মো: আলী আজম: মনের ভাব প্রকাশ করার জন্যে অর্থবোধক ধ্বণি বা ধ্বণির সমষ্টিই ভাষা। ক্ষেত্র বিশেষে ধ্বণি ছাড়াও নানা ইশারা ইঙ্গিতে মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে এবং করেও থাকে। অর্থবোধক এই ধ্বণি মানবশিশু কি তার পারিপার্শ্বিকতা বিশেষত: পশু-পাখীর কাছ থেকে শিখে না এতে জন্মগত উত্তরাধিকার নিয়েই সে জন্মায় এ বিষয়ে ভাষাবিজ্ঞানীদের মধ্যে নানা মত প্রচলিত। তবে অধিকাংশ ভাষাবিজ্ঞানীর মত হচ্ছে মানবশিশু তার পরিবেশ প্রতিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে প্রয়োজনীয় সাড়া দিতে গিয়ে তার স্বরযন্ত্র ব্যবহার, অঙ্গভঙ্গী ইত্যাদি করে থাকে। সেই অর্থে এ’কে জন্মগত উত্তরাধিকার কিংবা স্বভাব বলা যেতে পারে। পৃথিবীর সর্বত্রই শিশুকন্ঠের ‘মাম’ উচ্চারনে পানি কিংবা মা বুঝে নেয়া হয়, তার আনন্দ-ব্যাথার অঙ্গভঙ্গীও মোটামুটি সর্বজনবোধ্য কিন্তু নি:শব্দে কতোটা ঠোঁট বাঁকালে তা আনন্দ,বেদনা,বিতৃষ্ণাবোধক হয় তার সর্বজনগ্রাহ্য কোন মানদন্ড নেই বলে নিতান্ত আপনজনেরা নিজের মত করে তা বুঝে নেন। মানুষের জীবন শৈশবে কিংবা পরিবারের গন্ডিতে সীমাবদ্ধ নয় তাই নানা জনের সাথে নানা ভাব প্রকাশ করতে এবং অন্যের সাড়া বুঝে নিতে সমাজে মোটামুটি একটা সর্বজনবোধ্য মাধ্যম থাকা চাই। ভাব প্রকাশের এই মাধ্যমই মানুষের ভাষা। ভাষাতত্ববিদগনের মতে বিশ্বজুড়ে মানব সমাজে ৬৮০০-৬৯০০ কথ্য ভাষা প্রচালিত আছে তন্মধ্যে বড়জোর ২০০ ভাষা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ভাষার উৎপত্তিকাল নিয়ে নৃতত্ববিদগন একমত নন । তাদের কেউ মনে করেন ২০ লক্ষ বছর আগে আর কেউ মনে করেন ৪০ হাজার বছর আগে ভাষার উৎপত্তি। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায়,সাক্ষ্য প্রমানে দেখা যায় প্রায় ৫০ হাজার বছর আগে আফ্রিকায় আধুণিক মানুষের ভাষার আবিষ্কার বা উৎপত্তি ঘটে। এইসুত্রে ভাষা বিজ্ঞান চর্চার পথিকৃৎ হিসেবে ভারতবর্ষের পাণিণির অষ্ঠাধ্যায়ী’র কথাও বলে রাখা ভাল। বৈদিক এই পন্ডিতের জীবন কাল ধরা হয় আনুমানিক ৬০০-৫০০ খ্রীস্ট পূর্বাব্দ। সংস্কৃত ব্যাকরণের ৩৯৫৯ নিয়ম তিনি বিধিবদ্ধ করেন যা এখন পর্য্যন্ত ভাষা বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে মৌলভিত্তি হিসেবে মানা হয়। উহ , আহ, ইত্যাদি ধ্বণি বলতে গেলে সর্বজন বোধ্য, অনুরুপ ভাবে বিশেষ কোন ধ্বণি কিংবা অঙ্গভঙ্গি নিতান্ত চেনা-জানা মহলের বাইরে বোধগম্য নাও হতে পারে। একইভাবে ধ্বণি,শব্দের যাচ্ছেতাই প্রয়োগও সমান সর্বজনবোধ্য হয়না বলে তাতে বিভ্রান্তির সমূহ কারন থাকে। এই বিভ্রান্তি কাটিয়ে ভাষাকে বৃহত্তর জনগোষ্টীর ভাবপ্রকাশযোগ্য করতেই ব্যাকরণ, ভাষাবিজ্ঞানের প্রয়োজন হয়।
“নানান বরণ গাভীরে ভাই একই বরণ দুধ , জগৎ ভরমিয়া দেখি একই মায়ের পুত” বাউল বাংলার এই মরমী উপলব্ধির দার্শনিক মূল্য মাথায় রেখেও বাস্তবতার নিরিখে মেনে নিতে হয় জগৎ জুড়ে একই মায়ের পুতেরা আচার-আচরন,চলন-বলন,জীবন দর্শনে এক কিংবা অভিন্ন নয়। মানুষে মানুষে এই ভিন্নতা যতটা না প্রাকৃতিক তারও বেশী জাতি-গোষ্ঠী স্বার্থপ্রণোদিত, স্বেচ্ছারোপিত। বিশ্বজুড়ে জাতি-গোষ্ঠীর ভাষা ভিন্নতার ক্ষেত্রেও লক্ষ্যনীয় যে, মূলে ব্যুৎপত্তিগত হলেও এই ভিন্নতা প্রায়োগিক ক্ষেত্রে প্রায়শ:ই জাতিগত অহংবোধ, অর্থনৈতিক আধিপত্যবাদী মনোভাব, কোথাওবা হীনমন্যতা থেকেও প্রতিষ্ঠিত এবং প্রসারিত। ফরাসী রুটি কেন পুংলিঙ্গ, চামচ স্ত্রী লিঙ্গ সেটা ফরাসীরাই ভাল জানেন, অন্যদের ক্লীব লিঙ্গেই চলে। এক বচন, বহুবচনে প্রায় সবারই দিব্বি চলে যায় আরবদের আবার ‘দ্বিবচন’ না হলে চলেনা। আমি, তুমিতে দুনিয়া সন্তুষ্ট কিন্তু বাংলায় সম্মানার্থে ‘আপনি’ অত্যাবশ্যক। একদিকে সাংস্কৃতিক কৌলিন্যের মুখপত্র এবং তার পাশাপাশি অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক আধিপত্যবাদের হাতিয়ার হিসেবে ভাষার ব্যবহার কিংবদন্তীত’ল্য হয়ে ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে ইংরেজী,ফরাসী ভাষা। এই সেদিনও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মন্ত্রীদের এক সমাবেশে ফরাসী এক মন্ত্রী ইংরেজিতে বক্তব্য রাখলে তাতে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ক্ষেদোক্তি করেন-“আমি বুঝতে পারছিনা ভল্টেয়ারের ভাষার চেয়ে সেক্সপিয়রের ভাষা তার কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ মনে হলো কেন?” আর প্রিন্স চার্লর্স যেদিন প্যারিসে দু’ছত্র ফরাসী বাতচিত করলেন তো আন্তর্জাতিক গনমাধ্যম সরগরম হয়ে উঠলো কেয়াবাত, কেয়াবাত।
ভাষা ভাবপ্রকাশের উপায়, বাণিজ্য এবং সাম্রাজ্য বিস্তারের হাতিয়ারও বটে। উপনিবেশবাদ,নয়া উপনিবেশবাদ এবং অর্থনৈতিক আধিপত্যবাদের এই যুগেও বিশ্ব পরাশক্তি সমূহের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের প্রথম হাতিয়ার হয়ে দেশে দেশে বহাল তবিয়তে টিকে আছে মুলত: ভাষা শিক্ষার প্রতিষ্টান বৃটিশ কাউন্সিল, আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ,গ্যেয়টে ইন্সটিটিউট ইত্যাদি।
মাতৃভাষা প্রসঙ্গে বলার আগে অপ্রাসঙ্গিক হবেনা ভেবে ফরাসি বিপ্লবের প্রাণপুরুষ মহামতি জাঁ জ্যাক রুশোর ঝড়পরধষ পড়হঃৎধপঃ থেকে সেই বিখ্যাত উক্তি, “গধহ রং নড়ৎহ ভৎবব ধহফ বাবৎুযিবৎব যব রং রহ পযধরহং” কথাটার শরণ নেয়া যাক। এক নি:শ্বাসে তিনি মানুষকে জন্মগতভাবে স্বাধীন এবং সর্বত্র শেকল বাধা বলছেন। জন্মগতভাবে স্বাধীন মানুষ একদিকে যেমন রোগ-শোক,মহামারি,দৈব-দুর্বিপাক ইত্যাদি প্রাকৃতিক শেকলে আবদ্ধ তেমনি দুর্বল মানুষ বরাবরই সবল মানুষের আরোপিত শেকলে বন্দী। সামাজিক শৃঙ্খলার নামে এই বন্ধন কিংবা নিয়মানুবর্তিতা, যে যার মত করে এই শৃঙ্খলের ব্যাখ্যা করতে পারেন কিন্তু শক্ত প্রতিরোধ কিংবা অল্প-বিস্তর ছাড় দিয়ে বৈপরীত্যের সাথে সমঝোতায় আসা ছাড়া সামাজিক মানুষের কোন উপায় নেই। কলেবর না বাড়িয়ে ভাষা প্রসঙ্গে স্থির থাকা যাক।
মানুষের মাতৃভাষার কথাটা বলতেই মা এবং মাতৃভ’মির সাথে তার একটা সম্পর্ক স্বাভাবিকভাবেই ধারনায় এসে যায়। মাতৃভাষা কি মায়ের ভাষা না মাতৃভ’মির ভাষা? একটা উদাহরন দিয়ে প্রসঙ্গটা খোলাসা করা যাক: মা-বাবা দুজন দু’দেশের নাগরিক। কর্মসুত্রে বসবাস করেন তৃতিয় এক দেশে, সেখানে জন্ম নেয়া তাদের সন্তানের জাতিয়তা কি হবে এই প্রশ্নের জবাবে সবাই হয়তো একবাক্যে বলবেন পিতার পরিচয়েই যেহেতু সন্তানের পরিচয় অতএব পিতার জাতিয়তাই তার জাতিয়তা। এখানে মায়ের পরিচয়সূত্রটা নীরব খচখচানি হয়ে থেকে গেল না হয় কিন্তু ভাষার প্রশ্নে সন্তানের মাতৃভাষা কোনটি? মাতৃভ’মি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন: কোন দেশটি শিশুর জন্মভূমি , মা-বাবার জন্মভ’মি না যেখানে সে জন্ম নিয়েছে সে দেশটা তার জন্মভ’মি । ঘোরপ্যাঁচ না বাড়িয়ে ভাষার প্রশ্নে স্থির থেকে সহজে প্রশ্ন করা যাক- মা-বাবা তাদের সমঝোতার মাধ্যমে ঘরে যে ভাষায় কথা বলেন সেটা নাকি তাদের কর্মসূত্রে আবাসভুমি, ঘরের আঙিনা পেরিয়ে শিশু যেখানে সামাজিক মানুষ হয়ে উঠবে সেখানকরই ভাষা হবে শিশুর মাতৃভাষা? প্রবাসীর কথা বাদ দিয়ে দেশের কথা বললেও প্রশ্ন উঠবেই- যে আঞ্চলিক ভাষায় মা-বাবা কথা বলেন সেটা না বৃহত্তর সামাজিক,রাষ্ট্রিয় পরিবেশ যেখানে শিশু বেড়ে উঠে এবং পরবর্তীতে যা তার জীবন ধারনের ভাষা হয়ে উঠে সেটা তার মাতৃভাষা? প্রয়োজনের নিরিখে, ব্যবহার বিচারে প্রধান অথবা প্রথম,দ্বিতীয় এবং তৃতিয় ভাষা এভাবে বললে বিষয়টা খানিক সহজ হয়। মোটামুটিভাবে পৃথিবীর সর্বত্রই দেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর ভাষা তথা দেশের ভাষাকে এবং ব্যক্তি যে ভাষায় বেশী স্বাচ্ছন্দ্য তাকে প্রধান ভাষা বলা হয়। বাঙালির বাংলাদেশে এই প্রধান ভাষা তথা দেশের ভাষাই মাতৃভাষা। মা এখানে আক্ষরিক অর্থে জন্মদাত্রী নন বরং স্বর্গাদপি গরিয়সী জন্মভ’মি এবং এই জন্মভুমির বৃহত্তর জনগোষ্টীর ভাষাই এখানে মাতৃভাষা। এভাবেই বাংলাদেশে মা-মাতৃভ’মি এবং মাতৃভাষা একই আবেগে একসুত্রে গাঁথা। এক্ষণে এ’ আবেগের প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতা নিয়ে কিছু কথা হোক।
শিল্প-সাহিত্য,জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যম হিসেবে ইতিহাসের কুয়াশা ভেদ করে বাংলা ভাষার অগ্রসরমানতা অবিভক্ত বাংলার সাংস্কৃতিক রাজধানী কোলকাতায় উনবিংশ শতকের শেষ দিকে গড়ে উঠা “বেঙ্গল রেনেসাঁ” তথা বাংলা পুনর্জাগরনের সাথে সম্পৃক্ত। বেঙ্গল রেনেসাঁর সার্থক রূপায়ন দেখা যায় অবিভক্ত বাংলার সমাজ সংস্কারে নানা হিতকরি উদ্যোগের মধ্যে। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত অসাম্প্রদায়িক চেতনার যুব গোষ্ঠীর মধ্যে এই পুনর্জাগারনের ছোঁয়ায় যে সাংস্কৃতিক চেতনার উন্মেষ দেখা দেয় তার প্রতিফলন ঘটতে থাকে পর্য্যায়ক্রমে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ প্রতিষ্টা কাল ১৮৯৩ কোলকাতা, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি ১৯১১ কোলকাতা, পুর্ব পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটি ১৯৪২ কোলকাতা, পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সংসদ ১৯৪২ ঢাকা, তমুদ্দন মজলিশ ১৯৪৭ ঢাকা, রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ১৯৪৭-১৯৪৮ ঢাকা, ইত্যাদি সংগঠনের কার্য্যক্রমে। রেনেসাঁর পুরোধা ব্যক্তিত্ব রাজা রাম মোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আর তাঁদের ঘিরে বিকশিত হতে থাকা সমাজচিন্তা,শিল্প-সাহিত্য, দর্শন, তথা জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় পরবর্তীতে বিশ্বখ্যাতি সম্পন্ন মনীষিগণ কেবল বঙ্গ সমাজে নন বিশ্বসমাজেও নতুন আলোর দিশারী হয়ে আবির্ভুত হন। প্রাচ্য দর্শন এবং আধুনিকতার সমন্বয়ে ‘বেঙ্গল রেনেসাঁর উদ্যোগী পুরুষ এবং তাঁদের আলোয় আলোকিত মনীষিেিদর নাম তালিকা দীর্ঘ। এই সংগঠনগুলোর মধ্য থেকেই পশ্চাদপর পূর্ববাংলার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত অসাম্প্রদায়িক চেতনার যুবগোষ্ঠী মুলত: সমাজ সংস্কার,সাংস্কৃতিক বিকাশ, শিল্প-সাহিত্যের চর্চায় বাংলা ভাষাকে অবলম্বন করতে চান দৃঢভাবে। দেশের ভাষা বাংলায় দেশীয় কৃষ্টি-সংস্কৃতির বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার দাবীতে অগ্রণী, প্রত্যক্ষ রাজনীতি সংশ্লিষ্ট কিংবা রাজনৈতিক পরিচয়েই বড় এমন সব মনীষির নাম বাদে, অবলীলায় উঠে আসে মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী,কাজী আবদুল ওয়াদুদ,সূফী মোতাহার হোসেন, স্যার আশুতোষের ছাত্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ছাত্র প্রিন্সিপ্যাল আবুল কাশেমের নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। পাকিস্তানের জন্মেরও আগে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ভারতের উত্তর প্রদেশ নিবাসী ড: জিয়াউদ্দিন আহমদ তার এক নিবন্ধে ভবিষ্যত পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দু ভাষার নাম প্রস্তাব করলে এই মনীষীদের মধ্যে মোহাম্মদ শহিদুল্লা বাংলার পক্ষে তা রুখে দাঁড়ান। বুদ্ধিজীবি জিয়াউদ্দিনের প্রতিধ্বণি করে পরবর্তীতে পাকিস্তানের কায়েদে আজম থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী, প্রদেশ মন্ত্রীরাও একবাক্যে বাংলার ন্যয়সংগত দাবীকে নাকচ করতে থাকলে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবী বুদ্ধিবৃত্তি চর্চার কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে জনমানুষের রাজপথের দাবী হয়ে উঠে। ‘বেঙ্গল রেনেসাঁ’র পাশাপাশি একই সময়ে বাংলা বিশেষত: পূর্ববাংলার যুব মানস সশস্ত্র স্বাধিনতা সংগ্রামের তরঙ্গেও আন্দোলিত হয়েছে। মহাযুদ্ধ,দুর্ভিক্ষ এবং চরম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পটভুমিতে দু:শাসন নিয়ে পাকিস্তানের অভ্যুদয়, কেন্দ্রে পাঞ্জাব সিন্ডিকেট প্রদেশে শাসক মুসলিম লীগের গণবিরোধী তৎপরতা বিশেষত: ঔপনিবেশিক দূরভিসন্ধিতে সাংস্কৃতিক অবদমন নীতির ফলে পূর্ববাংলার রাজনৈতিক দৃশ্যপট দ্রুত পরিবর্তিত হতে থাকে। জন্মলগ্নে পাকিস্তানে অর্থনৈতিক বৈষম্য, রাজনৈতিক বঞ্চনা,সাংস্কৃতিক হীনমন্যতার শিকার এই জনপদের মানুষ সবিস্ময়ে দেখলো মাত্র ৩% উর্দুভাষী পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে সংখ্যগুরু মানুষের বাংলাভাষার দাবী প্রত্যাখ্যাত হয়, নিজস্ব বর্ণমালা বাদ দিয়ে রোমান, আরবী হরফে বাংলা ভাষা লেখার পাকিস্তানী উদ্যোগ ইত্যাদি। ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব, যুক্তবাংলার স্বপ্নভঙ্গ হয়ে যাওয়া সত্বেও যে সব প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন ইতোমধ্যেই তারা পরিবারতান্ত্রিক মুসলিম লীগের খাজা,নবাব প্রজাতির অবাঙ্গালিদের কুটচালে প্রদেশ মুসলিম লীগে হয় কোনঠাসা নয়তো আওয়ামী মুসলিম লীগ, কৃষক প্রজা পার্টি, খেলাফতে রাব্বানি ইত্যাকার রাজনৈতিক দল প্রতিষ্টা করে গণভিত্তি অর্জন করেছেন। পাকিস্তানী উপনিবেশবাদী শাসকদের সমস্ত জোর-জুলুম,দু:শাসন, জাতিগত অবদমনের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় বাংলা ভাষার প্রতি ষড়যন্ত্র। স্রেফ তাহজিব-তমুদ্দুন,বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার দাবীর গন্ডি পেরিয়ে ভাষার দাবী হয়ে উঠে গণ মানুষের প্রাণের দাবী। পূর্ববাংলার ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি স্বরূপ অরাজনৈতিক যুবলীগ হয়ে উঠে এই দাবীর পক্ষে মূল চালিকা শক্তি এবং তার পেছনে এসে দাড়ায় মুসলিম লীগ বিরোধী প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তিসমূহ। বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, ছাত্র-জনতার আত্মদান এবং এর বিপরীতে মুসলিম লীগের কঠোরতর চন্ডনীতি, জাতিগত বিদ্বেষ ফলে সৃষ্ট গণজোয়ারে জাগরিত হয় পূর্ববাংলার জাতিয়তাবোধ। একইভাবে শহীদ মিনার হয়ে উঠে সব রকমের জুলুম-নিষ্পেষনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধের অভয়াশ্রম, শপথের বেদীমূল। ভাষা আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ফসল ঐতিহাসিক যুক্তফ্রন্ট গঠন এবং নির্বাচনে এই ফ্রন্টের নিরঙ্কুশ বিজয়। তারই ধারাবাহিকতায় স্বাধিকার আন্দোলনে বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মুখে বলিষ্ঠ উচ্চারণ উঠে আসে তুমি কে আমি কে বাঙালি, তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা-মেঘনা যমুনা। ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০’র নির্বাচন এবং ৭১’র মুক্তিযুদ্ধে রক্তমূল্যে বাংলাদেশ অর্জন। আত্মপরিচয়ে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতিয়তাবাদ এবং তার স্বাধীন সার্বভৌম ঠিকানা জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ এভাবেই মাতৃভাষা বাংলা ভাষার সাথে আবেগে বাস্তবতায় অবিচ্ছেধ্য বন্ধনে গ্রথিত হয়ে যায়। ভাষার মৌলিক গুরুত্বের পাশাপাশি জাতীয় সংহতিতে অসাম্প্রদায়িক উপাদান হিসেবে তার বলিষ্ট ভ’মিকা এবং সাফল্যের স্মারক বাংলা,বাঙালি এবং বাংলাদেশ আধুণিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানেতো বটেই নৃতত্বের ইতিহাসেও এক অবিস্মরণীয় উত্তোরণ।
বৈশ্বিক পরিমন্ডলে অহংবোধ এমনকি আভিজাত্য প্রকাশে ভাষার ব্যবহার,সভ্যতা-সংস্কৃতির প্রচার প্রসারসূত্রে বাণিজ্য,সাম্রাজ্য বিস্তারে যেমন তেমনি দেশীয় সীমানার মধ্যে থেকেও সামাজিক কৌলিন্য, শ্রেনীগত প্রভুত্ব জাহির করা এবং তা টিকিয়ে রাখার চেষ্টাতেও ভাষার ব্যবহার সর্বজন বিদিত। সামন্তবাদী চেতনায় সংস্কৃত, ল্যাটিন, আরবী ইত্যাদি ভাষার উপর ঐশ্বরিক পবিত্রতা আরোপ করে ধর্মরাজ্যে সাধারণের উপর আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রভ’ত্ব টিকিয়ে রাখার কম চেষ্টা পৃথিবীতে হয়নি। কোথাও দুর্বোধ্যতাকে পবিত্রতাজ্ঞানে সাধারণের উপর তা অত্যাবশ্যকীয় করার চাপ আবার কোথাও বা তাতে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করার যাজকীয়, রাজকীয় মধ্যযুগীয় কঠোরতা এখন বলতে গেলে ইতিহাসের বিষয়বস্তু । ইতোমধ্যে সংস্কৃত,ল্যটিন এবং আরবীর ঐশ্বরিক সাম্রাজ্য নিয়ে মধ্যযুগ কালান্তরে গেলেও মধ্যযুগীয় মানসিকতাসম্পন্ন স্বার্থবুদ্ধির মানুষের সংখ্যা আজকের পৃথিবীতেও কম নয়। মাতৃভাষায় জীবন-জীবিকা অর্জন এবং ধর্মের স্বরূপ অনুধাবন করা মানুষের জন্যে যতটা সহজ এবং ফলপ্রসূ বিদেশী ভাষায় ততটা নয় এই সহজ সত্যটা মেনে নিলে মানুষের পক্ষে ধার্মিক হওয় এবং তার জীবনযাপন স্বচ্ছন্দ হলেও কায়েমী স্বার্থবাদের বাড়া ভাতে ছাই পড়ে। মাতৃভাষা মানুষের জন্যে স্রষ্টার অপার করুনা আবার বিশেষ ভাষার প্রতি স্রষ্ঠার পক্ষপাত এই পরস্পরবিরোধী মতবাদ নিয়ে এবং মানুষে মানুষে ধর্মীয় বিবাদ জিইয়ে রেখে আজও তারা আর্থ-সামাজিক প্রভ’ত্ব বিস্তারে চেষ্টার ত্রুটি করেনা। আধুণিক জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রসর দেশসমূহও ওই মধ্যযুগীয় অপশক্তিকে পুঁজি করে মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে নয়াউপনিবেশবাদ কায়েম করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এক বিশ্বব্যবস্থার মোড়লের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ছত্রছায়ায় ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়িয়ে পড়ছে দেশে দেশে। এই কুপমন্ডুকতা, দুর্বলের উপর সবলের চিরন্তন আক্রোশের বিরুদ্ধে কোন জনপদের ভ’মিপুত্রদের কীভাবে রুখে দাঁড়াতে হয় তার অনুকরণীয় দৃষ্ঠান্ত হতে পারে ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় স্বাধীন,সার্বভৌম বাংলা,বাঙালি ও বাংলাদেশ একক এবং অথবা একীভ’ত আঙ্গিকে। বলাবাহুল্য ইতোমধ্যে ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জাতি সংঘের স্বীকৃতি লাভ করেছে। জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসেবে বাংলার অন্তর্ভুক্তির কথাও শোনা যাচ্ছে। বিশ্বের অনেক দেশে মুলত: প্রবাসী, অভিবাসী বাঙ্গালিদের উদ্যোগে শহীদ মিনার গড়ে উঠছে সোৎসাহে। সুষম উন্নয়নের স্বার্থে শিল্পোন্নত দেশ সমূহ তাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষাকে মর্য্যাদা দিতে এগিয়ে আসছে। এতে বাঙালি হিসেবে আমরা গর্ববোধ করতেই পারি কিন্তু ভোগবাদী দুনিয়ায় বাজার অর্থনীতির থাবাতলে বাস করে বাস্তবতার নিরিখে স্রেফ আত্মতুষ্টির ব্যবহারিক মূল্য নিতান্তই গৌণ।
ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় অধিকতর রক্তক্ষয়ী আন্দোলন-সংগ্রামে স্বাধীন জাতি তার মাতৃভাষার মাধ্যমে জ্ঞান-বিজ্ঞানে উৎকর্ষতা লাভ করবে, জাতীয় পরিচয়ের অহংবোধে বিশ্ব সভায় মর্য্যাদার আসন লাভ করবে এটাই ছিল স্বাভাবিক। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে জাতীয় অহংবোধের উন্মেষ স্বরূপ রাষ্ট্রভাষা বাংলা, প্রজাতন্ত্রের দাফতরিক কাজকর্ম সহ সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন, উচ্চ শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলার স্বীকৃতি এসব বিষয়ে প্রবল উৎসাহ দেখা গেলেও পরবর্তীতে উপর্যুপরি স্বৈরাচারী ফৌজি শাসন এবং তার সুবাদে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ঘাপটি মেরে থাকা আমলাদের কায়েমী স্বার্থবাদী অংশ নানা ছুতো নাতায় রক্তমূল্যে অর্জিত মাতৃভাষার ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করতে থাকে। আত্মসর্বস্ব রাজনৈতিক ‘হারিকিরি’ এতে বাড়তি প্রণোদনা যোগাতে থাকে। ভাবতে আশ্চর্য্য লাগে পাকিস্তান আন্দোলনের কর্মী হয়েও যেখানে প্রগতিশীল বাঙালি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানের গণপরিষদে উর্দূ বাতচিত এড়াতে ইংরেজিতে বক্তব্য রাখতেন সেখানে স্বাধীন দেশের আমলাতন্ত্র পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অংশত: নিজেদের অযোগ্যতা ঢাকতে এবং প্রায়শ:ই হীনমন্যতাবোধ থেকে ফাংশনাল ইংলিশ তথা ‘কেরানীর ইংরেজী’কে প্রাধান্য দিতে থাকেন। একই হীনমন্যতাবোধ কিছু উচ্চ শিক্ষিত আঁতেলদের মধ্যেও দেখা যায় । এরাই ধূয়া তোলেন- বাংলা ভাষায় উচ্চ শিক্ষা সম্ভব নয়, উপযুক্ত পরিভাষার অভাব ইত্যাদি। মুক্তবাজার অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ এবং বহিবির্শ্বে শ্রম রফতানীতেও বিদেশী ভাষা বিশেষত: ইংরেজী জানা আবশ্যক বলে ফতোয়া দেন। বুঝে না বুঝেও আমরাও তাই মেনে যে কোন মূল্যে সন্তান সন্তদিদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, এবং অনুরুপ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে মুক্তকচ্চ হয়ে ছুটি। জ্ঞানার্জনের জন্যে, আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্যে ইংরেজির প্রয়োজন অবশ্যই আছে তবে মাতৃভাষার শক্ত গাঁথুনি ছাড়া অন্য কোন বিদেশী ভাষা হৃদয়ঙ্গম করা এবং তাতে জ্ঞানার্জন করা যে রীতিমত অসম্ভব। তা’ছাড়া হীনমন্যতাবোধ কখনও অহংবোধ’র বিকল্প হতে পারেনা। ভাষা কিংবা জ্ঞান সে যাই হোক, আত্মমর্য্যদাবোধহীন কোন শিক্ষা ব্যক্তি,সমাজ কিংবা জাতীয় জীবনে কখনই মঙ্গল বয়ে আনেনা। আজকের অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীনের দিকে যদি তাকাই তাহলে দেখা যাবে জনসংখ্যার বিচারে ভাষার দিক থেকে চীনারা বিশ্বের এক নাম্বারে। এই কট্টর সমাজতন্ত্রী দেশটি বিপ্লব রফতানীর বদলে প্রযুক্তি রফতানী করে। সস্তা পন্যের পাশাপাশি আন্তর্জাাতিক শ্রমবাজার থেকে রেমিটেন্স আহরনেও বিশ্বে তারা শীর্ষ স্থানীয় কিন্তু গায়ে পড়ে বিদেশে অন্যভাষায় কথা বলতে তাদের দেখা যায়না বললেই চলে। বিদেশীরাই বরং চীনাদের সাথে বণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে চীনা ভাষা শেখে। পক্ষান্তরে অবাক করার মত বিষয় এই যে, আমেরিকার মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশী সংখ্যক লোক আজকের চীনদেশে ইংরেজিতে কথা বলে। মোটকথা এই যে, মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রযুক্তিগত জ্ঞানের চরম শিখরে পৌঁছে আত্মমর্য্যাদার অহংবোধ দিয়ে বিশ্ববাজার প্রায় দখল করার পর সে অবস্থান আরও সংহত করতেই চীনাদের ইংরেজী শেখা।
ব্যবহারিক, বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করলে একুশের চেতনায় বাঙালির প্রাণের মেলা বাংলা একাডেমীর গ্রন্থ মেলা এখন বিভাগীয় শহর সমূহে এমনকি জেলা পর্যায়েও একুশের বইমেলা নামে প্রসারিত হচ্ছে। ফলে দেশের বই বাণিজ্য,প্রকাশনা শিল্প বিকশিত হচ্ছে, গুনে-মানে যা-ই হোক বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা হচ্ছে, পাঠক সংখ্যা বাড়ছে। অনেকেই মনে করেন রাষ্ট্রীয় খরচে এ‘সব কর্ম বিদেশী ভাষা বিশেষত: ইংরেজীতে অনুবাদ করলে বহির্বিশ্বে বাংলা সাহিত্যের যশ-খ্যাতি বাড়বে। সবার সামনে উদাহরণ এইযে, আইনস্টাইনের মৌলিক গবেষণাকর্ম বিশ্ববাসীর কল্যাণে আনতে জার্মান ভাষা কোন বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ঠিকাদার দিয়ে আনা কারেনিন অনুবাদ করাননি লেভ টলস্টয়। রবীন্দ্রনাথ,লালনের সাহিত্য-দর্শন কোন বিজ্ঞাপন ছাড়াই বিশ্ববাসীর নজর কাড়ছে। অতএব, জ্ঞান-বিজ্ঞান শিল্প-সাহিত্যের আন্তর্জাতিক প্রসারতার প্রথম এবং অত্যাবশ্যকীয় শর্ত হচ্ছে চিন্তা চেতনার মৌলিকত্ব এবং বিশ্বমানের উৎকর্ষতা।
এর বাইরে ভাষার জন্যে আত্মাহুতি দেয়া, তার স্মারক শহীদ মিনারে প্রাণের উচ্ছাস এবং যে কোন আন্দোলন-সংগ্রামে শপথের বেদীমূল হিসেবে তার সার্বজনীনতাসহ তাবৎ অর্জন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বিচারে বিশ্ব দরবারে ভাষার তালিকাক্রমে উত্তোরণ কেবল নিষ্ফল ভাবাবেগ, করুন আত্মতুষ্টি হয়েই থেকে যাবে। সত্য বটে, একুশের চেতনাজাত জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের পথচলা নিরঙ্কুশ হয়নি। বিপরীত চেতনা সমাজ জীবনকে কলুষিত করেছে, নৈতিক অধ:পতনের শেষধাপে নিয়ে গেছে। পাশাপাশি এ’কথাও সত্য যে আহত বাঙালি অহংবোধ একুশের চেতনায় রুখেও দাঁড়িয়েছে বারবার। জাতীয় জীবনের এই চড়াই-উৎরাই বেয়েই আজকের যা কিছু ছিটেফোঁটা অর্জন। আধুণিক বিশ্ব সভ্যতায় অদ্যাবধি বাঙালির যা কিছু সেরা অবদান বলে জগৎ স্বীকৃত সেই ‘বেঙ্গল রেনেসাঁ‘র সার্থক উত্তরসূরীরা যেভাবে মাতৃভাষা বাংলার মর্য্যাদার গুরুত্ব তাঁদের উত্তরসূরীদের হাতে তুলে দিয়েছেন এবং তাঁরাও যেভাবে জীবনের বিনিময়ে জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশের পত্তন ঘটিয়ে সেই মর্য্যাদা রক্ষা করেছেন, নুতন প্রজন্ম ততোধিক নিষ্টা,একাগ্রতায় একুশের চেতনাকে বিশ্বমানে উত্তোরন ঘটাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। বাঙালির আর্থ-সামাজিক,সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ধূসর দিগন্তে সেই আভাস এই ফাগুনে,ইতোমধ্যেই সুস্পষ্ট।
Discussion about this post