ডেস্ক: বিএনপির নেতৃত্বে তারেক রহমানকে আনার ইঙ্গিত দিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বললেন, নেতৃত্বে আসার যোগ্যতা আছে তারেক রহমানের। আমরা আগামীতে তরুণদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় দায়িত্ব দেয়ার পরিকল্পনা করছি। তাদের মধ্যে রয়েছে আমার ছেলে তারেক রহমান। সে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে বর্তমান তরুণের উপস্থিতি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কুয়েত টাইমসকে দেয়া দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেছেন। বাংলাদেশ যখন রাজনৈতিক সঙ্কট দশায় তখন তার এ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কুয়েত টাইমসের সাংবাদিক আল আনবা। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে সবচেয়ে প্রভাবশালীদের একজন খালেদা জিয়া। তার স্বামী, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর তিনি রাজনীতি শুরু করেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি আপসহীন। নিজস্ব অধিকারবলে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী এখন বিরোধী দলীয় নেতা। ২০০৮ সালে তার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাছে পরাজিত হওয়ার পর থেকে তিনি এ পদে আছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময়ে তিনি বার বার গ্রেপ্তার হয়েছেন। তা সত্ত্বেও তিনি সবচেয়ে বড় বিরোধী দলের নেতা না হওয়া পর্যন্ত অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখেন। খালেদা জিয়া নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি তুলে ধরেন। ওই সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন করার ক্ষমতা রাখে। তিনি বলেন, তার দলসহ ১৮ দল এবং শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য নিরপেক্ষ সরকার দাবি করে। তবে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়া হলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করবেন। সাক্ষাৎকারে খালেদা জিয়ার ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে কথা বলেন আল আনবা। এ সময় রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় তরুণদের সামনে নিয়ে আসার কথা বলেন খালেদা জিয়া। চারটি ক্ষেত্রে তিনি পরিবর্তন করার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানান। এর মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, বিদেশী বিনিয়োগ উৎসাহিত করা ও নারীদের শিক্ষার মান উন্নত করা। খালেদা বলেন, তিনি অন্য মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ উন্নত করবেন। তাদেরকে বাংলাদেশের অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগ দিতে উৎসাহিত করবেন। রোহিঙ্গা মুসলিম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়টি তিনি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবেন। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমদের যাতে পূর্ণাঙ্গ নাগরিক অধিকার দেয়া হয় সে দাবি তিনি আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরার কথাও বলেন। এখানে ওই সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: বাংলাদেশ ও কুয়েতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক দিয়ে আমরা আলোচনা শুরু করতে চাই। বিশেষ করে, এ সম্পর্ক উন্নয়নে এর আগে আপনি ছিলেন ডিসিশন মেকার বা নীতিনির্ধারক।
উত্তর: আসল সত্য হলো বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠা করেন তখন তিনি তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার করেছিলেন। তাতে মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কথা বলেছিলেন তিনি। এ লক্ষ্যে তিনি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। এ জন্য এ বিষয়টি তিনি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
আমি বিশ্বাস করি, অন্য সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক আছে তার মধ্যে কুয়েতের সঙ্গে রয়েছে অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধুসুলভ সম্পর্ক। এ বিষয়টিকে ভ্রাতৃত্বসুলভ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। আমরা হৃদয়ের গভীরে এ অনুভূতিটি পোষণ করি। কূটনৈতিক অবস্থানে থেকে আমরা যে কথা বলে থাকি তার চেয়েও গভীর এ সম্পর্ক। এর পক্ষে একটি সেরা উদাহরণ হলো, ইরাকি বাহিনী যখন কুয়েতে আগ্রাসন চালায় তখন কুয়েতের স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের সেনাবাহিনী অংশ নিয়েছিল। এর মাধ্যমে দু’দেশের মানুষ রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। আমার মনে আছে, কুয়েত স্বাধীন হওয়ার পর, সৌদি আরবে সরকারি এক সফর শেষে আমি দেশে ফিরছিলাম। আমাকে কুয়েতে থামানো হলো। প্রয়াত আমীর শেখ জাবের আল আহমদ আল সাবাহ তখন সবেমাত্র কুয়েতে ফিরেছেন। দেশটি তখনও ধ্বংসযজ্ঞের শিকার। তা সত্ত্বেও, আমাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা দেয়া হলো। ব্যক্তিগত একটি জেট দিয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল।
প্রশ্ন: যথাসময়ে নির্বাচন করতে হলে অনেক পরিবর্তন করতে হবে বলে বিস্তর আলোচনা আছে। কিন্তু বিরোধী দল প্রধান হিসেবে আপনি এখনও বলছেন, আপনার দাবি পূরণ না হলে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করবেন।
উত্তর: বাংলাদেশ এমন একটি অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যাতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে মানুষ। বর্তমান সরকার জাতীয় নির্বাচন তদারক করতে চায়। কিন্তু ক্ষমতাসীন জোটের কিছু দলের সঙ্গে আমরা বলতে চাই, নির্বাচন অবশ্যই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হতে হবে। সেটা হবে একটি অন্তর্বর্তী সরকার, যারা নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পালন করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি করেছিলেন। তখন তারা আমাদেরকে এ সরকার গঠন করতে সংবিধান সংশোধন করিয়েছিলেন। এ পদ্ধতিতে গঠিত নিরপেক্ষ সরকার গত তিনটি নির্বাচন তদারক করেছে। তা সত্ত্বেও, শেখ হাসিনার সরকার এখন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি অগ্রাহ্য করছে। এর মাধ্যমে তারা আসলে নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এ নির্বাচনে এমপিদের বিশেষ সুবিধা দিয়ে তারা বিরোধী দলের বিরুদ্ধে অধিক সুবিধা ভোগ করতে চায়। উপরন্তু, ক্ষমতাসীন জোটের দু’দল মিলে গঠন করেছে একটি নির্বাচনী কমিটি। সরকারের প্রধান হয়ে শেখ হাসিনা সরাসরি তাদের নির্দেশনা দিতে পারেন এবং তাদের ওপর প্রভাব সৃষ্টি করতে চাপ দিতে পারেন, তাতে নির্বাচনের ফল অবশ্যই পরিবর্তিত হতে পারে।
আমি উপনির্বাচনের একটি উদাহরণ দিতে চাই। কয়েকটি আসন শূন্য হওয়ায় এ উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জোটের সদস্যরা নির্বাচিত হন- নির্বাচনী ফলের ওপর তাদের পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ থাকায়। কিন্তু স্থানীয় নির্বাচনগুলো আমাদের জন্য রেখে দেয়া হয়। এর মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে আমাদের আস্থায় নেয়ার চেষ্টা করা হয়। আমাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কিন্তু আমরা ফাঁদে পা দেবো না। প্রধানমন্ত্রী বিমানবাহিনী, সেনাবাহিনী ও জনপ্রশাসনকে ব্যবহার করে পুনঃনির্বাচিত হওয়ার জন্য নতুন নতুন প্রকল্প উদ্বোধনের পরিকল্পনা নিয়েছেন। এতে সমান সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে না।
প্রশ্ন: আরব বসন্তের মতো ‘বাংলাদেশী বসন্ত’ কি আমরা প্রত্যাশা করতে পারি?
উত্তর: আমি বিশ্বাস করি, আরব দুনিয়া ও বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের তুলনা করা যায় না। আমরা গণতন্ত্রপ্রিয় জাতি। আমাদের সত্যিকার বসন্ত শুরু হয়েছিল ১৯৯০ সালে। তখন আমরা সামরিক শাসককে উৎখাত করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। আমাদের জনগণ বিশ্বাস করে, শুধু গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হতে পারে। একই সময়ে তাদের দাবি নির্বাচনে অংশ নেয়া, যেখানে সব দলের জন্য থাকবে সমান সুযোগ।
প্রশ্ন: মিশর ও বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়েও তুলনা করা হয়। লোকজন বিশ্বাস করে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে আপনি বিরাট বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেবেন, যাতে পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করতে চাপে পড়ে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পরিবর্তে অন্তর্বর্তী সময়ে যদি সেনাবাহিনীও আসে আপনি নাকি তার বিরোধী নন বলে অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে আপনার জবাব কি?
উত্তর: এমন অভিযোগ অবশ্যই মিথ্যা। কারণ, আমরা আলোচনায় বিশ্বাস করি। গণতন্ত্র রক্ষায় বিশ্বাস করি। এ গণতন্ত্রের জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে ৯টি বছর কাজ করেছি। আমি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, বর্তমান সরকারের কিছু দল সেনাশাসনে জড়িত হতে চেষ্টা করেছিল। আমরা স্মরণ করতে পারি তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখন নির্বাচন দিলেন তাতে তারা অংশ নিয়েছিল। এর মাধ্যমে তারা ওইসব নির্বাচনকে বৈধতা দিয়েছে। ২০০৭ সালে সেনাবাহিনী যখন ক্ষমতা নিয়ে নেয় তখন তারা বলেছিল, আমার বিরুদ্ধে এটা ছিল তাদের আন্দোলনের ফসল। এর অর্থ দাঁড়ায়, তারাই সেনা হস্তক্ষেপ আহ্বান করে।
শেখ হাসিনার ক্ষমতার মেয়াদ অক্টোবরের শেষের দিকে শেষ হচ্ছে। আর আমরা আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে লঙ্ঘন করে এমন কোন রাজনৈতিক আন্দোলন আমরা করি না। সমস্যা আমাদের নয়, সমস্যা সরকারের। তাদের কান বধির হয়ে গেছে। তাই তারা কোন যুক্তিতর্ক শুনতে চায় না।
প্রশ্ন: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছেন তাতে কি আপনি বিচার বিভাগ ও সুপ্রিম কোর্টের ওপর আস্থা রাখেন?
উত্তর: সর্বোপরি, বাংলাদেশের বিচারবিভাগকে স্বাধীন হওয়া জরুরি। আমরা দুঃখের সঙ্গে বলছি, এখনও বাংলাদেশে তা হয়নি। বিচার বিভাগের ওপর, বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্টের ওপর আমাদের আর কোন আস্থা নেই। কারণ, সমপ্রতি এতে যেসব নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা ক্ষমতাসীন জোটের সদস্য।
কিন্তু তা সত্ত্বেও, আমি বলতে চাই, সাংবিধান সংশোধনীর বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট ওই রায় দিয়েছেন। ওই রায়ে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু একই রায়ে আদালত বলেছেন, আগামী দু’টি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে। সুপ্রিম কোর্টের দ্বিতীয় এ রায়কে সম্মান জানায়নি বর্তমান সরকার।
আবারও আমি আমার বিশ্বাস থেকে বলতে চাই, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ছাড়া মসৃণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যাবে না। আমরা এখন যে সমস্যা মোকাবিলা করছি তা হলো আদালতের ওপর কর্তৃপক্ষের ‘নিয়ন্ত্রণ’। রাজনৈতিক ইস্যুতে এ আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। আমরা দেখেছি, এসব ক্ষেত্রে পরামর্শের জন্য সরাসরি সরকারের দ্বারস্থ হয় তারা। এতে রায় প্রভাবিত হয়।
প্রশ্ন: আপনার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন কোন তারিখে?
উত্তর: সরকার একতরফাভাবে, ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে যখনই নির্বাচন আয়োজন করবে তখনই সঙ্গে সঙ্গে আমরা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করবো।
প্রশ্ন: আপনার সঙ্গে কোন কোন দল যোগ দিচ্ছে?
উত্তর: বাংলাদেশের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ক্ষমতা হস্তান্তর সমর্থন করে। আমাদের ১৮ দলীয় জোট এ মুহূর্তে এ ধারণা পোষণ করি। আমাদের সঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও ড. কামাল হোসেনের মতো ব্যক্তিরা রয়েছেন। তাই আমরা বলতে পারি, ক্ষমতাসীন জোট বাদে অন্য সব দলই বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন বয়কট করবে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারত তার প্রভাব খাটিয়ে বড় একটি ভূমিকা রাখে। যখন যথারীতি তারা শেখ হাসিনার প্রতি নমনীয় বা দুর্বল তখন ভারত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতি ‘খোলানীতি’ গ্রহণ করেছে বলে শোনা যাচ্ছে। এটা কি সত্য? ভারত আসলে বাংলাদেশের নির্বাচনকে কতখানি প্রভাবিত করতে পারবে?
উত্তর: বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মানুষ মুসলিম। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, অন্য ধর্মে বিশ্বাসীরা পূর্ণাঙ্গ নাগরিক অধিকার ভোগ করেন না। আমরা সবাই বাংলাদেশী। আমাদের কারও মধ্যে কোন ফারাক নেই। উপরন্তু, ভারত হোক বা অন্য দেশ হোক আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে বিদেশী হস্তক্ষেপকে আমি মেনে নেবো না। প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমাদের রয়েছে সুসম্পর্ক। যখন আমি ভারত সরকারের আমন্ত্রণে সে দেশে গিয়েছিলাম তখন বাণিজ্যসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছি। অবশ্যই আমাদের মধ্যে কিছু ইস্যুতে দ্বন্দ্ব আছে, ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি আছে। কিন্তু তাতে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া উচিত নয়। ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেন, বাংলাদেশের সব সমপ্রদায়ের সঙ্গে তাদের সমসম্পর্ক রয়েছে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি রাখছেন এমন পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ইসলামপন্থিদের সঙ্গে বিরোধে জড়ানোর কারণে ক্ষমতাসীনরা জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করে। আপনার দলের পারফরমেন্সের দিক থেকে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়ে গত নির্বাচনে তাদের বিজয়ী করেছে। তারপর থেকে আপনি কি নিজেকে জবাবদিহির মুখোমুখি করিয়েছেন? গত নির্বাচনে যারা আপনার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল কোন কোন ফ্যাক্টরের ভিত্তিতে তাদের এবার আপনাকে ভোট দেয়ার আহ্বান করবেন?
উত্তর: আমরা আসলে মূল চারটি ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করেছি। সেগুলো হলো- দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই, বিদেশী বিনিয়োগ উৎসাহিত করা ও শিক্ষার মানকে উন্নত করা। বিশেষ করে নারীশিক্ষা। ইসলামিক মানসিকতার মতের বিরুদ্ধে এ সরকার চাপ সৃষ্টি করেছে। এটা তাদের ভুল। আমরা সমাজের ইসলামপন্থিদের শ্রদ্ধা করি। তাদের রক্ষার জন্য কাজ করি। আমরা একই ভুল করবো না। আমরা মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করবো। তাদের অনুরোধ করবো দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক আমাদের দেশ থেকে নিতে, যা অনেক দেশে বন্ধ আছে।
আমরা এখন যে অবস্থানে আছি এর মূল সমস্যা হলো বর্তমান সরকার মুসলিম দেশগুলোর কাছে যায়নি। উল্টো তারা এর বিপরীত কাজ করেছে। তারা যোগ্যতার পরিবর্তে দলের প্রতি অনুগত এমন ব্যক্তিকে শ্রম শক্তি হিসেবে বেছে নিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা অভ্যন্তরীণভাবে বৈষম্য চর্চা করছে। এর মাধ্যমে দুর্নীতির বিস্তার ঘটছে। আমরা এর বিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণের পরিকল্পনা করছি। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবো এবং জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনবো।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের সমাজে রয়েছে বিপুল সংখ্যক যুব শক্তি। আপনার দলে কি তরুণ বা যুব রাজনীতিকের সংখ্যা বাড়ানোর কোন লক্ষ্য আছে? আপনার পরে কে নেতৃত্বে আসবে তাকে কি আপনি প্রস্তুত করেছেন?
উত্তর: আমি একমত যে, তরুণরাই আমাদের সমাজের বড় অংশ। তাই আগামী সরকারের উচিত তাদের বিষয়ে প্রাধান্য দেয়া। তাদের চাকরি ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যাতে তারা চাকরির যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। আমার দলে তরুণরা সব সময়ই ফোকাল পয়েন্টে। গত বার আমরা বিপুল সংখ্যক তরুণ নেতার গ্রুপকে সামনে এগিয়ে দিয়েছি। আমরা এবার তাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় দায়িত্ব দেয়ার পরিকল্পনা করছি। এসব তরুণ সদস্যের মধ্যে আমার দলে রয়েছে আমার ছেলে তারেক। সে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে বর্তমান তরুণের উপস্থিতি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যখন সময় আসবে তখন তার নেতৃত্বে আসার যোগ্যতা আছে।
প্রশ্ন: মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম সঙ্কট সমাধানে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কি? এক্ষেত্রে বর্তমান সরকার কতটুকু পারফরমেন্স দেখাতে পেরেছে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: আমরা বিষয়টিকে মানবিক দৃষ্টিতে দেখি। রোহিঙ্গা মুসলিমরা মিয়ানমারের নাগরিক। ওই দেশটির সঙ্গে আমাদের রয়েছে ভ্রাতৃত্বসুলভ সম্পর্ক। তাদের সহায়তা করা আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু তাই বলে তাদের দেশের নাগরিকত্ব তারা হারাবেন- তা হতে পারে না। এক্ষেত্রে মিয়ানমারে তাদের নাগরিক অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। আমার বিগত সরকারের সময় বেশ কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা তখন বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে স্বাগত জানিয়েছিলাম। একই সময়ে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের মাধ্যমে এসব শরণার্থীকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে কখনও পিছপা হইনি। কারণ, আমাদের অর্থনীতি ও ভূমি তাদের বহন করতে পারে না। মূল সমপ্রদায় থেকে তাদের আলাদা করা গ্রহণযোগ্য নয়। দুর্ভাগ্যজনক হলো, বর্তমান সরকার এ কৌশল অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে অথবা এ সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
Discussion about this post