আমরা প্রবাসীরা আমাদের সুখ, দুঃখ, সুবিধা-অসুবিধা, মৌলিক অধিকারের কথাগুলো বলতে পারি না। আমরা আমাদের কথা আমাদের মতো বলতে চাই। দেশ-বিদেশে প্রবাসীরা পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে যাদের অবদান সবচেয়ে বেশী। মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরা, হাতে গোনা কিছু প্রবাসী ব্যতীত বাকি সবাই বঞ্চিত তাদের অধিকার থেকে, হয়রানির শিকার প্রতিটি কাজে। আর হাতে গোনা যে কয়েকজনের কথা বললাম তারাও এই হয়রানির কথা হয়তো অকপটে স্বীকার করবেন না। কারণ পয়সার বিনিময়ে সকল সুযোগ-সুবিধার রাস্তা তারা তাদের মতই তৈরি করে নেন।
প্রবাসীরা বিদেশ মনের আনন্দে করেন না। তাদের পরিবারের চাহিদা মেটাতে, সমাজে একটু সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে বাঁচার লড়াইয়ে জীবন যৌবন বিসর্জন দেন। সরকার থেকে শুরু করে সবাই প্রবাসী প্রবাসীদের আলাদা জাতি হিসেবে দেখেন। আবার সেই জাতিকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ যেখানে- সেখানে লিঙ্গ, জাতি, ধর্মের সমান অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন বৃথা বৈকি!
প্রবাসীদের কল্যাণে সরকারের উদ্যোগগুলো অবশ্যই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। কিন্ত কথা হলো সেই উদ্যোগ কতটা বাস্তবায়ন হয় তা দেখার বিষয়। প্রবাসীরা দেশের জন্য যুদ্ধ করেন, প্রবাসীরা এই, প্রবাসীরা সেই এমন প্রশংসায় পঞ্চমুখ প্রবাসীদের প্রতি বাণী শুনিয়ে যাচ্ছেন। প্রবাসীরাও বাণী শুনে মনকে সান্তনা দেবার চেষ্টা করেন। অনেক ক্ষেত্রে প্রবাসীদের জন্য সরকারের ঘোষিত সুযোগ-সুবিধার কথা জানতেও পারে না সাধারণ প্রবাসী। অবশ্য দূতাবাসগুলোর কর্মকর্তাদের সাথে যারা সুবিধাজনক যোগাযোগ বজায় রাখেন তারা ব্যতীত।
ছোট্ট একটি উদাহরণ দেই। ‘প্রবাসীদের মেধাবী সন্তানদের বৃত্তি বা বিশেষ সুবিধা দিচ্ছেন সরকার’- এই রকম একটি লেখা কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের নোটিশ বোর্ডের এক কোনায় চোখে পড়লো। এ বিষয়ে কয়জন প্রবাসী জানেন ? সরকারের এই মহতি উদ্যোগটির কর্তৃপক্ষ আদেশ করলেন, আর দূতাবাস পিন ঠুকে দিলেন নোটিশ বোর্ডে।
দেশের বিভিন্ন মিডিয়াগুলোতে কত না টক-ঝাল অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় প্রাইম সময়ে। ঐ সময়ে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস, তাদের কার্যক্রম, সরকার কর্তৃক প্রবাসীদের জন্য ঘোষিত সুযোগগুলো প্রচার, প্রবাসীরা কি চায়, তাদেরও থাকতে পারে কিছু দাবি-দাওয়া- এমন অনুষ্ঠান করলে কি চ্যানেলের অনুষ্ঠানের মান কমে যাবে? বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকান্ড জানতে প্রতিনিধিই বা কেন লাগবে? এসব কাজে বর্তমানে সত্য, মানব সেবায় নিয়োজিত মন মানসিকতার মানুষ এগিয়ে আসতে হবে।
বর্তমানে একজনের শ্রমিক ভিসায় কুয়েতে আসতে ৭/৮ লাখ টাকা খরচ হয়। এত টাকা খরচ করে কেন যায়? কি কাজ করবে? কতদিনে এই টাকা উঠাবে? হাজারো প্রশ্ন! ঐ লোকের ভবিষ্যতের চিন্তা না করে ৭/৮ লাখ টাকা কেন লাগে বা টাকা দিয়েই কেন আমরা বিদেশ শ্রমিক পাঠাব, যেখানে নেপাল, ফিলিপাইন, ভারতের শ্রমিক আনতে সে দেশের এজেন্ট এবং সরকারকে উল্টা টাকা দেয়।
সরকার বিদেশে শ্রমিক পাঠানো কর্তব্য মনে করেন। একজন ভিটে-মাটি বিক্রি করে সর্বস্ব শেষ করে নিজের টাকায় কামলা দিতে বিদেশ যায়, সেখানে এই বছর এত পাঠিয়েছি, গত বছর এত, আগামী বছর এত শ্রমিক পাঠাবো- সরকারের এমন ভাষণ সত্যিই আমাদের ব্যথিত করে। সরকার কি ফ্রিতে পাঠান! যে লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ পাড়ি দেয় কখনো কি সেই প্রবাসী প্রতিবাদ করেছেন যে, না আমার টাকায় আমি আসছি সরকার কেন বলে সরকার পাঠিয়েছেন।
এখানেও সমস্যা- সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্তারা যখন বলেন ৭/৮ লাখ টাকা দিয়ে বিদেশ গেছে এর কি প্রমাণ আছে? আইন প্রমান ছাড়া চলে না।
এর প্রমান কি করে দেবে ঐ ব্যক্তি? দেশে এমন কি কোন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আছে যে সংস্থাটি খুঁজে নেবে বিদেশগামী ঐ ব্যক্তির পৈতৃকসূত্রে প্রাপ্ত একখন্ড জমি বিক্রি করে টাকাগুলো কি করেছে, হাল চাষের মূল্যবান গরু দুটি কেন বিক্রি করলো, রক্ত ঘাম ঝরা সঞ্চিত অর্থ কাকে দিয়েছেন। কিছু ক্রয় করতে গেলে কর্তৃপক্ষ ট্যাক্স নেন, টাকার উৎস জানতে চান, শুধুমাত্র ক্রয়ে কেন? যে বিক্রি করলো- কেন বিক্রি করলেন সেই টাকার হিসাব কি কেউ রাখেন!
বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে অযথা এসব কথা বলে সময় নষ্ট না করে, এর থেকে পরিত্রাণ এর পথ খোঁজা দরকার। দল মতে বিভক্ত না হয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দাবি আদায়ের সোচ্চার হতে হবে।
মঈন উদ্দিন সরকার সুমন, সভাপতি, বাংলাদেশ রিপোর্টার্স ইউনিটি, কুয়েত।
Discussion about this post