প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে দেশের অর্থনৈতিক ভিত শক্ত হয়। সেই সঙ্গে তাদের পরিবারে ফিরে আসে সচ্ছলতা। অথচ তাদের বিদেশযাত্রার পথে হয়রানি ও ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে মেডিকেল টেস্ট। কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যগামী প্রবাসীদের অভিযোগ, ঠুনকো সমস্যা বা ঘুষ না দিতে পারায় মেডিকেল টেস্টের আনফিট দেখানো হয়। এ কারণে প্রতিদিন শত শত বিদেশগামীর স্বপ্নভঙ্গ হয়। সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসী শ্রমিকদের ভিসা চূড়ান্ত হলে মেডিকেল টেস্টের প্রয়োজন হয়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিদেশগামীদের কাছ থেকে ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর যোগসাজশে মেডিকেল টেস্টের নামে কিছু প্রতিষ্ঠান অবৈধ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। যারা টাকা দিতে পারে না তাদের এজেন্সির ইশারায় আনফিট দেখানো হয়। বিদেশগামীদের অভিযোগ, স্বাবলম্বী হতে মানুষ কিস্তি নিয়ে কিংবা ভিটেমাটি বিক্রি করে দেশের বাইরে যায়। অথচ দালাল বা এজেন্সিগুলো মেডিকেলের নামে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে সর্বস্বান্ত করছে বিদেশ গমনেচ্ছুদের। তাদের অভিযোগ, মেডিকেল ফিটনেস কার্ড সংগ্রহের প্রতিটি ধাপে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হতে হয়। সাধারণ মেডিকেল পরীক্ষায় ১ হাজার টাকা খরচ হলেও গামকার অধীন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেওয়া হয় ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা। আর টাকা না দিলে আনফিট দেখানোর অভিযোগ রয়েছে মেডিকেল সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে। দেশে মানসম্মত সরকারি-বেসরকারি বেশ কিছু হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকলেও বিদেশ গমনেচ্ছুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য জেলা শহরগুলোতে বাছাই করা হয় পাঁচ থেকে ছয়টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে। ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইনের শ্রমিকদের কুয়েতের ভিসা বের হলে এক মাসেরও কম সময়ে তারা ভিসা প্রসেসিং শেষ করে কাজে যোগদান করেন। অন্যদিকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের মেডিকেলসহ ভিসা প্রসেসিংয়ে পদে পদে ভোগান্তির কারণে শ্রমিক আসতে বিলম্ব হওয়ায় আগ্রহ হারাচ্ছে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সংকুচিত হচ্ছে বাংলাদেশের শ্রমবাজার এবং দেশ বঞ্চিত হচ্ছে রেমিট্যান্স থেকে। নতুন ভিসায় কুয়েতে আসা জয়নাল আহমেদ বলেন, মেডিকেলে দুইবার আমাকে আনফিট দেওয়া হয়েছে। এক্সরে রিপোর্টে বলল বুকের মধ্যে কালো দাগ আছে। আমি পিজি হাসপাতালে পরীক্ষা করালে রিপোর্টে কোনো সমস্যা পাইনি। পরে ৩৫ হাজার টাকায় চুক্তি করলে তৃতীয়বারে মেডিকেলে আমাকে ফিট রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। আমার সঙ্গের অনেকের চুক্তি না করায় মেডিকেলে হয়রানিতে পড়ে ভিসাও বাতিল হয়ে গেছে। অপর এক কুয়েত প্রবাসী জানান, আমার ভাইকে ঢাকার একটি মেডিকেল সেন্টারে পরীক্ষা করালে আনফিট রিপোর্ট দিয়েছে। বাইরে অন্য জায়গায় পরীক্ষা করলে ফিট রিপোর্ট আসে। পরে এজেন্সির সঙ্গে কথা বলে টাকা দিলে ফিট রিপোর্ট দেয়। এ ধরনের হয়রানি বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। বিদেশগামী শ্রমিকদের আসার পথে হয়রানি, প্রতারণা, দালালদের দৌরাত্ম্য আর ভোগান্তি বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতারা।
Discussion about this post