মাহাবুব খান বাবুল; সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : সরাইলে কলেজ ছাত্র দুলাল খুনের ঘটনায় আওয়ামীলীগ নেতা সহ ৭৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন তার পিতা আবু জাহের। মামলাকে পুজি করে টাউট শ্রেণীর কিছু লোক বাণিজ্যে নেমেছে। বিচারের দাবীতে উত্তাল এখন সমগ্র পাকশিমুল। চলছে মিটিং, মিছিল ও সমাবেশ। যখন তখন রাস্তায় নেমে আসছেন প্রতিবাদ মূখর হাজার হাজার নারী পুরুষ। গত পাঁচ দিন যাবৎ অবরুদ্ধ করে রেখেছে সরাইল অরুয়াইল সড়ক। নৌ পথে চলছে অস্রের মহড়া। আতঙ্কে বন্ধ করে রেখেছে শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্টান। পঁচে নষ্ট হচ্ছে কাঁচা মাল। প্রতিপক্ষের বাঁধায় কৃষকরা ক্রয় করতে পারছেন না সার ও ডিজেল। জ্বলে পূঁড়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তিন সহস্রাধিক ইরি জমি। কর্মহীন হয়ে পড়েছে এলাকার তিন শতাধিক জেলে পরিবার। এলাকার শিক্ষার্থীরা রয়েছে চরম আতঙ্কে। দাঙ্গা রোধে পুলিশ প্রশাসন রয়েছে সতর্ক। গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে জানা যায়, অরুয়াইল আবদুস সাত্তার ডিগ্রী কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানের চাঁদা উত্তোলনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল কামরুল ও রোমানকে। তারা দুজনই প্রথম বর্ষের ছাত্র। কামরুলের বাড়ি অরুয়াইল। রোমান পাকশিমুলের বাসিন্ধা। নেতৃত্ব নিয়ে তারা দুজন গত শনিবার প্রথমে বাক বিতন্ডা ও পরে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কয়েক মিনিটের মধ্যে শুরু হয় আন্তঃ ইউনিয়ন সংঘর্ষ। অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের কয়েক হাজার দাঙ্গাবাজ দেশীয় অস্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। আড়াই ঘন্টা স্থায়ী সংঘর্ষে আহত হয় পুলিশ সহ অর্ধশতাধিক লোক। সংঘর্ষের পর পাকশিমুলের লোকজন গাছের গোল ও ইটা দিয়ে বন্ধ করে দেয় সরাইল- অরুয়াইল সড়ক। নদী পথে নৌকা দিয়ে চলছে অস্রের মহড়া। ফলে পাঁচ দিন যাবৎ অবরুদ্ধ হয়ে আছে অরুয়াইলের ৪০ হাজার মানুষ । নদীতে মাছ ধরতে পারছে না অরুয়াইলের তিন শতাধিক জেলে। দুই ইউনিয়নের বাসিন্ধাদের ক্রয় বিক্রয়ের প্রধান স্থান অরুয়াইল বাজারের অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখন বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা পড়েছেন এখন চরম বেকায়দায়। সার ও ডিজেল ক্রয় করতে পারছেন না তারা। ফলে তিন সহস্রাধিক ফসলি জমি এখন ধ্বংসের পথে। সংঘর্ষের ভয়ে স্কুল ও কলেজে যাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। আগামী ১ এপ্রিল থেকে প্রথমবারের মত আবদুস সাত্তার ডিগ্রী কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হবে। হতাশায় ও দুশচিন্তায় রয়েছেন অভিভাবকরা। সংঘর্ষের দিন কলেজ ক্যাম্পাসে পিটিয়ে গুরুতর আহত হওয়া অরুয়াইল কলেজের ডিগ্রী তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মোঃ দুলাল মিয়া (২০) গত মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। পাকশিমুল ইউনিয়নের বারুইবাড়ির মোঃ আবদুল জাহেরের পুত্র দুলাল দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তার মৃত্যুর খবরে গোটা পাকশিমুলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সন্তানের অকাল ও অস্বাভাবিক মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন দুলালের পিতা মাতা। পুরো ইউনিয়নে চলে শোকের মাতম। আতঙ্কে স্তদ্ধ হয়ে পড়ে প্রতিপক্ষ অরুয়াইল ইউনিয়নের লোকজন। অরুয়াইল বাজার হয়ে পড়ে জন মানব শুন্য। সরাইল থানার পাশা পাশি জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ অবস্থান নেয় দুই ইউনিয়নে। সন্ধার পর কলেজ ছ্ত্রা দুলালের লাশ আসে বাড়িতে। সরাইল অরুয়াইল সড়কে নেমে আসে ৮/১০ হাজার নারী পুরুষ। রাত ১০টা পর্যন্ত চলে খন্ড খন্ড মিছিল। দুলাল হত্যার বিচারের দাবীতে উত্তাল হয়ে উঠে গোটা পাকশিমুল। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা কুতুব উদ্দিন, আবু তালেব, চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ও যুবলীগ নেতা বোরহান কে খুনের পরিকল্পনাকারী ঘোষনা দিয়ে তারা বিভিন্ন শ্লোগান দেয়। রাতেই নিহত দুলালের বাড়িতে ছুটে যান স্থানীয় সংসদ সদস্য এডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা। তিনি নিহতের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। সকলকে ধৈর্য্য ধরে আইনের প্রতি আস্থা রাখার আহবান জানান। বুধবার সকালে দুলালের লাশ দাফন করা হয়। মামলা নিয়ে বাণিজ্যঃ কলেজ ছাত্র দুলাল খুনের মামলাকে পুঁজি করে স্থানীয় এক শ্রেণীর টাউট প্রকৃতির কিছু লোক বাণিজ্যে নেমেছে। আসামী দেয়ার বিষয়ে তারা অসহায় দরিদ্র পরিবারের লোক দুলালের বাবার উপর প্রভাব বিস্থারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাতে যাদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিয়েছে তাদেরকে আসামী না করার জন্য তদবিরের পাশাপাশি চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। দুলালের পিতা জাহের মিয়া বাদী হয়ে আওয়ামীলীগ নেতা কুতুব উদ্দিনকে প্রধান আসামী করে মোট ৭৬ জনের বিরুদ্ধে সরাইল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। বিশেষ যোগাযোগ ও চুক্তির মাধ্যমে চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান আড়াই লাখ ও আ’লীগ নেতা আবু তালেব ২ লাখ টাকা দিয়ে আসামীর তালিকা থেকে পার পাওয়ার বিষয়টি চাউর রয়েছে গোটা এলাকায়। মামলায় গং থাকায় এলাকার নিরীহ লোকদের আসামী করার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা কামায় করছেন সর্দার নামের কিছু টাউট বাটবার। তাদের সাথে রয়েছে অসৎ কিছু পুলিশ কর্মকর্তার যোগসাজস। ঘটনার পর থেকে পুলিশ শুরু করেছে আটক বাণিজ্য। ইচ্ছেমত অভিযান চালিয়ে ১০/১২ জন করে আটক করছে। পরে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অনেককে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। আর এ কাজে পুলিশকে সহায়তা করছে আ’লীগ নেতা আবু তালেব। অরুয়াইল ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ও আ’লীগ নেতা আবু তালেব বলেন, আমরা ওই হত্যা কান্ডের সাথে জড়িত নয়। আমাদেরকে আসামী করতে চেয়েছিল। আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে যোগাযোগের পর তাদের ভুল ভেঙ্গেছে। দুলালের পিতা জাহের মিয়া বলেন, কে কি করল সেটা আমি জানতে চাই না। আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই। সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উত্তম কুমার চক্রবর্তী বলেন, এ পর্যন্ত দুইজন আসামী গ্রেপ্তার করেছি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
Discussion about this post