রহে হাসপাতালে ভীড় করতে দেখাগেছে। অনেকেই ভীড় করেছেন ঔষধের দোকানে। অনেকে কান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে ঘরে ফিরেছেন। আর এর বেশিরভাগ হচ্ছেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। তার উপর বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং। চলমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ না থাকায় বিভিন্ন অফিসে কর্মকর্তা কর্মচারীদের খালি গায়ে বসে ুব্ধ মেজাজে সময় কাটাতে দেখাগেছে। জেনারেটর সার্ভিস চালু থাকলেও তাতে তেমন কোন উপশম পাওয়া যাচ্ছেনা বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা। কারণ নিদৃষ্ট সময়ে সার্ভিসটি চালু রাখে সংশ্লিষ্টরা। আজ সকাল থেকে কিছুটা বৃষ্টি হলেও তাতে কোন লাভ হয়নি জনসাধারনের কারন বৃষ্টি হচ্ছে ঠিকই কিন্তু গরম কমছেনা। তাপমাত্রার তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি বলে জানাগেছে। অভিজ্ঞমহলের মতে পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে প্রাকৃতিক রূপরেখা পাল্টে গিয়ে এমনি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রচন্ড গরমে জনসাধারন কে একেবারে অতিষ্ট করে তোলে। প্রাকৃতিক বিপর্যের ও উষ্ণতা বৃদ্ধির কারনে এমনটি ঘটেছে বলে ধারনা করছেন অভিজ্ঞমহল। আর এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে পরিবেশের উপর ।
Discussion about this post