সাখাওয়াত হোসেন সেলিম, ইউএসএ নিউজ : যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাস জীবন যাপন করছেন , নানা ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন – এমন বাংলাদেশীর সংখ্যা এখন কম নয়। এ সফলতার পথ পাড়ি দিতে কম-বেশী সবাইকে অবতীর্ণ হতে হয়েছে কঠিন জীবন সংগ্রামে। অনেককেই এখানে জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতে মুখোমুখি হতে হয়েছে ‘অড জব’র। ‘অড জব’র সিঁড়ি বেয়ে-ই পৌঁছতে হয়েছে সফলতার শীর্ষে। জীবন যুদ্ধে সফলরা তাদের সে সাফল্য গাঁথা যেমন গর্ব করে বলেন, পাশাপাশি অশ্রু সজল বেদনা বিদূর কন্ঠে ‘অড জব’কে সাফল্যের পেছনের অবদান হিসেবেও স্বীকৃতি দিতে কুন্ঠাবোধ করেন না। সফলদের কেউ কেউ আবার নিজেকে গর্ব করে পরিচয় দেন ‘কিং অব অড জবস’ হিসেবে। তবে এর ব্যতিক্রমও যে নেই তা নয়। তবে তাদের সংখ্যা হাতে গোনা। প্রবাসের ব্যতিক্রমী এমন সব সফলদের কেউ কেউ তুলনা করে থাকেন ‘সোনার চামক মুখে নিয়ে জন্ম নেয়া’দের সাথে। কারণ প্রবাসে তাদের কঠিনতম বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হয়নি। এমনই একজন সফল প্রবাসী হচ্ছেন মাফ মিসবাহ উদ্দিন। নামেই যিনি সমধিক পরিচিত। তাকে ‘অড জব’ নামক সে পথটি পাড়ি দিতে হয়নি। এসছেন এবং জয় করেছেন। তিনি আমেরিকায় মূলধারায় নিজের এবং বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। মূলধারায় সফল এ রাজনীতিক আমেরিকান ফেডারেশন অব স্টেট , কাউন্টি অ্যান্ড মিউনিসিপ্যাল এমপ্লয়িজ, এএফএল সিআইও, ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল ৩৭ এর ট্রেজারার এবং লোকাল ১৪০৭ এর নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। এ গুরত্বপূর্ণ পদ দু’টি শুধু বাঙ্গালী হিসেবেই নন, এশিয়ান আমেরিকান হিসেবেও একমাত্র মাফ মিসবাহ-ই অলংকিত করেন। সফলতার সাথে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। বয়ে এনেছেন বাংলাদেশীদের জন্য বিরল সম্মান, অনেক সুফল। কমিউনিটি ও দেশের উন্নয়নে রেখে চলেছেন নানামুখি অবদান। এ পদ দু’টি এর আগে আমেরিকান শ্বেতাঙ্গদের করায়ত্তে ছিলো। মাফ মিসবাহ উদ্দিন সম্প্রতি মুখোমুখি হন বার্তা সংস্থা ইউএসএ নিউজ এর। সাক্ষাতকারে ওঠে আসে তার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের নানা দিক। মূলধারায় তার অসামান্য অবদানের কথা। কিংবদন্তীতুল্য এশিয়ান-আমেরিকান মূলধারার রাজনীতিক মাফ মিসবাহর প্রবাস জীবনে শুরুটা অন্য আর দশ জনের চেয়ে অনেকটা আলাদা। তিনি আমেরিকার জীবনের শুরুটা করেছেন গ্রাজুয়েট টিচিং এসিসটেন্সশীপ এর মাধ্যমে। ওপরের ক্লাসে পড়েছেন, নিচের ক্লাসে পড়িয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা বলস্টেট ইউনিভার্সিটিতে গ্রাজুয়েট টিচিং এসিসটেন্সশীপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন ১৯৮৪ সালের ২৮ আগস্ট। এর আগে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি গণিতে অনার্স সহ মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। ১৯৮০ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেমোগ্রাফিতে দ্বিতীয় মাস্টার্স ডিগ্রি নেন। এ বিষয়ে তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ১৯৮৪ সালে আমেরিকা আসার আগ পর্যন্ত তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ডব্লিউএইচও (হু) এর একটি প্রকল্পে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। মাফ মিসবাহ ১৯৮৬ সালে বল স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে একচ্যুারিয়াল সাইন্সে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এটি ছিল তার তৃতীয় মাস্টার্স ডিগ্রি। ওই বছরই তিনি নিউইয়র্ক সিটির পেনশন ডিপার্টমেন্টে একচ্যুয়ারি হিসেবে যোগ দেন। এর সুবাধে তিনি নিউইয়র্ক সিটির স্পন্সরে স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে আমেরিকায় থাকার সুযোগ লাভ করেন। এর পর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। নিউইয়র্ক সিটিতে আসার পর ১৯৮৬ সাল থেকে বসবাস শুরু করেন ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টারে। ওই সময় ব্রঙ্কসে বাংলাদেশীদের বসবাস ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ছিনতাই, মারামারি, খুন-খারাবি ছিল বলতে গেলে নিত্য দিনের ঘটনা। এর প্রতিবাদী কন্ঠস্বর হিসেবে কমিউনিটির পাশে দাঁড়ান মাফ মিসবাহ। নির্বাচিত হন পার্কচেস্টার কন্ডোমিনিয়াম এর বোর্ড অব ডাইরেক্টর। ১৯৯২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত এক যুগ কাল তিনি সফলতার সঙ্গে এ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ব্রঙ্কসকে সন্ত্রাস , ছিনতাইমুক্ত নিরাপদ এলাকা হিসেবে গড়তে নের্তৃত্ব দেন। মূলতঃ তখন থেকেই বাঙ্গালীরা ব্রঙ্কসকে তাদের নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে বেছে নিতে শুরু করেন। নিউইয়র্কের মধ্যে ব্রঙ্কস এখন বাংলাদেশী অধ্যুষিত অন্যতম এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। মাফ মিসবাহ নিউইর্য়ক সিটিতে কর্মরত একাউনটেন্ট, ট্যাক্স অডিটর ইউনিয়ন লোকাল ১৪০৭ এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ২০০০ সালে। এশিয়ান আমেরিকানদের মধ্যে তিনিই প্রথম এ পদে নির্বাচিত হবার বিরল সম্মান লাভ করেন। এর পাশাপাশি ২০০৪ এ তিনি আরেকটি বিরল দায়িত্ব লাভ করেন প্রথম এশিয়ান আমেরিকান হিসেবে। তা হচ্ছে নিউইয়র্ক সিটির ৫৬টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত ডিস্ট্রিক্ট (ডিসি)-৩৭ এর ট্রেজারার নির্বাচিত হওয়া। ডিসি-৩৭ এর মেম্বার সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজার। নিউইয়র্ক সিটিতে কর্মরত টিচার এবং পুলিশ অফিসার ছাড়া সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী (সাধারণ কেরানী থেকে ইঞ্জিনিয়ার, সাইন্টিস্ট পর্যন্ত) ডিসি-৩৭ এর সদস্য। এসকল সদস্যের ৪০০ মিলিয়ন ডলারের বেনিফিট পরিচালনা করেন ডিসি-৩৭ এর ট্রেজারার। মাফ মিসবাহ ২০০৪ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত ডিসি-৩৭ এর ট্রেজারার হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছরের জানুয়ারীতে। সিটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে অসম্ভব জনপ্রিয় এ নেতা কর্মচারীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী আগামী নির্বাচনেও অংশ নেবেন বলে জানান। মাফ মিসবাহ জানান, তিনি লোকাল ১৪০৭ এ এক যুগ ধরে (২০০০-২০১২) দায়িত্ব পালন করে আসছেন। নিউইিয়র্ক সিটির কর্মরত একাউনটেন্ট, ট্যাক্স অডিটর, ইকোনমিস্ট, বুককিপার, বেনিফিট এক্সজামিনার সহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ২৫০০ কর্মকর্তা এর সদস্য। সিটি মেয়রের অফিসের মাধ্যমে সদস্যদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার বিষয়ে কাজ করেন লোকাল ১৪০৭ এর প্রেসিডেন্ট। মাফ মিসবাহ জানান, তিনি ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টারে আইন শৃঙ্খলার উন্নয়ন ছাড়াও লোকাল ৮০৮ এর বিল্ডিং মেইনটেনেন্স পোটার হিসেবে বেশ ক’জন বাঙ্গালীকে চাকরি দিয়েছেন। সেখানে মুসলমান কর্মচারীদের জন্য জুমার নামাজ আদায়েরও ব্যবস্থা করে দেন তিনি। তিনি জানান, লেবার মুভমেন্টে আসার পর তার এবং অন্যান্য ইমিগ্রেন্ট কমিউনিটি লিডারদের প্রচেষ্টায় সিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে নিউইয়র্ক সিটিতে দু’ঈদে ৩ দিন করে ফ্রি পার্কিং ব্যবস্থা চালু হয়। গত ১০ বছর যাবত সিটির মুসলমানরা এ সুবিধা ভোগ করছেন। মাফ মিসবাহ জানান, ঈদের দিন পাবলিক স্কুলে ছুটির বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করা না গেলেও দু’ঈদের দিন স্কুলগুলোতে যেন কোন পরীক্ষা না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করা গেছে। তিনি জানান, অন্যান্য কমিউনিটির নের্তৃবৃন্দকে নিয়ে আন্দোলনের ফসল হিসেবে সিটি কাউন্সিলে দু’ঈদের ছুটির বিলটি ৪৯-০ ভোটে গৃহীত হয়। কিন্তু মেয়রের ভেটোর কারণে বিলটি আলোর মুখ দেখেনি। তবে আশার কথা, ঈদের ছুটি সম্পর্কিত আরেকটি বিল বর্তমানে নিউইয়র্ক স্টেট ও সিনেটে বিবেচনাধীন রয়েছে। মাফ মিসবাহ জানান, ২০০৮ সালে নির্বাচিত ডেমোক্রেটিক ডেলিগেট হিসেবে কলারাডোর ডেনবার্গে অনুষ্ঠিত ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে একমাত্র বাঙ্গালী ডেলিগেট হিসেবে যোগ দান করেন তিনি। ওই সম্মেলনে অন্যান্য কমিউনিটির সরব প্রতিনিধিত্ব থাকলেও বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার তেমন প্রতিনিধিত্ব ছিল না। যা দেখে তিনি হতাশ হন। ওই সময়ই দক্ষিণ এশিয়ান কমিউনিটিকে কিভাবে মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করে ক্ষমতাশালী করা যায়, তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করেন তিনি। ওই বছরই তিনি দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত ৮টি দেশের অভিবাসীদের সমন্বয়ে গঠন করেন ’এলায়েন্স অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবার’ (অ্যাসাল)। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মাফ মিসবাহ অ্যাসালের ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অ্যাসালের মাধ্যমে বাংলাদেশীসহ দক্ষিণ এশিয়ানদের মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে কমিউনিটির সুযোগ-সুবিধা, অভাব- অভিযোগ মূলধারার রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে।
বাংলাদেশে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর জন্য অ্যাসাল আমেরিকান কংগ্রেসে লেখা-লেখি করে। এছাড়া বিভিন্ন দেশে মানবেতর জীবন-যাপনকারী সাউথ এশিয়ানদের জীবনমান উন্নয়নেও কাজ করছে সংগঠনটি। ইরাক ও লিবিয়ায় যুদ্ধকালীন আটকা পড়াদের উদ্ধারে, বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পে শিশু শ্রমিকদের কাজের পরিবেশসহ বেতন-ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে আমেরিকান কংগ্রেসে লেখা-লেখি করে অ্যাসাল। এতে অনেক সুফলও পাওয়া গেছে।
মাফ মিসবাহ জানান, তার সংগঠন ডিসি-৩৭ এর পক্ষ থেকে ২০০৮ সালে বাংলাদেশে প্রলয়ংকারী সিডরে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশ হাজার ডলার আর্থিক সাহায্য প্রদান করা হয়।
তিনি জানান, কুইন্সে এসেম্বলি ডিস্ট্রিক্ট -২৪ পুনর্গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে অ্যাসাল। যার ফলে ওই আসনটি এখন দক্ষিণ এশিয়ানদের সম্ভাব্য আসন হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। মাফ মিসবাহ বলেন, অ্যাসাল ড্রিম এ্যাক্টের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। নিউইয়র্ক স্টেটে বিবেচনাধীন বিলটি পাশ করার জন্য তার সংগঠন জোরালো লবিং করে চলেছে। বিলটি পাশ হলে নিউইয়র্কে অবৈধভাবে অবস্থান করা ১৫-৩৫ বছর বয়সী ছাত্র-ছাত্রীরা আমেরিকান ছাত্র-ছাত্রীদের মতই সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। মাফ মিসবাহ জানান, অ্যাসাল সিটি কর্র্তৃক বিভিন্ন স্কুল ক্লোজ করা প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধেও প্রবল প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।
মাফ মিসবাহ জানান, অ্যাসালসহ অন্যান্য কমিউনিটি নের্তৃবৃন্দ নিউইয়র্ক স্টেট মুসলিম এডভাইজারী কাউন্সিল বিল পাশে জোড়ালো ভূমিকা রাখছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশীদের সাহায্য কামনা করেছেন তিনি।বিলটি বর্তমানে নিউইয়র্ক স্টেট এসেম্বলী এবং স্টেট সিনেটে ভোটাভোটির অপেক্ষায় রয়েছে। বিলটি পাশ হলে নিউইয়র্ক স্টেট এবং সিনেটে ইসলাম বা মুসলমানদের বিরুদ্ধে কোন প্রস্তাব / বিল আসলে মুসলিম কাউন্সিল তা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে। এখন এ্টা পাশ করতে হলে নিউইয়র্ক স্টেটে বসবাসরত বাংলাদেশীসহ প্রায় ১০ লাখ মুসলমানকে সক্রিয় ও সোচ্চার হতে হবে।
মাফ মিসবাহ জানান, নিউইয়র্ক সিটি নির্বাচনে এখন থেকে বাংলা দো’ভাষী নিয়োগের সিদ্ধান্ত মোটামুটি চূড়ান্ত হয়েছে। এছাড়া সিটি নির্বাচনের ব্যালটও আগামীতে বাংলায় হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। নিউইয়র্ক সিটি বোর্ড অব ইলেকশনের শুনানীতে এ বিষয়ে জোরালো বক্তব্য রাখেন তিনি।
মাফ মিসবাহ বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি যুক্তরাষ্ট্রে করে কোন লাভ নেই।এ রাজনীতি কমিউনিটি কিংবা দেশের কোন উপকারে আসছেনা। বরং এখানে বাংলাদেশের রাজনীতি চর্চার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের পরিবর্তে দেশের ভাবমূর্তি ভূলুন্ঠিত করা হচ্ছে। প্রকৃত অর্থে কমিউনিটি এবং দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হলে মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে হবে। আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে নের্তৃত্বে আসতে হলে বাংলাদেশীদের দেশীয় রাজনৈতিক ও আঞ্চলিক মত ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কমিউনিটি ও দেশ সেবায় সত্যিকার ভ’মিকা রাখতে হলে বাংলাদেশী আমেরিকানদের মূলধারার রাজনীতিতে নের্তৃত্বের আসনে আসতে হবে।
তিনি বাংলাদেশীদের মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সময় এসেছে বাংলাদেশী অভিবাসীদের মূলধারায় প্রতিনিধিত্ব করার। মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা মানে নিজেদের ক্ষমতাহীন করে রাখা। আর মূলধারায় সম্পৃক্ত হওয়া মানেই নিজেদের ক্ষমতাশালী করা। ক্ষমতাবানদের বৈষম্যের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকেনা। উল্টো দুর্বল ও অসহায়দের পাশে দাঁড়াতে পারেন। কমিউনিটি ও দেশ সেবায় সত্যিকার ভ’মিকা রাখতে হলে বাংলাদেশী আমেরিকানদের মূলধারার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ অনিবার্য।
মিসবাহ বলেন, নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ কর্তৃক বিভিন্ন মসজিদ ও ইসলামী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর নজরদারী যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান পরিপন্থী। এটা তাদের পরিহার করা উচিত। মুসলিম কমিউনিটির পাশাপাশি অন্যান্য কমিউনিটিকেও বিষয়টির প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে মুসলিম কমিউনিটিকেও নিজেদের চরিত্র ও আচার ব্যবহার দিয়ে অন্যদের ভ্রান্তি দূর করতে হবে। আরো বেশি মূলধারার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে হবে।
মাফ মিসবাহ বলেন, আমাদের কমিউনিটির সমস্য্ াঅনেক।এর মধ্যে এখানে ইমিগ্রেন্ট হয়ে আসা বৃদ্ধ মা-বাবাদের অনেককেই মানবেতর জীবন-যাপনের মুখোমুখি হতে হয়। যা পীড়াদায়ক। তিনি সম্প্রতি ঘটে যাওয়ায় একটি মর্মান্তিক ঘটনার উদাহরণ টেনে বলেন, কুইন্সে এক বাংলাদেশী তার বাবাকে নিয়ে আসেন আমেরিকায়। কিছুদিন বাসায় অবস্থানের পর স্ত্রীর আপত্তির মুখে বাবাকে রেখে আসেন একটি বৃদ্ধাশ্রমে। মাঝে মধ্যে বাবাকে দেখতে যেতেন সেখানে। দীর্ঘ ছয়মাস পর বাবাকে পুনরায় বৃদ্ধাশ্রমে দেখতে গিয়ে ওই বাংলাদেশী জানতে পারেন তার বাবা মারা গেছেন। লাশ কোথায় জানতে চাইলে বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ তাকে জানায়, লাশ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। মাফ মিসবাহকে এঘটনাটি দারুন ভাবে ব্যথিত করে। এ ঘটনা জানার পর, তিনি দক্ষিণ এশিয়ার কৃষ্টি, কালসার ও ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি লক্ষ্য রেখে একটি এজিং সেন্টার (বৃদ্ধাশ্রম) স্থাপনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। এবিষয়ে কমিউনিটিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
মাফ মিসবাহর দেশের বাড়ি লক্ষœীপুর জেলার রামগঞ্জে। তিনি স্ত্রী, ৪ ছেলে ও ১ মেয়েসহ বর্তমানে নিউইয়র্কে বসবাস করছেন। স্ত্রী মাজেদা আক্তার উদ্দিন (বিউটি) ’এলায়েন্স অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবার’ (অ্যাসাল) এর ওম্যান কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ছেলে-মেয়েরা লেখা-পড়া করছে।
Discussion about this post