রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান বলেছেন, সংবাদপত্র ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া সম্পূর্ণ স্বাধীন থেকে তাদের মতামত প্রকাশের পূর্ণ অধিকার ভোগ করছে। এ অনুকূল পরিবেশে সংবাদপত্র ও মিডিয়ার দায়িত্ব অপরিসীম। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিকতায় ‘বজলুর রহমান স্মৃতিপদক-২০১১’ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, সংবাদ ও মতামত পরিবেশনে মিডিয়া দেশ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে। তিনি অারো বলেন, ‘বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে লাখো শহীদের আত্মত্যাগে এ স্বাধীনতা অর্জিত হয়। আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস নানাভাবে বিকৃত হয়েছে। স্বার্থান্বেষী মহল তাদের নিজেদের স্বার্থে এটি ব্যবহার করছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। দেশের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।’ রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিকতার জন্য বজলুর রহমান স্মৃতিপদক প্রদান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ ও অজানা তথ্য প্রকাশে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে আমি মনে করি।’ রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বরেণ্য সাংবাদিক বজলুর রহমানের সঙ্গে আমার ব্যাক্তিগত সম্পর্ক ছিল। তিনি ছিলেন সুশিক্ষিত, মার্জিত, সাহসী, প্রচারবিমুখ, অসাধারণ বিনয়ী, মৃদুভাষী, অসম্ভব দৃঢ় প্রত্যয়ী একজন মানুষ। তিনি কখনো অন্যায়-অসত্যকে প্রশ্রয় দিতেন না, আপোষ করতেন না। বজলুর রহমান যে সময়ে সাংবাদিকতা করেছেন, সে সময়ে বেশিরভাগ সরকার এবং কর্তৃপক্ষ ছিল অগণতান্ত্রিক। তবুও, সকল প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠায় ও সাধারণ জনগণের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। আদর্শের প্রতি আজীবন অবিচল থেকে একটি অসাম্প্রদায়িক, ন্যায়ভিত্তিক ও শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় যেসব ব্যক্তি নিরবে কাজ করে গেছেন তাদের মধ্যে একজন হলেন বজলুর রহমান। রাষ্ট্রপতি বজলুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অনুসন্ধানী কর্মের জন্য যারা পুরুষ্কৃত হয়েছেন তাদের প্রতি অভিনন্দন জ্ঞাপন করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি আশা করি, আমাদের তরুণ সাংবাদিক সমাজ প্রয়াত বজলুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে অবদান রাখবে।’ রাষ্ট্রপতি সাংবাদিক বজলুর রহমানের সহধর্মিনী কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘সহধর্মিনী হিসেবে মতিয়া চৌধুরী তার নীতি ও আদর্শ সমুন্নত রেখে দেশ ও জনগণের কল্যাণে যে অবদান রেখে যাচ্ছেন, তা অনুকরণীয় ও প্রশংসনীয়।’ রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান কৃষিমন্ত্রী, মন্ত্রীপরিষদের সদস্য, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও জুরিবোর্ডের সদস্য এবং বজলুর রহমান স্মৃতিপদক প্রাপ্তদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। এছাড়া মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, সাংসদ, সাংবাদিক, বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক ও সুধীজনের উপস্থিতিতে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য দানকালে পুরস্কার প্রদান বিষয়ক জুরি বোর্ডের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘আমাদের দায় একটি। আর তা হলো, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়ন করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়ন করতে সাংবাদিকতাকে কাজে লাগাতে হবে। অনেক বিষয়ে সাংবাদিকতায় পুরস্কার দেওয়া হয়। কিন্তু মক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিকতায় পুরস্কার আর দ্বিতীয়টি নেই। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার যখন অসমাপ্ত কার্যক্রম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছে, এ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিবেদনগুলো তখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’ অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্য-সচিব মফিদুল হক বলেন, সাংবাদিকতায় প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক, মুদ্রণ ও অনলাইন উভয় মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রিপোর্টিং-এ চতুর্থবারের মতো বজলুর রহমান স্মৃতি পদক ঘোষণা এবং পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। প্রতিবছর আমরা এ পুরস্কারের আয়োজন করেছি।’ তিনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিবেদনের জন্য পুরস্কার প্রদান এবং রিপোর্ট বিচার বিশ্লেষণের দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের কাছে ন্যস্ত করার জন্য উপস্থিত সকলের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি আরো বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ একচল্লিশ বছর আগের একটি মহতী ঘটনা, আর সাংবাদিকতা চলমান বাস্তবের প্রতিচ্ছবি মেলে ধরতে অভিপ্রায়ী। দুইয়ের মধ্যে সংযোগ আপাত বিচারে ততো সবল মনে না হলেও আমাদের জীবন বাস্তবতায় মুক্তিযুদ্ধের উপস্থিতি যে অত্যন্ত প্রবল সেটা ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে না। মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার পেছনে ছিল দীর্ঘ গণসংগ্রামের ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনে অগণিত মানুষের আত্মদান কখনো ভোলার নয়।’
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বক্তব্যের আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ১৪টি বিশেষ প্রতিবেদনের জন্য সমকালের স্টাফ রিপোর্টার আবু সালেহ রুনিকে প্রিন্ট মিডিয়ায় এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় এটিএন নিউজে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ১১টি প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য বার্তা বিভাগকে বজলুর রহমান স্মৃতি পদক-২০১১ এবং ১ লাখ টাকা করে পুরস্কার প্রদান করেন। এটিএন নিউজের বার্তা বিভাগের পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন মুন্নী সাহা। উল্লেখ্য, এবার চতুর্থবারের মতো বজলুর রহমান স্মৃতি পদক-২০১১ প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রিন্ট মিডিয়ার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন জুরি বোর্ডের সদস্য এবং চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করেন জুড়ি বোর্ডের অপর সদস্য মেজর (অব.) এ এস এম শামছুল আরেফিন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে এ জুরিবোর্ড গঠিত হয়। এ বছর ৩১ জন সাংবাদিক এবং ২০ জন নির্মাতার মধ্যে থেকে বজলুর রহমান স্মৃতি পুরস্কারের জন্য চূড়ান্ত বিজয়ীদের মনোনীত করা হয়।
Discussion about this post