মঈন উদ্দিন সরকার সুমন:
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মেয়েদের মত কোন অংশে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশের নারীরা। শুধু শহরের মেয়েরা নয় অজোঁপারা গাঁয়ের মেয়েরাও এখন এগিয়েছেন পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। জীবন সংগ্রামে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে থাকতে আপ্রাণ চেষ্টা করে চলছেন। একই সাথে স্বামীর কাঁদে কাদ মিলিয়ে সমান অধিকারে নিজেকে সংসারের জন্য বিলিয়ে দিচ্ছেন। সংসারের পাশাপাশি সামাজিক সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রেখেছে সাফল্যের ছাপ। এ সাফল্য শুধু একটা জায়গায় সীমাবদ্ধ নয়। দেশে এবং বিদেশে উভয় জায়গাতেই সমান ভাবে সমাদৃত।
কুয়েতে আছে প্রায় তিন লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশী, এদের সবাই যে যার মত কাজ কর্ম ব্যবসা বানিজ্য নিয়ে প্রবাস জীবন অতিবাহিত করছেন। স্বপরিবারে অবস্থানরত প্রবাসীদের গৃহিনীরা স্বামী সংসার দেখার পাশাপাশি সংসারে আলাদা একটু স্বচ্ছলতা আনতে অথবা অবসর সময় কাটাতে কর্মজীবনে পা রাখেন।
সাথী চৌধুরী, আমেনা আক্তার সহ আরো অসংখ্য কুয়েত প্রবাসী গৃহিনী কর্ম জীবন বেছে নিয়েছেন। সংসার দেখা, বাচ্চাদের মানুষ করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং উপস্থিত হন অনায়াসেই। কুয়েত প্রবাসী সাথী চৌধুরী এবং আমেনা আক্তার ও তাদের স্বামীদের সাথে কথা বলে জানা যায় পরিবর্তনের ইতিকথা।
সাথী চৌধুরী ১৯৯৫ সালে স্বামীর সাথে কুয়েত আসেন দীর্ঘ পাঁচ বছর গৃহিনী হিসেবেই প্রবাস জীবন অতিবাহিত করেন। পাঁচ বছর পর দেশে বেড়াতে এসে কুয়েত যেতে অনিহা প্রকাশ করেন। স্বামী শওকত হোসেন চাকুরি করার প্রতিশ্রুতি দিলে আবার কুয়েত আসেন সেই থেকে কর্ম জীবন শুরু। ভাষা না জানা কোন কাজে অনভিজ্ঞ সাথী এখন একজন দক্ষ কর্মী। কুয়েতে সুনামধন্য কোম্পানি আল গানিম এর ফার্মাসিটিক্যাল ডিপার্টমেন্টে সহকারী ফার্মাসিষ্ট হিসেবে একমাত্র বাংলাদেশী মহিলা সাথী চৌধুরী কাজ করেছেন প্রায় ১০ বছর। ১০ বছরের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি অভিজ্ঞতার খাতায় যোগ করলেন ট্রাভেল এজেন্সি পরিচলনার কর্মদক্ষতা। বর্তমানে কেপিকো ট্রাভেল এজেন্সিতে কর্মরত আছেন।
বড় মেয়ে কানাডায় উচ্চ শিক্ষার জন্য ওখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছে ছোট ছেলে কুয়েতে একটি স্কুলে অধ্যয়নরত। স্বামী সহ এক মেয়ে এক ছেলের ছোট্ট সংসার নিয়ে সুখেই আছেন।
আমেনা আক্তার রেনুর বেলায়ও এর বিপরীত ঘটেনি। ১৯৯০ সালে ১৭ জুলাইয়ের দিকে স্বামীর সাথে কুয়েত প্রবাসীর খাতায় নাম লেখান, শুরু হয় জীবন যুদ্ধ। অনেকের মত শুধুমাত্র গৃহীনির সারিতে থাকেননি স্বামীকে সহযোগিতা করার কথা চিন্তা করে স্বামীর কাঁদে কাদ মিলিয়ে কর্মে যোগদেন। সল্প শিক্ষিত হয়েও স্বামী সংসারের কাজ শেষে বাকি সময় অযথা নষ্ট না করে কর্ম করে সংসারে আলাদা সচ্ছলতা নিয়ে আসেন। তিনি ফিলিপাইন, ইন্ডিয়ান সহকর্মীদের সাথে পাল্লা দিয়ে কর্ম করে নিজ মেধা আর দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
কুয়েতে অনেকে স্বপরিবারে বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে পুরুষের পাশাপাশি অনেক গৃহিনী কর্মজীবীর সারিতে দাঁড়িয়ে রেমিটেন্স যোদ্ধার খাতায় নাম লিপিবদ্ধ করেছেন। বর্তমান যুগে পুরুষ শাসিত সমাজ বলে যারা অপবাদ দেয় এবং নারীদের ক্ষমতায়ন নিয়ে যখন সবাই চিন্তিত তখন সাথী ও আমিনার মত অনেক নারী দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়ায় এই সমাজে। জাতীয় কবি নজরুলের সেই বিখ্যাত কবিতার লাইন “বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর” কথাটি অক্ষরে অক্ষরে সত্যি প্রমানিত করেন এমন কিছু নারী।
ভিডিও রিপোর্ট দেখুন
https://youtu.be/48ONhLw0qsI?t=225
Discussion about this post