আ হ জুবেদ -কুয়েত| বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অর্থনৈতিক অবস্থানকে যতটা ক্রমশ শক্তিশালী করে চলেছে; মূলত তার সম পর্যায়ে আর কোনো কিছুই হতে পারেনা।
অথচ সেই চরম দুর্ভাগা প্রবাসীরা দেশের মাঠিতে পা রাখলে বা বিদেশে ফেরত আসাকালীনও প্রতিনিয়ত বিমানবন্দরে কর্মরত কতিপয় কর্মকর্তাদের অসাধাচরণ এবং দুর্নীতির মাধ্যমে নানান হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
বর্তমান আন্তর্জাতিক একাধিক মানবধিকার সংস্থা গুলোর জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশ দুর্নীতিতে সর্বসেরা না হলেও কিন্তু তার অনেকটা কাছাকাছি অবস্থানেই আছে বাংলাদেশ।
নিকট অতীতের দিকে আলোকপাত করলে দেখা যাবে একটাসময় বাংলাদেশ ছিল দুর্নীতির জগতে সর্বসেরা দেশ। বিশ্বের সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় সর্ব শেষ জরিপে ১৬তম স্থান দখল করেছে বাংলাদেশ। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতি ধারণাসূচক ২০১৩ অনুযায়ী বাংলাদেশের এ নতুন অবস্থান।
তবে এখন দুর্নীতির বদনাম মুছিয়ে ফেলে দেশ চলেছে আগামীর সুন্দর পথে;যদি বাধাহীন সেই গন্তব্যে বাংলাদেশ পৌছতে সক্ষম হয়; তবেই সফলকামী হবে দেশ এবং জাতি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বিরামহীন দুর্নীতির সীমাহীন রেকর্ড সৃষ্টির নজির কোনো কালেই ভালো ছিলনা,যেমন ছিল অতীত তেমনই বর্তমান অবস্থা।
যদিও কখনো কখনো দুর্নীতি অতি মাত্রায় বেড়ে গেলে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তারা উপরের নির্দেশে তাত্ক্ষণিক ভাবে দুর্নীতি দমনে সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন,তবে শুধুমাত্র তখনই বিমান বন্দর কর্মকর্তারা সচেষ্ট ভূমিকা রাখছেন বৈ-কিছু নয়;কিন্তু পরক্ষণেই আবার দুর্নীতিতে সেই লাগামছাড়া অবস্থা অব্যাহত আর যাত্রীদের চরম হয়রানি বেড়ে যায় সীমাহীন ভাবে।
সাম্প্রতিক কালে প্রতিদিনই কোনো না কোনোভাবে বিমান বন্দরটিতে দুর্নীতি,চোরাচালান,যাত্রী হয়রানির মতো ইত্যাদি ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে চলেছে।
কাস্টমস: বিদেশ প্রত্যাগত বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য এবং মালয়েশিয়া প্রত্যাগত শ্রমিকদের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নানা ভাবে হয়রানি করে থাকে।
এসব প্রবাসী শ্রমিকদের প্রদেয় ‘কাস্টমস পণ্য’ সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকে না। আগত যাত্রীদের ব্যাগেজ তল্লাশির নামে কম্প্যুটারের এলসিডি মনিটর, টেপ রেকর্ডার, স্বর্ণ, প্রসাধনী,
নানা ‘House Hold’ সামগ্রীর কাস্টমস দিতে হবে বলে আটকে রেখে নগদ নারায়ণের ভিত্তিতে ছেড়ে দেয়।
অপরাধের প্রকৃতি: সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত সহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে সকল ধরনের আমদানিকৃত পণ্যের কাস্টমস শতকরা ৫ শতাংশ।
অন্যদিকে বাংলাদেশ পণ্য ভেদে শুল্ক-কর, মূসক অনেক বেশি। চোরাচালানিরা গরম-মশলা, মুঠো ফোন, মুঠো ফোনের কভার, ব্যাটারি, শিশুদের কাপড়-চোপড়, যৌন উত্তেজক ঔষধ বা সাপ্লিমেন্ট, স্বর্ণ-গহনা, কৃত্রিম গহনা ইত্যাদি পণ্য বিনা কাস্টমস ঘোষণায় প্রবাসীদের সাথে যোগসাজশের মাধ্যমে ” Personal Affect” নামক আইনের অপ-ব্যবহার করে, দুর্নীতিবাজ চক্রের সাথে চুক্তি করে বিমানের ফ্লাইটগুলোতে তুলে দিচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রটি আরো জানায়, “নিয়ম অনুযায়ী সরকারের বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা এনএসআই, ডিজিএফআই, পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা, কাস্টমস কর্মকর্তার সম্মুখে লাগেজ/ব্যাগেজ স্ক্যান করার নিয়ম থাকলেও চক্রটি তাঁদের চোখ ফাঁকি দিয়ে মালামাল ছাড়িয়ে নিচ্ছে।”
ব্যাগেজ ক্লেইম: প্রবাসীদের দোষ দিয়ে সূত্রটি বলেন অনেক যাত্রী মালামাল খুঁজে না পেলে বিমান বন্দরে রিপোর্ট করেন না।
অনেকে ট্যাগ হারিয়ে ফেলেন, রিপোর্ট না করে বিমান বন্দর ছেড়ে চলে যান ফলে তাঁদের কিছুই করার থাকেনা।
প্রবাসী শ্রমিকদের উপদেশ দিয়ে বলা হয়েছে, “প্রত্যেকে যেন নিজের ব্যাগেজ ক্লেইম পেপার হারিয়ে না ফেলেন।”
ব্যাগেজ ক্লেইম করে নির্ধারিত ক্ষতিপূরণ পাবার বিষয়টি মান্ধাতা আমলের বলেও জানান তারা। বলেন বিদ্যমান সিস্টেমে ভুক্তভোগী ক্ষতিপূরন পেতে বিমান অফিসে যাওয়া-আসা করে কয়েক পাটি চপ্পল ক্ষয় করে ফেলেন।
বিমানের কাস্টমস অধিদফতর: বিমানের এয়ার-ফ্রেইটের কাস্টমস আদায়ের জন্য বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত কাস্টমস অধিদফতরের ঘুষ-বাণিজ্য চলছে প্রকাশ্যে।
সর্ব শেষ এক খবরে জানাগেছে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এক বছরে ৫০ মণ স্বর্ণ আটক হয়েছে।
উপরোক্ত এইসব দুর্নীতি,চোরাচালান, চাঁদাবাজি এবং অহেতুক হয়রানি এখন চরম পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে।
অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে ছুটি কাটিয়ে কুয়েতে ফিরে আসা প্রবাসীদের কাছ থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে যে’ হজরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কতিপয় কর্মকর্তাদের অসাধাচরণ এবং অকারণে অর্থ প্রদান করতে চাপ সৃষ্টি করে যাত্রীদের একধরনের ধমকানো হচ্ছে।
সদ্য কুয়েত এয়ারওয়েজ এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ছুটি কাটিয়ে কুয়েতে ফিরে আসা প্রবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে যে’ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে কর্মরত কিছু অসাধু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা একধরনের রিসিপ্ট হাতে ধরিয়ে দিয়ে যাত্রীদের বলেছেন ৫০০ টাকা প্রদান করুন; তানাহলে বিদেশ যেতে দেয়া হবেনা।
অবশেষে সকল যাত্রীদের ৫০০ টাকা পরিশোধ করেই আসতে হয়েছে।
এদিকে চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে বাংলাদেশে ছুটি কাটিয়ে কুয়েতে ফিরে আসা প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে একধরনের অসন্তোষ,চাপা ক্ষোভ ও ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।
এছাড়া বিমানবন্দরে কর্তব্যরত ইমিগ্রেশন, কাস্টমস ও পুলিশ সদস্যদের হয়রানির শিকার প্রবাসীরা বলেছেন যে’ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ৫০০ টাকা মাত্র ট্যাক্স, ভ্যাট, আবগারি শুল্ক ইত্যাদি গ্রহণ করা হবে সে তো ভালো কথা;যেহেতু তাতে করে দেশের রাজস্য আয় বৃদ্ধি পাবে, তবে এব্যাপারে পূর্ব ঘোষনা ব্যতীত আবগারি শুল্ক এর নাম করে যাত্রী হয়রানি কতোটুকু বিবেচনাবোধসম্পন্ন?
Discussion about this post