মোস্তাফিজুর রহমান হিমেল: ইউরোপ ও এশিয়ার মাঝে ছোট একটি দেশ সাইপ্রাস। পূর্ব ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত এ দ্বীপ দেশটি ভৌগোলিকভাবে এশিয়ার অংশ হলেও সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে সাইপ্রাস ইউরোপের অংশ।
ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানে নতুন পোশাক। ঈদ মানে বাবা-মায়ের কাছে যাওয়া। ঈদ মানে স্বজন আর বন্ধুদের মিলনমেলা, হৈ-হুল্লোড়, ঘুরে বেড়ানো। কিন্তু এবার সেই অনাবিল আনন্দের আবহ নেই। খুশির জোয়ারও নেই। সবকিছু থমকে গেছে। দেশে বিদেশে অনেকে মারা গেছেন। অনেকেই হাসপাতালে রোগ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। স্বজন হারানোর বেদনা সর্বত্র। এই বৈশ্বিক মহামারী পৃথিবী থেকে খনিকের জন্য যেন সব আনন্দ তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু তবুও ঈদ এসেছে। এখানেও রোজা, তারাবি, ইফতার পার্টি হয়। সবকিছুই হয়। কিন্তু কোনোভাবেই তা দেশের মতো না। দেশে যেমন রোজা শুরু হলেই একটা উৎসবের আমেজ তেরি হয়। কেনাকাটা, ঈদের বোনাস, ঈদ ফ্যাশন, টিভিতে ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠান, ঈদ পুনর্মিলনী, সিনেমা হলে নতুন সিনেমা মুক্তি পাওয়া কত কি। প্রবাসে এসব কিছুই নেই। আনন্দ-বেদনার ঈদের নাম হচ্ছে প্রবাসের ঈদ। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও নিজের মতো করে আনন্দ খুঁজে নেয় প্রবাসীরা। তারাও ঈদের নামাজ পড়ে, কোলাকুলি করে, বেড়াতে যায়। কিন্তু তারা প্রিয়জন থেকে অনেক অনেক দূরে। তাদের শূন্যতা কিছু দিয়ে পূরণ হবার নয়। এই করোনার কারণে সৃষ্ট অভাব আমাদের আবার স্মরণ করিয়ে দিল ‘সাধ্যের বাইরে যে সাধ তা কোন কালে পূরণ হবার নয়, সাধ্যের মধ্যেই আছে সকল সত্য।’ আসুন সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বাঁচি। আর সেটাই হবে এই করোনা আক্রান্ত পৃথিবীতে ভার্চুয়াল ঈদের আনন্দ।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সাইপ্রাসেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশির বসবাস রয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব না হলেও সব মিলিয়ে দেশটিতে ছয় থেকে সাত হাজারের মতো বাংলাদেশি বসবাস করেন। একসময় ভারত এবং মালয়েশিয়ার মতো উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশ থেকে অনেকে সাইপ্রাসে পাড়ি জমাতেন। বিশেষ করে হোটেল ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে হসপিটালিটি কিংবা ট্যুরিজমে সব বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য সাইপ্রাস অনেকের কাছে এক পছন্দের গন্তব্য ছিল। নব্বইয়ের দশকের পরবর্তী সময় থেকেই দেশটিতে বাংলাদেশিরা আসতে শুরু করেন। এমনকি বর্তমানে দেশটিতে যেসব প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন, তাঁদের বেশির ভাগই স্টুডেন্ট ভিসার মাধ্যমে সাইপ্রাসে প্রবেশ করেছিলেন। সামাজিক কিংবা অর্থনৈতিক দিক থেকে তাঁরা অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন।
বর্তমানে সাইপ্রাস গ্রিক সাইপ্রাস এবং তুর্কি সাইপ্রাস নামের দুটি অংশে বিভক্ত, যদিও আন্তর্জাতিকভাবে সমগ্র সাইপ্রাসকে অভিন্ন দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৭৪ সালে জাতীয়তাবাদী গ্রিক সাইপ্রিয়টরা গ্রিসের সামরিকজান্তার সহায়তায় একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায়। তুরস্ক এ অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বহুপক্ষীয় সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয় এবং দ্বীপটির উত্তরাঞ্চল আক্রমণ করে। যুদ্ধবিরতির পরও তুর্কি বাহিনী সেখানে থেকে যায়, যার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্টি হয় দেশটির এ বিভাজন। বর্তমানে তাই দ্বীপটির উত্তরাংশ তুর্কি সাইপ্রাস বা নর্থ সাইপ্রাস হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। অন্যদিকে দ্বীপটির দক্ষিণাংশে গ্রিকভাষী মানুষের সংখ্যা বেশি, তাই একে গ্রিক সাইপ্রাস নামে অভিহিত করা হয়।
*লেখক: শিক্ষার্থী, সাইপ্রাস ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
Discussion about this post