সুন্দরী দর্শনে লালা ঝরবেই মানুষ সুন্দরপুজারী। সুন্দরকে ভালোবাসে মানুষ। গায়ের রং যত কালোই হোক না কেন তবু মানুষের মুখে, শারীরিক অবকাঠামোগত কারণে এক ঐশ্বরিক সৌন্দর্যের প্রতিমা হিসেবেই বিবেচনা করে। সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর একটি ওয়াজের ভিডিও নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। হেফাজতের আমির তার বক্তব্যে নারীদের তেঁতুলের সাথে তুলনা করে বলেন, ‘তেঁতুল দেখলে মানুষের যেমন জিভে জল আসে তেমনি নারীদের দেখলে ‘দিলের মইধ্যে লালা বাইর হয়’।
তবে সুন্দরী নারী দেখে পুরুষের মুখগহ্বর ভিজে উঠে- বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণেও এর সত্যতা পাওয়া যায়। সম্প্রতি আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক গবেষণার পর বলেছেন, ‘সুন্দরী দর্শনে লালা ঝরবেই।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কম বয়সী আকর্ষণীয় নারীর সাথে অল্প সময়ের কথোপকথনেই পুরুষের মুখের লালায় নাটকীয় পরিবর্তন আসে। গবেষণা মতে, বিপরীত লিঙ্গের কারো সাথে সংক্ষিপ্ত প্রেম অভিনয়েই পুরুষের লালা ঝরতে শুরু করে। নারী যতো বেশি পুরুষকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে, পুরুষের লালা ততো বেশি বেড়ে যায়। গবেষকরা পুরুষের হরমোন নিয়ে গবেষণা করেছেন। একদল যৌন-আবেদনময়ী কলেজ শিক্ষার্থীর ওপর গবেষণাটি চালান তারা। গবেষণায় পুরুষ শিক্ষার্থীদেরকে অন্য পুরুষ ও নারী সহপাঠীদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। সহপাঠীদের সাথে কথোপকথনের আগে ও পরে বিশ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থীদের লালার নমুনা সংগ্রহ করেন গবেষকরা। লালা পরীক্ষা করে দেখা যায়, যে পুরুষ শিক্ষার্থীরা তাদের নারী সহপাঠীদের সাথে কথা বলেছে তাদের লালায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেছে। দেখা গেছে, তাদের লালায় যৌন-হরমোন টেস্টোস্টেরন উচ্চহারে বেড়ে গেছে। মাত্র পাঁচ মিনিটের কথোপকথনের ফলাফল এটি। তবে যে পুরুষ শিক্ষার্থীরা তাদের পুরুষ সহপাঠীদের সাথে কথা বলেছে তাদের লালায় তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। সবচেয়ে নাটকীয় পরিবর্তন হয়েছে, যে পুরুষ তার নারী সহপাঠীকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেছে তার লালায়। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের মন ও জীববিজ্ঞান বিভাগের ড. জেমস রুনির নেতৃত্বে গবেষণাটি সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, “পুরুষরা লালা ফেলছিল, এ কথা আমি বলবো না। তবে তাদের লালায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা গেছে। নারী সহপাঠীদের সাথে কথোপকথনের পরে তাদের লালায় অধিকমাত্রায় টেস্টোস্টেরন পাওয়া গেছে।” “লালা পরিবর্তনের মাপ কম-বেশি হওয়ার ভিত্তি ছিল- পরস্পরের প্রতি প্রেমিক যুগলের মতো আকৃষ্ট হওয়া বা নিজেদের জাহির করার চেষ্ট করা।” গবেষণায় অংশ নেওয়া পুরুষদের প্রশ্ন করা হয়েছিল যে তারা নারী সহপাঠীদেরকে শারীরিকভাবে কতোটা আকর্ষণীয় দেখেছে; প্রশ্নটি করা হয়েছিল নারীদের ‘সেক্সি’ ও ‘কিউট’, এই দুই ভাগে বিভক্ত করে। গবেষণার পাঁচ মিনিটের কথোপকথন বিষয়ে পুরুষদের আচরণ সম্পর্কে নারীদের বিস্তারিত প্রশ্ন করা হয়েছিল। যেমন পুরুষদের কতোটা আকর্ষণীয় বা ব্যস্ত দেখাচ্ছিল কিংবা তারা নারীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিল কিনা। গবেষণায় অংশ নেওয়া নারীরা পেশাদার মডেল বা খুব বেশি সুন্দরী ছিল না। এটি প্রমাণ করে, যেকোনো নারীরই পুরুষের মুখে লালা ঝরার কারণ হওয়ার ক্ষমতা আছে। বিখ্যাত জার্নাল “ইভোল্যুশন এন্ড হিউমেন বিহেভিয়্যর” এর সাম্প্রতিক সংখ্যায় এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে আমেরিকান গবেষকদল এই ‘লালা ঝরা’ তত্ত্বকে ‘প্রেমপূর্ব প্রতিক্রিয়া’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। পুরুষ যখন কোনো আকর্ষণীয় নারীকে দেখে তখন পুরুষের ব্রেইন পিটুইটারি গ্লান্ডে বার্তা পাঠায়। আর তখনই পুরুষের যৌন-হরোমোন টেস্টোস্টেরন বের হতে থাকে এবং এটিই মুখের ভিতরে লালার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। আর হরোমোনের মাত্রায় পরিবর্তন হলো কিনা, তা লালাতে সহজে পরীক্ষা করা যায়।
Muhammad Altaf Husain
President
Jatiya Sangbadik Sangstha (JSS)
Discussion about this post