দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ থেকে ভাগ্য ফেরাতে মানুষ কাজ নিয়ে বিদেশ যাওয়া শুরু করলেও স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সাল থেকেই মূলত বিদেশগামীদের তথ্য সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ওই বছর ৬ হাজার ৮৭ জনের বিদেশে কর্মসংস্থান হলেও চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা ৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬২৫-এ উন্নীত হয়েছে। বিস্ময়কর হলো মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ১৩% অবদান রাখলেও তাদের কল্যাণে গত সাড়ে ৪ দশকে কোনো আইন প্রণয়ন করা হয়নি, গঠন করা হয়নি কোনো কর্তৃপক্ষ। সূত্র জানিয়েছে, অভিবাসীকর্মীদের জীবনমান উন্নয়নে অবশেষে স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর ‘প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড’ গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বহির্গমন অধ্যাদেশ ১৯৮২ বাতিল করে ২০১৩ সালে সরকার বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন প্রণয়ন করলেও প্রবাসীদের কল্যাণের কোনো কথা তাতে উল্লেখ নেই।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি জানান, প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের জীবনমানের উন্নয়ন ও বহুমুখী কল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড নামে একটি বোর্ড গঠন করা হবে। এজন্য আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগির আইন পাসের মাধ্যমে প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড আত্মপ্রকাশ করবে। এর ফলে প্রবাসী কর্মীদের দুঃখ-দুর্দশা ও নানাবিধ কল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা মন্ত্রণালয়ের ডেটাবেইজে অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রবাসী কল্যাণ বোর্ডের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এই বোর্ড গঠন করা হলে প্রবাসী কর্মীদের শতভাগ বিমার আওতায় আনা হবে। তাদের জন্য হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, প্রবাসী পল্লী (আবাসন), তাদের সন্তানদের জন্য স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রত্যাগত কর্মীদের জন্য সামাজিক পুনর্বাসন কর্মসূচি নেওয়া সম্ভব হবে।
সরকারের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড গঠন একটি মহতী উদ্যোগ উল্লেখ করে নূরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, কর্মীদের দ্রুত সেবাদান ও হয়রানিমুক্ত করতে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড গঠনের মাধ্যমে এ সেবা আরও গতিশীল করা হবে। এর আগে ২০১৫ সালের ১ জুন অনুষ্ঠিত ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের এক সভায় প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ‘প্রবাসী কল্যাণ বোর্ড আইন’ প্রণয়নের নির্দেশ দেন।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শুধু প্রবাসী কর্মীই নয়Ñ বিদেশগামী কর্মীদের সুবিধার্থে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) ইতোমধ্যে বহির্গমন ছাড়পত্র প্রদান কার্যক্রমকে বিকেন্দ্রীকরণে ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামস্থ জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস থেকেও ছাড়পত্র প্রদান করছে। এ ছাড়া ঢাকা জেলার পাশাপাশি জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, কুমিল্লা, রংপুর ও যশোর থেকে বিদেশগামী কর্মীদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রদান শুরু হয়েছে। প্রবাসী কর্মীর পরিবার ও স্বজনদের প্রবাসী কর্মীর নিকট গমনপূর্বক স্বল্প সময়ে অবস্থানের জন্য বিএমইটির বহির্গমন শাখা থেকে জয়েনিং রিলেটিভ হিসেবে অনাপত্তিপত্র দেওয়া হয়ে থাকে। এ কার্যক্রমটি বর্তমানে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকেও প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়াও অসুস্থ, মৃত কর্মী ও তাদের পরিবারের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে একটি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস যুক্ত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসমূহেও এই সেবা যুক্ত করা হবে।
Discussion about this post