জাতিসংঘের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো নতুন সাতটি বিশ্ব ঐতিহ্যের নাম ঘোষণা করেছে। শুক্রবার (২৯ জুন) বাহরাইনে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির ৪২তম অধিবেশনে এসব নতুন নাম ঘোষণা করা হয়। নতুন ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম হলো- সৌদি আরবের আল আহসা মরুদ্যান।
আল আহসা সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে অবস্থিত এক পুরনো শহরের নাম। আল আহসার অবস্থান কাতারের রাজধানী দোহা থেকে মাত্র ২শ’ কিলোমিটার দূরে। এখানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মরুদ্যান অবস্থিত। এ এলাকার জনসংখ্যা প্রচুর। আল আহসায় প্রায়ই বৃষ্টি হয়, এমনকি মাঝে-মধ্যে বন্যাও দেখা দেয়। মরুভূমির মাঝে এমন বৈচিত্র্যময় আবহাওয়ার আচরণ বেশ বিরল ঘটনা।
বিশ্বের সবচেয়ে দামি লাল চাল আল আহসায় চাষ করা হয়। ‘হেসাবি লাল চাল’ নামে খ্যাত প্রতি কেজি চাল ৫০ রিয়ালেরও বেশি দামে বিক্রি হয়। এই চাল উৎপাদনে পর্যাপ্ত পানির প্রয়োজন হয়। ধানের চারা রোপণের সময় পানি দিয়ে পুরোপুরি ডুবিয়ে দিতে হয় এবং সপ্তাহের পাঁচ দিনই জমিতে সেচ দিতে হয়। সৌদি আরবের মতো জায়গায় এমন সুবিধা আল আহসা ছাড়া অন্য কোথাও নেই।
এই আল আহসা শহরে প্রথম বারের মতো নারীরা ম্যারাথনে অংশ নেয়। চলতি বছরের মার্চ মাসে ম্যারাথনটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় দেড় হাজার নারী স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। তিন কিলোমিটারব্যাপী ‘আল আহসা রানস’ ম্যারাথনে বিভিন্ন বয়সী নারীরা অংশগ্রহণ করে। সৌদি সরকারের ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ম্যারাথনের আয়োজন করে।
বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণাকালে ইউনেস্কো জানায়, আরব উপদ্বীপের পূর্বাঞ্চলীয় মরূদ্যান এলাকাটি স্থানীয় বাসিন্দাদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র ছিল এক সময়। এই প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। পাম বাগান, খেজুরের বাগান, খাল, ঝর্ণা, কূপ ও হ্রদের পাশাপাশি মরূদ্যানে বেশ কিছু পুরনো স্থাপনাও রয়েছে। এ এলাকায় হস্তশিল্প সামগ্রীর জন্য বিখ্যাত।
আরব উপদ্বীপের এ অংশে মানুষের বসবাস কবে থেকে শুরু হয়েছে তার একটি ধারণা দেয় এই মরূদ্যান। এখন সেখানে কিছু ঐতিহাসিক দুর্গ, মসজিদ, কূপ ও পানি ব্যবস্থাপনার উপকরণ রয়েছে। এসব বিবেচনায় আল আহসা মরূদ্যানকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হলো।
আল আহসা মরুদ্যানের আগে ‘আল ক্বাত আল আসিরি’ নামে সৌদি আরবের আসির অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী দেয়াল অলংকরণকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ বলে ঘোষণা করে ইউনেস্কো। এই দেয়াল অলংকরণের বৈশিষ্ট্য হলো- এর সাজসজ্জার কাজ নারীরা ঘরের ভেতরে করেন।
এর আগে সৌদি আরবের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আল উলা এলাকায় বিস্ময়কর কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের খোঁজ পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে বৃত্তাকার ও বর্গাকার দেয়াল, ত্রিকোণাকৃতির কাঠামো ও প্রাচীন সমাধি। ২২ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকার এ প্রত্নতাত্ত্বিকসমৃদ্ধ এলাকাটি মাদায়েন সালেহ নামে প্রসিদ্ধ। এটিও বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে।
Discussion about this post