তুরস্কে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ (ইউএসজিএস) সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সিরিয়া সীমান্তের কাছে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এতে এ পর্যন্ত সিরিয়া এবং তুরস্ক মিলিয়ে অন্তত ১১৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তুরস্ক এবং সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা দ্রুতই বাড়ছে। তুরস্কে এখনো পর্যন্ত ৭৬ জন নিহত এবং ৪৪০ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা। অন্যদিকে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জানিয়েছে দেশটিতে অন্তত ৪২ জন নিহত এবং দুই শতাধিক আহত হয়েছে। মার্কিন ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা বলছে, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৮ এবং এটি স্থানীয় সময় ভোর সোয়া চারটার দিকে আঘাত হানে। গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে এর গভীরতা ছিল মাত্র ১৭.৯ কিলোমিটার। ভূম্পিকম্পটি রাজধানী আঙ্কারা এবং তুরস্কের অন্যান্য শহরেও অনুভূত হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট পুরো অঞ্চল জুড়েই কম্পন অনুভূত হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, অনেক ভবন ধসে পড়েছে এবং বহু মানুষ ভেতরে আটকা পড়েছে। তুরস্কের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সুলেইমন সইলু বলেন, ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে গাজিয়ানতেপ, কাহরামানমারাস, হাতায়, ওসমানিয়ে, আদিয়ামান, মালাতিয়া, সানলিউরফা, আদানা, দিয়ারবাকির এবং কিলিস। প্রতিবেশি দেশ সিরিয়া, লেবানন এবং সাইপ্রাসেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। লেবাননের রাজধানী বৈরুতের শিক্ষারী মোহামাদ এর ছামা বলেন, “আমি কিছু একটা লিখছিলাম এবং হঠাৎ করেই পুরো ভবন কাঁপতে শুরু করে। আমি বুঝতে পারছিলাম না যে কী হচ্ছে। “আমি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম এবং আমার ভয় হচ্ছিলো যে সেগুলো ভেঙে পড়বে। প্রায় ৪-৫ মিনিট ধরে এটা চলে এবং পুরো বিষয়টি ভয়ংকর ছিল। এটা অভূতপূর্ব ছিল।” দিয়ারবাকিরে থাকা বিবিসির তুরস্ক প্রতিনিধি বলেন, শহরটির একটি শপিংমল ধসে পড়েছে। গাজা উপত্যকায় থাকা বিবিসির প্রযোজক রুশদি আবুয়ালুফ বলেন, তিনি যে বাড়িতে থাকেন সেখানে প্রায় ৪৫ সেকেন্ড ধরে কম্পন অনুভূত হয়েছে। স্থানীয় সিসমোলজিস্টরা ভূমিকম্পটির মাত্রা ৭.৪ ছিল বলে জানাচ্ছেন। তারা বলছেন যে, ভূমিকম্পটি আঘাত হানার কয়েক মিনিট পরেই দ্বিতীয় আরেকটি কম্পন অনুভূত হয়। তুরস্ক পৃথিবীর অন্যতম সক্রিয় ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চলগুলোর একটিতে অবস্থিত। এর আগে ১৯৯৯ সালে দেশটির উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল। ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্কে তাৎক্ষণিক সহায়তার নির্দেশ বাইডেনের এদিকে, ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্কে উদ্ধার তৎপরতায় সহায়তার নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। একই সঙ্গে ভয়াবহ এই ভূমিকম্পের ঘটনায় গভীর উদ্বেগের কথাও জানিয়েছে দেশটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তুরস্কে উদ্ধার তৎপরতায় সহায়তার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নযন সংস্থাকে তাৎক্ষণিক নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি আরও বলেন, “আমি ইতোমধ্যে তুরস্কের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং জানিয়েছি- আমরা সমস্ত প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত আছি। আমরা তুরস্কের সাথে সমন্বয় করে পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকব।” জানা গেছে, স্থানীয় সময় সোমবার ভোরে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় কাহরামানমারাস প্রদেশে এই ভূমিকম্প আঘাত হানে। সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপের (ইউএসজিএস) তথ্যানুযায়ী, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৮ এবং এর উৎসস্থল ছিল দক্ষিণ তুরস্কের গাজিয়ানটেপ প্রদেশের পূর্ব দিকে নুরদাগি শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার পূর্বে ভূগর্ভের প্রায় ২৪.১ কিলোমিটার গভীরে। তবে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সি জানিয়েছে, তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে আঘাত হানা ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭.৪ এবং উৎপত্তিস্থল ছিল পাজারচিক জেলায়। এটি ঘটে ৭ কিলোমিটার গভীরে। আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিয়ারবাকির ও গাজিয়ানটেপসহ অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব প্রদেশ এবং লেবানন ও সিরিয়া, সাইপ্রাসসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতেও এই ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। আবহাওয়াবিদদের মতে, শক্তিশালী ভূমিকম্পের পরে আফটারশকগুলো কয়েক ঘণ্টা এবং এমনকি কয়েক দিনও অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে, সিরিয়ায় এই ভূমিকম্পে কমপক্ষে ১১১ জন নিহত ও পাঁচ শতাধিক আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সিএনএন। তুর্কি সীমান্তবর্তী আলেপ্পো, লাটাকিয়া, হামা ও টারতুস এলাকায় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। সূত্র: বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য ন্যাশনাল নিউজ, সিএনএন, আনাদোলু এজেন্সি
Discussion about this post